Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ রবিবার, মে ২০২৫ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

ভোট গ্রহনের সময় কারচুপির ঝুঁকি রয়েছে কতটুকু?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:৫৭ PM
আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:০০ PM

bdmorning Image Preview


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামীকাল। ভোট গ্রহণ চলবে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। তবে ভোটগ্রহণের সময় ভোট কারচুপির বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। কারণ অতীতেও বিভিন্ন স্থানে ভোট কারচুপি হওয়ার ঘটনা ঘোটেছে।

ভোটগ্রহণের সময় কারচুপির সুযোগ কতটা রয়েছে-এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন।

আসুন জেনে নেই ভোটগ্রহণের সময় কারচুপির সুযোগ কতটা রয়েছে-

ভোটগ্রহণের আগের রাতে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করা

কারচুপির বিষয়ে আগে যেসব অভিযোগ আসত তার মধ্যে একটি হল ভোট গ্রহণের আগের রাতে ব্যালট বাক্সগুলো পূর্ণ করে দেয়া। তবে এখন স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স আসায় সেটা সম্ভব হয় না।

বাড়তি ব্যালট বাক্স

প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একটি করে বাড়তি ব্যালট বাক্স যুক্ত করা হয়। যেন দুর্ঘটনায় কোনো ব্যালট বাক্স ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটাকে পাল্টানো যায়। এই বাড়তি ব্যালট বাক্সটি প্রিসাইডিং কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে থাকে।

তবে ইদানীং যে অভিযোগ ওঠে সেটা হলো যে, আগের রাতেই এই বাড়তি ব্যালট বাক্সটি দখলে নিয়ে ব্যালট পেপারে পূর্ণ করা হয়।

ইভিএমে কারচুপি

এবারের নির্বাচনে দেশের ছয়টি আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে শুরু থেকেই বিরোধীদের অভিযোগ রয়েছে এই ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল কারচুপির সুযোগ রয়েছে।

প্রত্যেকটি কেন্দ্রের ইভিএম মেশিনের আলাদা করে চিপ থাকে। সব চিপগুলোতে যখন প্রোগ্রামিং করা হয় বা প্রোগ্রামিংয়ের পর কপি করা হয়। তখন প্রোগ্রামটি স্বচ্ছ হতে পারে আবার করাপ্টেডও হতে পারে

এবারের ইভিএম পরিচালনায় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি কয়েকজন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা যুক্ত থাকায়, কারচুপির সুযোগ তেমনটা নেই।

এজেন্ট ইস্যু

এজেন্ট ইস্যুতেও ভোট কারচুপির সুযোগ থাকে প্রতিপক্ষের এজেন্টকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতেই দেয়া হয়নি। এই এজেন্ট না থাকলে, বুথের ভেতরে ব্যালট পেপার ছিনতাই এবং সেগুলোয় সিল দিয়ে রেখে দেয়ার সুযোগ থাকে। মূলত পোলিং কর্মকর্তা এবং প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কারসাজিতে এটা করা হয়ে থাকেন।

নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্স, ফেমা'র সভাপতি মুনিরা খান বিবিসি'কে বলেন, একটি কেন্দ্রের ভোট গণনাকার্য যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলোর পোলিং এজেন্ট, পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক সবার সামনেই সম্পন্ন হয় সেখানে জালিয়াতির সুযোগ খুব বেশি থাকে না।

"ভোট গণনার সময় প্রার্থীর প্রতিনিধি হিসেবে একজন পোলিং এজেন্টই থাকে, যার নাম আগে থেকে প্রিজাইডিং অফিসারকে জানিয়ে দেয়া হয়।"

কোনো কেন্দ্রের ভোট গণনার পর কোনো পোলিং এজেন্ট যদি গণনার ফলাফল চ্যালেঞ্জ করেন (লিখিতভাবে) এবং ফলাফলের কাগজে স্বাক্ষর করতে আপত্তি জানান তাহলে প্রিজাইডিং অফিসার চাইলে আবার ভোট পুনর্গণনা করতে পারেন।

প্রিজাইডিং অফিসার চাইলে নিজে থেকেও কেন্দ্রের ভোট পুনর্গণনা করতে পারেন বলে জানান নির্বাচন কমিশনের সাবেক উপ-সচিব জেসমিন টুলি।

 

Image captionএকটি কেন্দ্রের সব ব্যালট বস্তায় ভরে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে পাঠান কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার

তবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন ফলাফল পাল্টে দেয়ার জন্য কারচুপির আশ্রয় নেয়া হতে পারে ভোটকেন্দ্রের ভেতরেই।

মি. হোসেন বলেন, "সারাদিন কেন্দ্রের ভেতরে দুপক্ষের এজেন্ট থাকল, তাদের সামনেই ভোট-গ্রহণ করা হল। তবে গণনার সময় কোন এক পক্ষের এজেন্টকে আর থাকতে দেয়া হল না বা কোন একটা উপায়ে তাকে সরিয়ে দেয়া হল।"

আবার এজেন্টও অনেক সময় বিক্রি হয়ে যান বলে মন্তব্য করেন মি. হোসেন। তখন গণনাতে বড় ধরণের কারচুপির সুযোগ থাকে বলে তিনি জানান।

এখন ভোট দিতে গিয়ে যদি কেউ দেখেন যে তার ভোটটি আগেই দেয়া হয়ে গেছে তাহলে করণীয় কী?

এ প্রসঙ্গে মি. সাখাওয়াত হোসেন জানান, কারও ভোট দেয়া হয়ে গেলে প্রিজাইডিং অফিসার ওই ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত করার পর একটি টেন্ডার ভোট ইস্যু করবেন।

এই ভোটটি মূলত প্রমাণপত্র হিসেবে রাখা হয়।

এখন এই টেন্ডার ভোটের সংখ্যা যদি দশটি বা তারচেয়ে বেশি হয় তাহলে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা চাইলে সেই ভোটকেন্দ্র বাতিল করতে পারেন। এটা পুরোটাই নির্ভর করে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের ওপর।

আর একটি আসনের কোনো কেন্দ্রের ভোট গণনা নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করতে পারেন প্রার্থী বা তাঁর নির্বাচনি এজেন্ট।

সেক্ষেত্রে রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে তিনি অভিযোগ গ্রহণ করবেন কি না।

মিজ মুনিরা খান বলেন, "যদি রিটার্নিং অফিসার দেখেন যে গণনার ব্যাপারে অভিযোগ এতটা রয়েছে যে তার ফলে আসনের ফলাফল পরিবর্তিত হতে পারে, সেক্ষেত্রে সেই অভিযোগকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠান রিটার্নিং অফিসার। তবে ছোটখাটো সংখ্যায় ভুলের ক্ষেত্রে অভিযোগ উপেক্ষা করতে পারেন রিটার্নিং অফিসার।"

 

 

Bootstrap Image Preview