Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ রবিবার, মে ২০২৫ | ২১ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

রোনালদো ও মেসির আধিপত্ত ২০১৮ তেই অবসান ঘটলো!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:৩৪ AM
আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:৩৪ AM

bdmorning Image Preview


তবে কি ২০১৮ সাল শেষ হবার সাথে সাথে লিওনেল মেসি-ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যুগেরও অবসান ঘটলো, এমন প্রশ্নই এখন বছরের শেষে এসে ফুটবল বোদ্ধাদের মুখে মুখে। রাশিয়া বিশ্বকাপে মেসি-রোনাল্ডোকে যেমন খুঁজে পাওয়া যায়নি তেমনি ফুটবল বিশ্ব খুঁজে পেয়েছে কাইলিয়ান এমবাপ্পের মত তরুণ তুর্কিদের। যার অনবদ্য পারফরমেন্সে শেষ ১৬’র লড়াইয়ে মেসির আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলে পরাজিত করে ফ্রান্স শুধুমাত্র কোয়ার্টার ফাইনালেই যায়নি, শেষ পর্যন্ত শিরোপাটাও ঘরে তুলেছে।

বিশ্বকাপের প্রায় সবগুলো ম্যাচে এমবাপ্পের পারফরমেন্স বিশ্বকে এক নতুন তারকা উপহার দিয়েছে। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচে সকলের দৃষ্টি যেখানে ছিল মেসির উপর, দলকে এগিয়ে নিতে সব ভরসাই যেখানে ছিল মেসির কাঁধে সেখানে কোন গোলই করতে পারেননি এই বার্সা তারকা। অন্যদিকে এমবাপ্পের কাছ থেকে এসেছিল দুই গোল। ১৯৫৮ সালে পেলের পর বিশ্বকাপে এক ম্যাচে দুই গোল করা প্রথম টিনএজার খেলোয়াড় হিসেবে কৃতিত্ব গড়েন ১৯ বছর বয়সী এমবাপ্পে। ফাইনালে লুকা মড্রিচের ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মত শিরোপা জিতে ফ্রান্স। মস্কোর ফাইনালে গোল করে পেলের পর এমবাপ্পে টিনএজার হিসেবে আরেকটি রেকর্ড গড়েন।

সব মিলিয়ে অনেকগুলো স্মরণীয় ম্যাচ উপহার দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ ছিল আধুনিক ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম উপভোগ্য একটি টুর্নামেন্ট। ১৯৬৬ সালের পর এবারের বিশ্বকাপে সমর্থকরা দেখেছে সর্বোচ্চ গোল।

গ্রুপ পর্বে স্পেনের সাথে পর্তুগালের ৩-৩ গোলের ড্র থেকে গোলের বন্যা শুরু হয়, ম্যাচটিতে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর হ্যাটট্রিক দীর্ঘদিন ফুটবল বিশ্ব মনে রাখবে। ঐ ম্যাচটির পর কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে বেলজিয়ামের ২-১ গোলের জয় ও সেমিফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রোয়েশিয়ার জয়ের ম্যাচটিকে বিশ্বকাপের স্মরণীয় ম্যাচগুলোর অন্যতম হিসেবে ধরা নেয়া যায়।

কিন্তু এরপরেও বিশ্বকাপ ছিল আরো বেশি কিছু, এমনটাই মনে করেন ক্রোয়েশিয়ান কোচ ডালিচ। তার মতে ‘বিশ্বকাপের ইতিহাসে অন্যতম বিচিত্র টুর্ণামেন্ট ছিল এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপ।’

তার দলের ফাইনালে পৌঁছানোর পিছনে অসাধারণ পারফরমেন্স ও একইসাথে জার্মানী, স্পেন ও আর্জেন্টিনার টুর্নামেন্টের শুরুতেই বিদায় এটাই প্রমান করেছে যে আন্তর্জাতিক ফুটবলে এখনো অনিশ্চয়তার স্থান রয়েছে।

একই সাথে আরেকটি বিষয় সকলের সামনে উঠে এসেছে ক্লাব ফুটবলে একের পর এক শিরোপা হাতে নেওয়া মেসি ও রোনালদোর জন্য হয়ত বিশ্বকাপের শিরোপটা অধরাই রয়ে গেল। এই দুই বিশ্ব তারকার দুই দল আর্জেন্টিনা ও পর্তুগাল শেষ ১৬’র লড়াই থেকে বিদায় নেবার সাথে সাথে সকলের হয়তবা মনে হয়েছে ২০১৮ সালেই যেন মেসি-রোনাল্ডোর স্বর্ণযুগের অবসান হতে যাচ্ছে। বিশ্বকাপের আগে অবশ্য উভয়ই নিজ নিজ ক্লাবের হয়ে শিরোপা জয় করেছেন। বার্সেলোনার হয়ে মেসি স্প্যানিশ লিগ ও কাপ শিরোপা জয় করেন। অন্যদিকে জুভেন্টাসের পাড়ি জমানোর আগে রিয়াল মাদ্রিদকে টানা তৃতীয়বারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা উপহার দেন রোনাল্ডো।

গত কয়েক বছরে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করা এই দুই তারকার পতনের সাথে সাথে অন্যদের উঠে আসাটাও ছিল এ বছর বিশ্ব ফুটবলের এক অনন্য প্রাপ্তি। ক্রোয়েট প্লেমেকার মড্রিচের ব্যালন ডি’অর জয়ের পাশাপাশি ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের প্রাপ্তি পুরো বিশ্বকে নতুন তারকা উপহার দিয়েছে। অনন্য অসাধারণ পারফরমেন্সের মাধ্যমে মড্রিচ অনেকটা একাই ক্রোয়েশিয়াকে বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছানোর পাশাপাশি রিয়ালের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয় করেন। রাশিয়া বিশ্বকাপেও তিনি সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বল জয় করেছিলেন।

গত এক দশকে রোনালদো ও মেসি মিলে ব্যালন ডি’অর একে অপরের সাথে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। প্রত্যেকেই জিতেছেন পাঁচটি করে ব্যালন ডি’অর শিরোপা। এবারের তালিকায় রোনাল্ডোর অবস্থান ছিল দ্বিতীয় ও এন্টোনিও গ্রিজম্যান ও এমবাপ্পের পরে মেসির অবস্থান ছিল পঞ্চম। পুরস্কার হাতে নিয়ে মড্রিচ ফ্রান্স ফুটবলকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, ‘তাদের সাথে তুলনা করার সত্ব এখানে কারোরই নেই। তারা ফুটবলের ইতিহাসে সেরা খেলোয়াড়। তাদেরকে ফলো করাটাও অনেক বড় ব্যাপার। আমি এতে গর্ববোধ করি।’

বিশ্বকাপের সেরা তরুণ খেলোয়াড়েরর পুরস্কার লাভ করা এমবাপ্পেকে ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে ইতোমধ্যেই গণনা করা হচ্ছে।

ক্লাব পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সরাসরি তিনটি শিরোপা জয়ে রিয়াল মাদ্রিদের রেকর্ড ভঙ্গের পিছনে পিএসজিকে অন্যতম দাবীদার হিসেবে ধরা হচ্ছে, আর সেটাও সম্ভব হয়েছে এমবাপ্পের অসধারণ পারফরমেন্সের কারণেই। কিয়েভে অনুষ্ঠিত এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে লিভারপুলকে পরাজিত করে রিয়াল শিরোপা জয় করে, ফাইনালে ওয়েলস তারকা গ্যারেথ বেল দুই গোল করেছিলেন। আগামী বছর মাদ্রিদ ফাইনালেও শিরোপা ধরে রাখার প্রত্যাশা করছে রোনাল্ডো বিহীন গ্যালাকটিকোরা।

২০১৯ সালেও অবশ্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ কিছু টুর্নামেন্টের দিকে পুরো ফুটবল বিশ্ব তাকিয়ে থাকবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো নেশন্স লিগের ফাইনাল। নতুনভাবে প্রবর্তিত উয়েফা নেশন্স লিগ নিয়ে শীর্ষ পর্যায়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বেশ সাড়া পড়েছে। আগামী জুনে পর্তুগালে চার দলের ফাইনালের মাধ্যমে এই টুর্নামেন্ট শেষ হবে। শেষ চারে পর্তুগাল সুইজারল্যান্ডের ও ইংল্যান্ড নেদারল্যান্ডের মোকাবেলা করবে।

তবে ২০১৯ সালের মূল আন্তর্জাতিক ইভেন্টগুলো হবে অন্যত্র। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মত ২৪টি দল নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত হবে এশিয়ান কাপ। এরপর ব্রাজিলে কোপা আমেরিকা ও যুক্তরাষ্ট্রে হবে কনকাকাফ গোল্ড কাপ। জুন ও জুলাইয়ে ২৪ দল নিয়ে নারী বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে ফ্রান্সে। পুরুষদের পাশাপাশি আরেকটি বিশ্বকাপ ঘরে তোলার লক্ষ্যে ফ্রান্স মাঠে নামবে।

২৪ জাতির আফ্রিকা নেশন্স কাপের স্বাগতিক হিসেবে মিশর কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে একটি দেশকে শিগগিরই বেছে নেয়া হবে। টুর্ণামেন্টটি অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছর জুন-জুলাইয়ে।

Bootstrap Image Preview