একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) প্রস্তুত, নিরাপত্তা ছক নির্ধারণসহ এক ডজনের বেশি এজেন্ডা নির্ধারণ করা হয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসছে ইসি।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিরোধসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। বৈঠকে এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে কার্যপত্র তৈরি করা হয়েছে। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আচরণ বিধিমালা লংঘনের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ ফোর্স মোতায়েন, রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা, সামাজিক সম্প্রীতি ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে।
নির্বাচনে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব, অপপ্রচার ও ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়ানো বন্ধ এবং নির্বাচনের সময়ে নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল সেবা অব্যাহত রাখতে একটি বৈঠক আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। আগামী ২৬ নভেম্বর এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া প্রশাসনের বিরুদ্ধে আসা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে ইসি।
এরই অংশ হিসেবে মুন্সীগঞ্জের রিটার্নিং অফিসারের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই জেলার লৌহজং থানার ওসিকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। আরও কয়েকজন পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ইসির সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের বৈঠক প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমরা একটি গ্রহণযোগ্য ও আইনানুগ নির্বাচন করতে চাই। পুলিশ কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনাই দেয়া হবে।
সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য কর্মকর্তাদের বলা হবে। জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিরাজমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এ বিশেষ সভা ডেকেছে ইসি। এতে আইজি, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, সব মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
নাম গোপন রাখার শর্তে ইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের প্রশিক্ষণের সময় বক্তব্যে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছে ইসি। তবে পুলিশ প্রশাসনকে সরাসরি কোনো নির্দেশনা দেয়নি কমিশন।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, সাধারণত প্রতীক বরাদ্দের পর আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক করে ইসি। এবারও ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রিটার্নিং অফিসারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেবেন।
নির্বাচন কেন্দ্র করে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যায়। আশঙ্কাজনক হারে বাড়ে বৈধ অস্ত্রের অপব্যবহারও। এমনকি কিছু গোষ্ঠী বা আন্ডারগ্রাউন্ডের সন্ত্রাসীর তৎপরতা বেড়ে যায়। এমন সব শঙ্কা থেকে বৈঠকের আলোচ্য সূচিতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয় রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের বাসভবন ও অফিস কার্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদার এবং তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা জোরদার করার বিষয়টিও আলোচ্য সূচিতে রাখা হয়েছে।
বৈঠকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- নির্বাচনপূর্ব শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে করণীয় স্থির করা। নির্বাচনী আইনের বিধান প্রতিপালনের পরিবেশ তৈরি করা। নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করা।
বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়েছে- অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সব প্রার্থী যাতে প্রচারে সমান সুযোগ পান সেজন্য কয়েকটি বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হবে।
এ ছাড়া নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা প্রতিপালনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা যাতে নির্বিঘ্নে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারেন সেজন্য পুলিশ ফোর্স দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হবে।
পক্ষপাতের কারণে পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু : এদিকে পুলিশ ও প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে ইসি। ই
তিমধ্যে রিটার্নিং অফিসার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন মহলের অভিযোগ জমা পড়ছে ইসিতে। এর মধ্যে রিটার্নিং অফিসারদের অভিযোগ বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ইসি।
জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের রিটার্নিং অফিসারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিত লৌহজংয়ের থানার ওসিকে প্রত্যাহার করে সেখানে এক কর্মকর্তাকে পদায়ন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে ইসি।
এ ছাড়া খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগও খতিয়ে দেখছে ইসি।