হৃদয় দেবনাথ, শ্রীমঙ্গল (সিলেট) প্রতিনিধি:
নির্দ্বিধায় কয়েকটা দিন সময় নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন প্রকৃতি আর হিমালয় কন্যার দেশে!একঘেয়েমি আর বিষন্নতা কাটিয়ে ওঠতে চাইলে ভ্রমণের কোনো বিকল্প নেই, খুব বেশি দূরে যাওয়ার সময় না পেলে যেতে পারেন সাধ্যের মধ্যে পর্যটকদের পছন্দের তালিকার অন্যতম দেশ হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত নেপালে।
ভ্রমণে কেবল দরকার একান্ত ইচ্ছা। তবে টাকা যে খুব বেশি লাগে তা না। মূল খরচটাই বিমান ভাড়া। এ ছাড়া মোটামুটি ৫ থেকে ৭ দিনের ভ্রমণে দৈনিক সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ করার সামর্থ্য থাকলেই খুব ভালোভাবে নেপালের প্রতিটা দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা যায়।
তবে এক্ষেত্রে খরচের দিক দিয়ে লাভবান হওয়া যায় এক সাথে চার থেকে পাঁচজন হলে, চার-পাঁচ জনের একটি টিম হলে খরচটা একেবারেই হাতের নাগালে চলে আসে সেই সাথে ভ্রমণে বাড়তি একটা আনন্দ যোগ হয়। বাংলাদেশ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস বাংলাসহ একাধিক এয়ারলাইন ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটে যাতায়াত করে। ভাড়াও ১৭ হাজার ৫০০ থেকে ১৯ হাজার টাকার মধ্যে।
ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু বিমান যাত্রাটা পুরো মাত্রায় উপভোগ্য করে তুলতে চাইলে বিমানে বোর্ডিং পাস নেয়ার সময় অফিসারকে বলে বাম দিকের উইন্ডো সাইডে আসন দেয়ার জন্য অনুরোধ করতে পারেন। যদি উইন্ডোর পাশে সিট পেয়ে যান তবেতো কোনো কথাই নেই পুরো জার্নিটাই আপনার কাছে উপভোগ্য হয়ে ওঠবে। নেপালে বিমান ল্যান্ড করার কিছুক্ষণ আগ থেকে হিমালয় পর্বতমালার বেশকিছু বরফঢাকা চূড়া দেখার সুযোগ পেয়ে যাবেন। ভিসার ক্ষেত্রে নেপাল এয়ারে গেলে অন অ্যারাইভাল ভিসা দেয়া হয়।
তাই ঢাকাস্থ নেপাল হাইকমিশন থেকে অগ্রিম ভিসা নেয়ার প্রয়োজন পড়েনা। অন অ্যারাইভাল ভিসার জন্য দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, জব আইডির ফটোকপি, নাগরিকত্ব সনদের ফটোকপি হলেই যথেষ্ট। কাঠমান্ডু ত্রিভুবন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে নামার পর নির্দিষ্ট একটি ফর্ম পূরণ করে ইমিগ্রেশন অফিসারকে দিলেই পাসপোর্টে সিল মেরে দিবে। ডলার এনডোর্স করতে হবে দেড়-দুইশ ডলার, তা না হলে ঢাকা বিমানবন্দরে আপনার সাথে ঝামেলা করতে পারে। এয়ারপোর্ট থেকে সামান্য কিছু ডলার এক্সচেঞ্জ করা বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ বাইরের চেয়ে এখানে রেট কম দেয়। তাই এয়ারপোর্টে সামান্য ডলার এক্সচেঞ্জ করে বাকিটা বাহির থেকে করলে ভালো রেট পাওয়া যায়!
ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পর আপনার লাগেজ বুঝে নিবেন। তারপর বাইরে বের হতেই মিলে যাবে প্রি-পেইড ট্যাক্সি সার্ভিস। থামেল পর্যন্ত সাত-আটশ রুপি ভাড়া পড়বে। তবে প্রি-পেইড ছাড়া অন্য ট্যাক্সিও পাওয়া যায়। তবে অবশ্যই একটু দরদাম করে নিতে পারলে নিশ্চিত লাভবান হবেন!
কাঠমান্ডুর থামেল নামক জায়গাটা পর্যটকদের জন্য প্রসিদ্ধ। জায়গাটা তুলনামূলকভাবে বেশ জমজমাট। ১ হাজার থেকে দেড় হাজারের মধ্যে মধ্যম মানের অনেক হোটেল পাওয়া যায়। আর বাজেট একটু বাড়িয়ে দিতে পারলে অর্থাৎ ৩ হাজারের মধ্যে ভালো মানের ডিলাক্স রুম পাওয়া যায়। এরপর হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া-দাওয়া সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে যে কাজটি করবেন তা হলো- কাঠমান্ডু-পোখারা পর্যটক বাসের টিকিটের ব্যবস্থা আছে কি না। তবে বেশিরভাগ হোটেলই টিকেটের ব্যবস্থা করে দেয়।
হোটেল থেকে নেমে রাস্তায় বেরিয়ে কয়েক মিনিট হেটে সামান্য দূর এগুলেই প্রচুর ট্র্যাভেল এজেন্ট পাওয়া যায়, আর তাদের প্রত্যেকের কাছেই কোনো না কোনো টুরিস্ট বাসের টিকিট পাওয়া যায়। বাসে কাঠমান্ডু থেকে পোখারা পৌঁছতে সময় লাগে ছয় থেকে আট ঘণ্টার মত। ভাড়া ৬০০ থেকে ৭০০ রুপির ভেতরেই। টিকেট কাটার সময় একটি বিষয় মাথায় রাখবেন যেন ডান দিকের আসনটি নেয়া যায়। ডানদিকের আসনটিতে বসার প্রকৃত এডভান্টেজ হলো আপনি চলতে চলতে পাহাড়ি এলাকায় সবুজ প্রকৃতি, নদী, মেঘ আর সবুজের সমারোহ উপভোগ করতে পারবেন।