কোরীয় উপদ্বীপে শান্তির লক্ষ্যে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে ঐতিহাসিক বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে নানা কারণে স্থবির হয়ে রয়েছে ওই নিরস্ত্রীকরণ আলোচনা।
সেই জট খুলতে মধ্যস্থতা করছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ও দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে গতকাল মঙ্গলবার মুন উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ং যান।
বৈঠকে বসেন কিম জং উনের সঙ্গে। এক দশকের বেশি সময় পরে পিয়ংইয়ং গেলেন দক্ষিণ কোরিয়ার কোনো প্রেসিডেন্ট। আর কিমের সঙ্গে তার এ নিয়ে চলতি বছরের মধ্যে তৃতীয় বৈঠক এটি। দুই কোরিয়ার এবারের শীর্ষ সম্মেলনকে কিম ও ট্রাম্পের মধ্যে সম্ভাব্য নতুন বৈঠকের 'লিটমাস টেস্ট' হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এ সময় হাসিমুখে মুনকে জড়িয়ে ধরেন কিম। দুই নেতার গাড়িবহর লক্ষ্য করে কয়েকশ’ উত্তর কোরীয় নাগরিক কোরীয় উপদ্বীপ এক হওয়ার বিষয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। স্বাগতম! ‘দুই কোরিয়া এক ভূমিতে পরিণত হোক’ স্লোগান দিচ্ছিলেন তারা।
বিবিসি জানায়, জড়িয়ে ধরার মুহূর্তে ও একে অপরের সঙ্গে কথা বলার সময়ও দুই প্রেসিডেন্টের মুখে হাসি ছিল।
বিমানবন্দরে স্যুট ও ঐতিহ্যবাহী কোরীয় পোশাক পরা উত্তর কোরিয়ার কয়েকশ’ নারী-পুরুষ কোরীয় উপদ্বীপ ও উত্তর কোরিয়ার পতাকা নেড়ে, ফুল হাতে মুনকে অভ্যর্থনা জানান। বিমানবন্দরে ‘পিয়ংইয়ং সফরে সুস্বাগতম প্রেসিডেন্ট মুন’ লেখা ব্যানারও শোভা পাচ্ছিল।
দুপুরের খাবারের পর দু’নেতা আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেন। এ নিয়ে চলতি বছর কিম-মুনের মধ্যে তৃতীয় শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হল। মুনের সফরসঙ্গী হিসেবে কয়েকজন কর্পোরেট কর্মকর্তাও রয়েছেন।
তাদের মধ্যে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের ভাইস চেয়ারম্যান জে ওয়াই লি ও এলজি গ্র“পের প্রধানরা রয়েছেন। উত্তেজনা কমানো ও সশস্ত্র সংঘাত এড়াতে সামরিক চুক্তির পাশাপাশি বুধবার কিম ও মুন একটি যৌথ বিবৃতি দেবেন বলেও আশা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার মুনের উত্তর কোরিয়া ছাড়ার কথা রয়েছে।
এবারের শীর্ষ সম্মেলনকে কিম ও ট্রাম্পের মধ্যে সম্ভাব্য নতুন বৈঠকের ‘লিটমাস টেস্ট’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। জুনে সিঙ্গাপুরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠকে বসেছিলেন কিম।
বৈঠকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন সে বিষয়ে তিনি আন্তরিক কিনা, মুনের সঙ্গে বৈঠকে তার আঁচ পাওয়া যাবে বলেও ধারণা পর্যবেক্ষকদের।
১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ পর্যন্ত চলা কোরীয় যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণার আগে ওয়াশিংটন পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে পিয়ংইয়ংয়ের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ দেখতে চায়। কোরীয় যুদ্ধে মুনের পরিবারও বিচ্ছিন্ন হয়েছিল।