‘আমি একটা কন্টেস্টে অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে প্রায় ছয় হাজারের মতো প্রতিযোগী রেজিস্ট্রেশন করেছিলো। সকল পর্ব শেষ হওয়ায় পর যখন ফলাফল ঘোষণা করা হলো আমি পুরা অবাক। আমি তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিলাম। পূর্ববর্তী কোন অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও এতদূর পৌঁছে যাবো সেটা ভাবতে পারিনি। তারপর আস্তে আস্তে মিডিয়ার প্রতি ভালোবাসা জন্মাতে শুরু করলো। কেউ আমাকে হাত ধরে মিডিয়ায় আনেনি’ কথাগুলো বলেছেন বর্তমান সময়ের প্রগতিশীল অভিনেত্রী শাকিলা পারভীন।
সেই প্রতিযোগিতায় নিজের একটি অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি জানান, ‘আগে কখনো র্যাম্পে হাঁটার অভিজ্ঞতা ছিলো না। প্রতিযোগিতায় যখন বলা হলো র্যাম্প করতে হবে, আমি ভাবলাম এ আর এমন কি? কিন্তু যখন র্যাম্প শুরু হলো তখন প্রডিউসারকে আমাদের সাথে হাঁটার জন্য স্টেজে উঠিয়ে দেয়া হলো। সবাই প্রোডিউসারের হাত ধরে হাঁটছিল। কিন্তু আমি প্রডিউসারের হাত ধরিনি, নিজের মতো হেঁটেছি। র্যাম্প শেষ করে প্রোডিউসার মজা করে বলেছিলো, এই মেয়েটা আমার হাত ধরে নাই, সে কিভাবে অভিনয় করবে?
ইউটিউবে শাকিলার ৫/৬টা মিউজিক ভিডিও রয়েছে। এছাড়াও আরো পাঁচটি মিউজিক ভিডিও এখনো রিলিজ হয়নি। সেগুলোর মধ্যে কাজী শুভ, এফ এ সুমনের গানও রয়েছে। তবে সকল মিউজিক ভিডিওর মধ্যে তার কাছে সেরা হচ্ছে ‘বেপরোয়া মন’। মাহিন আওলাদের পরিচালনায় এতে শাকিলার সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন সুমিত সেন গুপ্ত। এই কাজটির পর বেশ ভালো সাড়া পেয়েছেন তিনি।
শাকিলা বলেন, ‘বিভিন্ন চ্যানেল থেকে সিরিয়ালের অফার আসছে। অনেকে বলছেন আমাকে ঘিরেই সিরিয়ালের গল্প সাজানো হবে। কিন্তু পড়াশোনার চাপে আমি এখনই কোন সিরিয়াল করতে পারছি না। পড়াশোনা শেষ হতে আরও এক বছর সময় লাগবে। তারপর টিভিতে নিয়মিত হবো। আপাতত সিনেমায় কাজ করার কোন পরিকল্পনা নেই। হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে ভালো লাগে। কিন্তু কখনো আমি নিজেকে কোন নায়িকার জায়গায় কল্পনা করিনি। কখনো ভাবিনি আমি কোন ছবির নায়িকা হবো। আমার মনে হয়, অভিনয়ের জন্য আমি এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নই। নিজেকে তৈরি করছি।’
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই মিডিয়া এবং ব্যক্তিজীবনকে আলাদা রেখেছেন শাকিলা। মিডিয়া মিডিয়ার জায়গায়, তার ব্যক্তিসত্ত্বা ভিন্ন জায়গায়। এই দুটোকে কখনো মিলিয়ে ফেলেন না। ব্যক্তিজীবনে তার আইডল মা। তবে মিডিয়ার চোখে শাহরুখ খান। নুসরাত ইমরোজ তিশাকেও খুব পছন্দ করেন তিনি।
মিডিয়া সম্পর্কে সকলের যে ধারণা প্রচলিত আছে সে দিক থেকে ভিন্ন অবস্থানে রয়েছেন এই অভিনেত্রী। তিনি বলেন, মিডিয়াতে তুমি নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করবে এবং অন্যরা তোমাকে কিভাবে নিবে সেটা পুরোপুরি তোমার উপর নির্ভর করে। অনেকেই মনে করেন মিডিয়া খারাপ। কিন্তু আমি বলবো, মিডিয়া খারাপ না। তুমি খারাপ মিডিয়া খারাপ, তুমি ভালো তো মিডিয়া ভালো। আমি কোন স্টার হওয়ার জন্য মিডিয়াতে আসি নাই। শখের বসে আমি এসেছি। মিডিয়ায় পথচলার শুরু থেকেই আমার অভিজ্ঞতা খুব ভালো। কাজের সূত্রে আমি যাদের পাশে পেয়েছি তারা সবাই আমাকে খুব সাহায্য করেছে।’
শাকিলা জানান, ‘ছোটবেলা থেকেই বাসা থেকে আমাকে কোন কাজে বাঁধা দেয়নি। তাদের বিশ্বাস আমি যাই করি, পরিবারের সম্মানের কথা মাথায় রেখেই করবো। এখন তারা আমার কাজগুলো দেখে, উৎসাহ দেয়, ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেয়। তখন খুব ভালো লাগে। তবে বাসা থেকে আমাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তুমি যাই করো আপত্তি নেই কিন্তু আগে পড়াশোনাটা শেষ করতে হবে।’
স্বল্প সময়ের ক্যারিয়ার হলেও এরইমধ্যে স্মৃতির পাতায় বেশ কিছু ঘটনা জমা করেছেন শাকিলা। সেখান থেকেই বলেছেন, ‘সর্বশেষ কোরবানী ঈদের আগে একটা মিউজিক ভিডিওর কাজ করি। নির্মাতা সৈকত রেজা ভাই বললেন, আমাকে একটা পদ্মপুকুরে নামতে হবে। আমি যখন নামছিলাম পদ্মর যে শেকড়গুলো আছে সেগুলো আমার পায়ের সাথে সাপের মতো প্যাঁচাতে থাকে। কম পানিতেই নেমেছিলাম, কিন্তু এক পা সামনে দিতেই হঠাৎ কোমড় পানিতে পড়ে যাই। আমি ভয়ে কান্না করে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম আমি শুটিং করবো না। সবাই উপর থেকে আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলো। ভিউ দেখার জন্য ক্যামেরা সামনে ধরায় আমি কান্না করতে করতে হেসে দিয়েছিলাম। তবে এটি আমার খুবই ভয়ংকর অভিজ্ঞতা ছিলো। এই স্মৃতি আমি কখনো ভুলবো না।
আরও একটা মজার ঘটনা আছে, বাচ্চা ছাগলের অভাবে ১৫ কেজি ওজনের একটি বড় ছাগল নিয়ে আমি ১০ মিনিট দৌড়াদৌড়ি করেছি। দুইদিন আমার হাতের ব্যাথা ছিলো। এগুলো কখনো ভুলা সম্ভব নয়।’