স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঝালকাঠির শেখেরহাট ইউনিয়নের ১০শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি ২ বছরেও চালু করা হয়নি। তিন তলা এই ভবন উদ্বোধনের পর দুই বছর অতিবাহিত হলেও চালু না হয়নি এর কার্যক্রম। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা।
দেশের প্রতিষ্ঠিত ঔষধ কোম্পানী অপসোনিন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিল্পমন্ত্রীর খালাতো ভাই আব্দুর রউফ খান এই ভবন নির্মাণের জন্য জমি দান করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আধুনিক কেন্দ্রটিতে স্থাপন করা হয়েছে ডেলিভারি রুম, সলিড রুম, আইউডি রুম, জেনারেল ওয়ার্ড, ডিসপেনসারি, আল্ট্রাসনোগ্রাম রুম, ডাক্তার ও সেবিকাদের পৃথক রুম, ব্রেষ্ট ফিডিং, গার্ড রুম ও পাম্প হাউজ। ওপারেশন থিয়েটার রুমে লাগানো হয়েছে এয়ারকন্ডিশন।
অথচ এসব রুম বা বিভাগ থাকলেও নেই সরঞ্জাম, আসবাবপত্র, লোকবল ও ঔষধ। ঠায় দাড়িয়ে আছে শুধুমাত্র ভবনটি।
অত্যাধুনিক চিকিৎসারর জন্য সব আয়োজন করা হলেও ভবনটি ছাড়া নেই কিছুই। পাম্প হাউজে মটর স্থাপন করা হলেও তা চালু না করায় পানি নেই। ভবন নির্মাণের পরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে প্রায় ৪২ হাজার টাকা বকেয়া বিলের কারণে তা বিচ্ছিন্ন করা হয়।
বর্তমানে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের এফডব্লিউসি রোজিনা আক্তারকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে এই ভবনে সংযুক্ত করা হয়েছে। তাই প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীদের দায়সারা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে এফডব্লিউসি রোজিনা আক্তার জানান, পানি বিদ্যুৎ বিহীন এই বিশাল ভবনে আমাকে কিছু সাধারণ ঔষধ বরাদ্দ দিয়ে এখানে পাঠানো হয়েছে। অথচ ১০ শয্যার কল্যান কেন্দ্রটি উদ্বোধন করে শয্যা, ঔষধ, লোকবল, ফার্নিচার বরাদ্দ কিছুই করা হয়নি। আমাকে এখানে ১লা এপ্রিল ২০১৮ তারিখ অতিরিক্ত দায়িত্বে সংযুক্ত করা হয়। পাশাপাশি এফডব্লিউসি’র স্যাটেলাইট ক্লিনিকের দায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে আমাকে। যা আমার একার পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে পরেছে।
তিনি আরও জানান, প্রতিদিন গড়ে ৩০/৪০ জন রোগী এখানে সেবা নিতে আসে। তবে এখানে কোন জটিল রোগের চিকিৎসা করার সুযোগ নেই। শুধুমাত্র শিশু ও মায়েদের চেকআপ করার পাশাপাশি কৃমি, ভিটামিন, জ্বর ও ব্যথাজনিত রোগের কিছু ঔষধ দেওয়া হচ্ছে।
চিকিৎসা নিতে আসা শিরযুগ এলাকার রোগী মারুফা বেগম জানান, সরকার এত টাকা খরচ করে হাসপাতাল করলেও শয্যা চালু না করায় আমাদের দূর্ভোগ লাঘব হচ্ছেনা। কবে নাগাদ এটি চালু করে এলাকার মা শিশুদের স্বাস্থ্য সেবার সমস্যা সমাধান করবে তা সরকার ভাল জানে।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির সামনের বাসিন্দা প্রফুল্ল দেবনাথ জানান, এই ভবনটি নির্মাণ করে আমাদের আশার আলো দেখিয়ে চালু না করে ফেলে রাখা হয়েছে। তাই আমাদের শিশু সন্তান ও স্ত্রীদের সেবা পেতে ঝালকাঠি যেতে হচ্ছে। তাদের জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালটি করা হলেও যদি এখনো ঝালকাঠি যেতে হয় তাহলে এটি করে লাভ কি বুঝি না। শেখেরহাট ছারাও গুয়াটন, বংকুরা, শ্রেমন্তকাঠি, বারুহারসহ নদীর ওপার থেকেও প্রতিদিন প্রায় অর্ধশতাধিক রোগী এখানে আসছে। কিন্তু চিকিৎসা না পেয়ে নিরাশ হয়ে ঝালকাঠি যেতে বাধ্য হচ্ছে।
শেখেরহাটের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নিতাই চন্দ্র জানান, এই ইউনিয়ন থেকে প্রায় ১৫ কিলো মিটার দূরে ঝালকাঠি জেলা শহরে যাবার সড়কটি ভাঙ্গা হওয়ায় বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের নিয়ে যাওয়া কষ্টসাধ্য। তাছাড়া অটোরিকসায় সাধারণ যাত্রীদের সাথে যেতে আসতে ২শ টাকা, রিজার্ভ গেলে ৫শ টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে আমাদের। এই কল্যান কেন্দ্রটি চালু হলে বিশেষ করে নারী ও শিশুদের হয়রানি, খরচ ও সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি সুচিকিৎসা নিশ্চিত হত।
এই প্রসঙ্গে শেখেরহাট ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল আমিন খান সুরুজ বলেন, এটি চালু করা হলে ইউনিয়নসহ পার্শবর্তি ইউনয়নের মা ও শিশুরাও এখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে উপকৃত হতো। কিন্তু চালুর বিষয়ে জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেও কোন সুফল পাই নি।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ফেরদৌসি বেগম জানান, শেখেরহাটের ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটির ভবন উদ্বোধন করা হলেও চালু করার বিষয়টি সম্পূর্ণ মন্ত্রনালয়ের এখতিয়ার। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। তবে যেহেতু সেখানে অনেক রোগী আসে তাই এফডব্লিউসিকে সাময়িক ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে পানি বিদ্যুৎ না থাকায় মেয়েটিকে সেখান থেকে শীগ্রই প্রত্যাহার করে নেব।