সৌদি আরবে তিক্ত সব অভিজ্ঞতা আর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে আজ দেশে ফিরছেন আরো ৬৫ নারী গৃহকর্মী।
‘একটা সুস্থ মানুষকে যদি পায়ের মধ্যে পেরেক ঢুকাই দেয় তাইলে কেমন লাগে? যদি মাথায় কারেন্টের শক দেয় তাইলে কেমন লাগে বলেন! আমরা এখানে অনেক অত্যাচার সহ্য করছি। এবার আপনাদের কাছে একটাই আবেদন আমাদের জীবনটা ভিক্ষা দেন, আমাদের দেশে ফিরায় নিয়ে যান।' এভাবেই গত ২৮ আগস্ট সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরার আকুটি জানিয়েছিলেন কিছু নারী শ্রমিক।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর), রাত সোয়া ৮টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছবেন তারা। রিয়াদ মাহারা হিউম্যান রিসোর্স কোম্পানি ও সফর জেল (ইমিগ্রেশন ক্যাম্প) থেকে ইতিহাদ এয়ারওয়েজ যোগে তারা ফিরছেন। যাদের মধ্যে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফিরছেন ৩৭ নারী গৃহকর্মী।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বিডিমর্নিংকে বলেন, ‘গত দুই মাসে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী কর্মী সৌদি আরবের জেল থেকে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরেছেন। তাদের অধিকাংশই শুধু পরনের কাপড় নিয়ে দেশে ফেরেন। আমাদের কাছে এই ৩৭ জন নারীর পরিবারের পক্ষ থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করে। আমরা মন্ত্রণালয়কে ২৭ আগস্ট চিঠি দিয়েছিলাম এই ৩৭ জনকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য। তারা আজ রাতে দেশে ফিরবেন বলে জানতে পেরেছি।’
তিনি আরো বলেন, মানবিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম এসব নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে।
সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত এসব নারী গৃহকর্মীরা মালিকদের অমানবিক নির্যাতন সইতে না পেরে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। পরে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের আর্থিক সহায়তায় এই নারী শ্রমিকদের দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য মতে, ২০১৭ সালে অভিবাসী নারীর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯২৫ জন, যা মোট অভিবাসন সংখ্যার ১৩ শতাংশ।
১৯৯১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত অভিবাসন প্রত্যাশী নারী শ্রমিকদের একা বিদেশে যেতে বাধা দেয়া হলেও পরবর্তীতে ২০০৩ এবং ২০০৬ সালে কিছুটা শিথিল করা হয়। ২০০৪ সালের পর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নারী শ্রমিকের অভিবাসন হার ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় মোট অভিবাসনের ১৯ শতাংশে।