Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ বুধবার, ডিসেম্বার ২০২৪ | ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মেট্রোরেলের সিটে আঁকাআকি : আশিক ও জেরিনকে ‘খুঁজছে’ সবাই!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০৪:৪৫ PM
আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০৪:৫৫ PM

bdmorning Image Preview


আজ সকালে প্রথম মেট্রোরেল জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সিটে লেখালেখির একটি ছবি সারাদেশে আলোড়ন তুলেছে । শুরু হয়েছে আলোচনা সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপ লিফট বাংলাদেশ পেইজের একটি পোষ্টে বলা হয়েছে, 'আশিক এবং জেরিনকে খুজছে পুলিশ। সিসিটিভি দিয়ে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর কথা কিভাবে মানুষ এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলো। সকলকে সাবধান করা হচ্ছে।' 

এই ছবি শেয়ার করে রাগিব আহসান নামে একজন লিখেছে, সরকার এত কস্ট করে আমাদের জন্য পুরো বিদেশি ফ্লেভার বানিয়েছে - এর জন্য আমার অনেক ভয় লাগছে ভাই বিশ্বাস করেন, এত দামী জিনিসপত্র দিছে সরকার, আমরা কি পারবো ধরে রাখতে...সেই প্রশ্নটাই এখন সবচেয়ে বড় ? 

বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) আজ  প্রথম দিন হওয়ায় মেট্রোরেলে ছিল উপচেপড়া ভিড়। এই ট্রেনে চড়ার জন্য সকাল সাড়ে ৬টা থেকে লাইনে দাঁড়ায় সাধারণ মানুষ। দুপুর ১২টা নাগাদ এই লাইন গিয়ে দাঁড়ায় আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস পর্যন্ত। সময় যত গড়াচ্ছিল লাইনে থাকা মানুষদের ট্রেনে চড়ার সুযোগ ততটাই ক্ষীণ হয়ে আসছিল। আর তাই সাড়ে ১১টার পর থেকে লাইনে হইহুল্লোড় শুরু হয়ে যায়। এরই মধ্যে একদল লাইন ভেঙে একদম গেটের কাছে চলে আসে। মেট্রোরেলের নিরাপত্তাকর্মীরা বাধ্য হয়ে গেট বন্ধ করে দেন। 

মেট্রোরেলে প্রথম জরিমানা ১০০ টাকা: মেট্রোরেল চালুর পর প্রথম জরিমানার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। জরিমানা দেওয়া ব্যক্তি নিজেকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী বলে দাবি করেছেন। তার নাম ইমরান হোসেন নোমান। তার দাবি, মেট্রোরেলে একক যাত্রার কার্ড হারানোয় তাকে ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

আজ বৃহস্পতিবার মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আঁগারগাও স্টেশন পর্যন্ত ভ্রমণ শেষে তিনি এ জরিমানার মুখে পড়েন বলে জানিয়েছেন।  

ইমরান হোসেন নোমান জানান, উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে টিকিট কেটে তিনি মেট্রোরেলে ওঠেন। আঁগারগাও স্টেশনে পৌঁছে দেখেন টিকিট হারিয়ে গেছে। টিকিট ছাড়া বের হওয়ার চেষ্টা করলে তিনি আটকা পড়েন। ফলে এমআরটি কর্মকর্তারা তাকে ১০০ টাকা জরিমানা করেন।

তিনি আরও জানান, জরিমানার ১০০ টাকার মধ্যে ৬০ টাকা ভাড়া বাবদ, বাকি ৪০ টাকা কার্ডের মূল্য বাবদ। 

নিজেকে ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে দাবি করে ইমরান হোসেন নোমান বলেন, আমাকে আবার নতুন টিকিট কার্ড সংগ্রহ করতে হয়েছে। 

মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) ইফতেখার হোসাইন বলেন, টিকিট না থাকলে বা কেউ টিকিট হারিয়ে ফেললে তাকে অবৈধ যাত্রী হিসেবে ধরে নেয়া হবে।

মেট্রোরেলের কর্মকর্তারা জানান, এমআরটি পাস কার্ড হারালে পুনরায় কার্ডের জামানত হিসেবে ২০০ টাকা দিয়ে নতুন কার্ড নেওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে আগের রিচার্জকৃত টাকাও কার্ডের ব্যালেন্সে যোগ হবে।

মেট্রোরেলে যা করবেন, যা করবেন না: 

স্টেশনের ভেতরে

  • সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে, এমআরটি পাস (দীর্ঘমেয়াদী টিকেট) থাকলেও

  • স্টেশনের দোতলায় প্রবেশ ও বহির্গমন গেট টপকানোর চেষ্টা করা যাবে না

  • মেট্রোরেল স্টেশনের লিফটে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে

  • চলন্ত সিঁড়িতে বাঁ দিক ঘেঁষে দাঁড়াতে হবে

  • গন্তব্যস্থান সম্পর্কে ধারণা পেতে মেট্রোরেল ম্যাপ দেখতে হবে

  • দৃষ্টিহীনদের যাতায়াতের জন্য হলুদ রঙের ট্যাকটাইল পথ ছেড়ে দাঁড়াতে হবে

  • স্টেশন এলাকায় ধূমপান করা যাবে না

  • পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে

  • প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোরের ওপর দিয়ে মাথা বাড়িয়ে মেট্রোরেল দেখার চেষ্টা করা যাবে না

  • বিনা টিকেটে মেট্রো রেলে ভ্রমণ করা যাবে না। তা করলে বা ভাড়া এড়ানোর জন্য কোনো কৌশল অবলম্বন করলে নির্ধারিত ভাড়ার ১০ গুণ পর্যন্ত অর্থদণ্ড হবে।

ট্রেনে চড়ার সময়

  • আগে নামতে দিন, পরে উঠুন

  • প্ল্যাটফর্ম ও মেট্রোরেল কোচের মাঝের ফাঁক থেকে সতর্ক থাকতে হবে

  • নিরাপত্তার স্বার্থে প্ল্যাটফর্মে হলুদ দাগের বাইরে দাঁড়াতে হবে

  • ওঠা-নামার সময় হুড়োহুড়ি বা ধাক্কাধাক্কি করা যাবে না

  • মেট্রোরেলে ওঠা-নামার সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না

  • মেট্রোরেলের দরজায় কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না

  • বয়স্ক ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত স্থান ছেড়ে দিতে হবে

  • কোচের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ানো যাবে না

  • মোবাইল ফোনের স্পিকার অন করে রাখা যাবে না

  • নিচু স্বরে কথা বলতে হবে

  • একাধিক সিট দখল করে বসা যাবে না

  • সহযাত্রীদের অস্বস্তি বা অসুবিধা তৈরি করা যাবে না

  • ড্রাইভিং ক্যাবের দরজা খোলা যাবে না

  • মালামাল নিজ দায়িত্বে রাখতে হবে

  • দুই কোচের মাঝখানের চলাচলের পথে দাঁড়ানো যাবে না

  • নিরাপত্তা কর্মীদেরকে দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করতে হবে

  • এমআরটি পাস সঙ্গে রাখতে হবে

  • মেট্রোরেলে পানাহার করা যাবে না

  • ট্রেনের ভেতরের নির্দেশিকা চিহ্ন ও ডিসপ্লে দেখতে হবে। যাত্রার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকবে সেখানে

  • ঘোষণা শুনতে হবে

  • নির্ধারিত স্থান ব্যতীত থুথু বা পানের পিক ফেলা যাবে না

  • কোনো ধরনের পোষা প্রাণী বহন করা যাবে না।

  • মেট্রোরেল এলাকায় পোস্টার, ব্যানার, দেয়াল লিখন ইত্যাদি নিষিদ্ধ

এর পাশাপাশি কিছু পরামর্শও দিয়েছে  মেট্রোলরেল কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তাকর্মীদের দায়িত্বে পালনে সহায়তা করা, সহযাত্রীকে প্রয়োজনে সহায়তা প্রদান করা, মনোযোগ দিয়ে কর্তৃপক্ষের ঘোষণা শোনা, সর্বক্ষেত্রে ভদ্রতা ও সৌজন্য বজায় রাখা এবং নিজ গন্তব্য সম্পর্কে তথ্য পেতে  মেট্রো ম্যাপের সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ডিএমটিসিএল। 

মেট্রোরেলের সম্পদ বিনষ্টকারী বা নির্দেশিকা অমান্যকারী যাত্রীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা  নেওয়া হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমটিসিএল ম্যানেজার (সিভিল অ্যান্ড পি-ওয়ে) মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, আমরা মেট্রোরেলে চড়ে অভ্যস্ত নই। তাই প্রথমদিকে আমরা মানুষকে কাউনসেলিং করব। এ জন্য আমাদের প্রতিটি স্টেশনের কনকোর্স লেভেলে ডিটেনশন রুম আছে। 

তিনি আরো বলেন, প্রথমদিকে মানুষজন ভুল করবে। ভুলের অবশ্য মাত্রাও আছে। কেউ ইচ্ছাকৃত ক্ষতি করতে চাইলে তাকে আমরা আটক করে ডিটেনশন রুমে রাখব। সেখানে তাদের আমরা কাউন্সেলিং করব। যদি দেখা যায়, কাউন্সেলিংয়ে সন্তোষজনক ফল আসে তাহলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। না হলে পুলিশে দিয়ে দেওয়া হবে। ডিটেনশন রুমের দায়িত্বে থাকবে মেট্রোরেলের নিজস্ব পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। আমরা প্রথমেই কাউকে বড় শাস্তি দেব না। স্টেশন এবং  ট্রেন সার্বক্ষণিক সিসিটিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়া সার্ভিলেন্স টিম থাকবে। তারা দেখবে কে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করছে, কে ভুলবশত করছে। যদি কেউ ইচ্ছাকৃত বারবার ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করে তবে তাকে সরাসরি ডিটেনশন রুমে রেখে পুলিশে দিয়ে দেওয়া হবে। 

উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত রুটে মেট্রোরেল যাত্রা শুরু করবে। যাত্রী পরিবহন শুরু হতে যাচ্ছে, তবে এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি মেট্রোরেলের নিরাপত্তায় পুলিশের বিশেষ ইউনিট। ৩৫৭ জন সদস্য নিয়ে পুলিশের বিশেষ ইউনিট হিসেবে ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) নামে নতুন একটি ইউনিট চালু হওয়ার কথা ছিল। তবে চূড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়ার আগ পর্যন্ত মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ সদস্য নিয়ে নিরাপত্তার কাজটি চালাবেন বলে ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

Bootstrap Image Preview