রাজধানীর নয়াপল্টনে সংঘর্ষের পর বিএনপির কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ বেশ কয়েকজনকে আটকের পাশাপাশি ককটেল উদ্ধার, এক ট্রাক চালসহ খাদ্য উপকরণ এমনকি কয়েক ডেকচি খিচুড়ি জব্দ করেছে পুলিশ।
জব্দ করা এসব খাদ্য ও খাদ্যপণ্য নিয়ে কী করা, হবে, সে প্রশ্নের জবাব অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
আগামী শনিবার ঢাকায় দলটির বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিতে গত কয়েক দিন ধরে নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে অবস্থান করছিলেন। সময় যত গড়াচ্ছিল, নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিও বাড়ছিল তত। ঢাকার বাইরে থেকে আসতে থাকা নেতা-কর্মীদের খাওয়াদাওয়া নিশ্চিতের ব্যবস্থাও করেছিল বিএনপি। সেজন্য আয়োজন করা হয় রান্নারও।
পুলিশ অভিযান চালানোর সময় রান্নার চাল-ডাল, তেল, মশলা, পানি যেমন পাওয়া যায়, তেমনি পাওয়া যায় রান্না করা খিচুড়িও। সেগুলো গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।
পুলিশ বলছে, তাদের অনুমতি ছাড়াই নয়াপল্টনে সমাবেশ করার চেষ্টা করছিল বিএনপি। এ জন্যই এগুলো মজুদ করা হচ্ছিল।
বাহিনীটি জানায়, পার্টি অফিসের সামনে থেকে এক ট্রাক চালের বস্তা ও পার্টি অফিসের নিচতলার অস্থায়ী রান্নাঘর থেকে খিচুড়ি জব্দ করা হয়।
জানতে চাইলে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনার হায়াতুল ইসলাম বলেন, ‘তারা গত কয়েকদিন ধরেই এখানে কর্মী জমায়েত করে রান্নার আয়োজন করে খাওয়াচ্ছিল। কিন্তু আজকে যে আয়োজন দেখলাম তাতে স্পষ্ট তারা আমাদের অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও নয়াপল্টনেই সমাবেশের প্রস্ততি নিচ্ছিল।’
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে গত ৮ অক্টোবর থেকে বিএনপি বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ থেখে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীকে জমায়েতের ঘোষণা দেয়।
তবে এই সমাবেশ কোথায় হবে এ নিয়ে তৈরি হয়েছে বিরোধ। বিএনপি সেদিন জমায়েত হতে চায় নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে। কিন্তু পুলিশ অনুমতি দিয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, যেখানে যেতে আপত্তি আছে দলটির।
নয়াপল্টন না পেলে আরামবাগে অনুমতি দিতে বিএনপির মৌখিক অনুরোধ মৌখিকভাবেই ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বুধবার বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়েছে, গ্রহণযোগ্য বিকল্প স্থানের প্রস্তাব দেয়া না হলে সমাবেশ হবে নয়াপল্টনেই।
দুপুরের আগে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস ঘোষণা দেন, তাদের সমাবেশ হবে নয়াপল্টনেই। পুলিশের কাজ পুলিশ করবে, তাদের কাজ তারা করবেন।
আগের রাত থেকেই সেই এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিতে থাকেন। দুটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে নেতাদের বক্তব্য চলছিল সকাল ১০টা থেকেই। সেই সঙ্গে বিতরণ করা হচ্ছিল লিফলেট। তাতে শনিবারের সমাবেশে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছিল।
দুপুরের পর থেকে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, পরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশের অভিযানের পর পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, আইন অমান্য করলে বিএনপির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করলে নিরাপত্তার দায়িত্বও নেন তিনি।
এরপর বিএনপি মহাসচি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারা ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ করতে চান। এর ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকেই।