ছাত্রলীগের হামলায় নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত সভায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ।
শুক্রবার (৭ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে জানান আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক আখতার হোসেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা বিকেল ৩টা থেকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আমাদের স্মরণসভার প্রোগ্রাম শুরু করি। এ সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বেসরকারি বিষয়ক সম্পাদক আল আমিন রহমান এবং সুজন শেখ নামের একজন শিক্ষার্থী প্রোগ্রামস্থলে এসে আমাদের প্রোগ্রাম করতে নিষেধ করেন।
‘এ সময় তিনি বলেন, আবরার বুয়েটের শিক্ষার্থী। তাই আমরা তার কোন স্মরণসভা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে করতে পারব না। এ সময় আল আমিন রহমান আমাদের সবার আইডি কার্ড দেখতে চান। পরে আমরা তাকে সেটি দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা চলে যায়। আর আমরা আমাদের প্রোগ্রাম শুরু করে দেই।’
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘পরে সাড়ে ৩টার দিকে যখন ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বক্তব্য রাখছিলেন তখন আল আমিন রহমান এবং সুজন শেখের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগরের ছাত্রলীগ কর্মীদের দিয়ে আমাদের উপর হামলা করা হয়। এতে প্রোগ্রাম উপলক্ষে আনা বেশ কিছু চেয়ারও তারা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন।’
এই বিষয়ে আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক এবং ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আখতার হোসেন বলেন, ‘আমাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী স্মরণসভা শুরু করার পরপরই প্রক্টরিয়াল টিমের উপস্থিতে আমাদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলায় আমাদের অন্তত ১০ জন আহত, দুইজন গুরুতর আহত হয়েছে। একজন রিকশা চালকেরও মাথা ফেটে গেছে।’
‘আহতদের ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা কোনো দলীয় ব্যানারেও এই প্রোগ্রাম করিনি, আমরা প্রোগ্রাম করেছি আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের ব্যানারে। আমরা এই ন্যাক্কারজনক হামলায় ধিক্কার জানাই।’
হামলায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এম এম মহিন উদ্দিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান, সাংগঠনিক নাজিম উদ্দীন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক আল আমিন রহমান, উপ-দপ্তর সম্পাদক শিমুল খান, আব্দুর রাহিম, জুহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতি কামাল উদ্দীন রানা, সাধারণ সম্পাদক রুবেল হোসেনসহ কেন্দ্রীয়, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল শাখা ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী অংশ নেয়।
হামলার পর প্রোগ্রাম উপলক্ষে আনা ব্যানার পুড়িয়ে দেয়া হয়। ঘটনার সময় পাটকেলের আঘাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দীনও আহত হয়।
ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে হামলার ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান বলেন, 'তারা (ছাত্র অধিকার) ক্যাম্পাসে বহিরাগত, মৌলবাদীদের নিয়ে কর্মসূচি পালন করে। আমরা তাদের জিজ্ঞাসা করতে আসি তারা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র কিনা। এ সময় তারা কিছু না দেখিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিরোধ করে।'
ঘটনার সময় সেখানে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।