ওসি হয়ে বিয়ে করবেন- এমন প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছেন তারিকুল ইসলাম রাজিব (৩০) নামের এক পুলিশ সদস্য। তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ। এছাড়া, ভুক্তভোগী নারীর কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎও করা হয়েছে।
আদালত মামলা আমলে নিয়ে আগামী ৭ দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারকে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন
রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুানাল-৪ এর বিচারক মো. জমিউল হায়দারের আদালত এ আদেশ দেন। গত ১২ সেপ্টেম্বর (সোমবার) আদালতে মামলার আবেদন করা হয়। অভিযুক্ত কনস্টেবল পটুয়াখালী মির্জাগঞ্জ রানিপুর এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে তারিকুল ইসলাম রাজিব (৩০)। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ের মালখানা শাখায় জেলা পুলিশে কর্মরত।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কনস্টেবল তারিকুল ইসলাম রাজিব চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ের মালখানায় বদলি হয়ে আসার পর ভুক্তভোগী নারীর বায়েজিদ এলাকার বাসায় আত্মীয়ের মাধ্যমে সাবলেট উঠেন। বাসায় ভুক্তভোগী নারী স্বামী-সন্তানসহ বসবাস করতেন। ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সাবলেট থাকা অবস্থায় তারিকুল ওই নারীকে ভুলিয়ে স্বামীর অবর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে গিয়ে ছবি ও ভিডিও করেন এবং তিনি ওসি হলে তাকে বিয়ে করার আশ্বাসও দেন।
এভাবে তাদের দুজনের সম্পর্ক আরও গভীর হয়। পরে বাসায় ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক সেবনসহ বিক্রি করছিলেন কনস্টেবল তারিকুল। এসব অনৈতিক কাজে ভুক্তভোগী নারী বাধা দিলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে চুপ থাকতে বলেন। এর মধ্যে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভুক্তভোগী নারীকে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাপও দেন তারিকুল। পরে স্বামী-সন্তান বাসায় না থাকার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময় তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন তারিকুল। এ সময় অজান্তে ওই নারীর বিভিন্ন গোপন ছবি এবং ভিডিও ধারণ করা হয়।
এদিকে তারিকুল ওসি পদে পদোন্নতির কথা বলে ভুক্তভোগী নারীর কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এরপর গোপনে ধারণ করা ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের ভয় দেখিয়ে আরও টাকা দাবি করেন। কিন্তু তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তারিকুলের সঙ্গে সম্পর্ক ও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এরপর বিভিন্ন সময় ফোনে ভুক্তভোগী নারীকে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাপ দিতে থাকেন তারিকুল।
গত ৪ আগস্ট স্বামী-সন্তান বাসায় না থাকার সুযোগে তারিকুল ব্ল্যাকমেইলিং করে ভুক্তভোগী নারীকে আবারও শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করেন। তারিকুল বেরিয়ে যাওয়ার সময় এসব বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিলে ছবি, ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়াসহ খুন করার হুমকি দেন ভুক্তভোগী নারীকে। এ সময় তারিকুলকে রাগান্বিতভাবে বেরিয়ে যেতে দেখে বাসার দারোয়ান ওই নারীর কাছে কী হয়েছে জানতে চাইলে তিনি সব খুলে বলেন। পরে স্বামী-আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করে বায়েজিদ থানায় মামলা করতে গেলে তারা আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। এরপর গত ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলার আবেদন করা হয় এবং গত ১৮ সেপ্টেম্বর মামলা গ্রহণ করেন আদালত।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নারী বলেন, কনস্টেবল তারিকুল আমাকে ফাঁদে ফেলে এসব কাজ করিয়েছেন এবং প্রতারণা করে আমার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গত বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) তার আরেক বন্ধুকে দিয়ে ফোনে আমাকে হত্যার হুমকি দেন। বর্তমানে আমি পরিবারসহ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।