Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৪ শনিবার, ডিসেম্বার ২০২৪ | ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

অভিনেত্রী শিমুর গলায় পা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন নোবেল

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৭:২৪ AM
আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৭:২৪ AM

bdmorning Image Preview


মোবাইল ফোন দেখাতে না চাওয়ায় বাধে কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি। এরপর স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেলের নির্দেশে বাসায় থাকা তার বাল্যবন্ধু এস এম ফরহাদ হোসেন মিলে দুজনে অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে নোবেল এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শিমুর গলায় পা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করেন। এরপর লাশ গায়েবের জন্য বস্তাবন্দী করে কেরানীগঞ্জ ফেলে আসেন নোবেল ও ফরহাদ। অভিনেত্রী শিমু হত্যা মামলার চার্জশিটে এসব ভয়ানক তথ্য উল্লেখ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম।

এ তদন্ত কর্মকর্তা সম্প্রতি ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার চার্জশিট জমা দেন। চার্জশিটে শিমুর স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল ও তার বন্ধু এস এম ফরহাদকে অভিযুক্ত করে আসামি করা হয়েছে। এ চার্জশিটের বিষয়ে আগামী ধার্য তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর শুনানি হবে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

মামলার চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, চলতি বছরের (২০২২ সাল) ১৬ জানুয়ারি সকাল সোয়া ৮টায় নোবেলের বাসায় যান তার বন্ধু ফরহাদ। এসময় ফরহাদকে ড্রইংরুমে বসতে দিয়ে নোবেলকে জানান শিমু। নোবেল গিয়ে ফরহাদের সঙ্গে দেখা করে রান্নাঘরে চা বানাতে যান। এদিকে বেডরুমে বসে মোবাইল দেখতে থাকেন শিমু। নোবেল আবার সেই মোবাইল দেখতে চান। কিন্তু শিমু দেখাতে অস্বীকৃতি জানান। এনিয়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। হইচই শুনে ফরহাদ উঠে শিমুর রুমে যান। তখন নোবেল ফরহাদকে বলেন, শিমুকে ধর, ওকে আজ মেরেই ফেলব। কথামতো ফরহাদ ধরতে গেলে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন শিমু। এরপর নোবেল প্রথমে শিমুর গলা ধরতে গেলে তাকেও ধাক্কা মেরে ফেলে দেন। এবার ফরহাদকে শিমুর গলা ধরার জন্য বলেন নোবেল। ফরহাদ গলা আর নোবেল দুই হাত চেপে ধরেন। একপর্যায়ে নিচে পরে যান শিমু। এরপর নোবেল শিমুর গলার ওপর পা দিয়ে দাঁড়ান। এতে প্রস্রাব করে দেন শিমু। এক সময় শিমু নিস্তেজ হয়ে পড়েন। এসময় নোবেল ফরহাদকে দেখতে বলেন শিমু বেঁচে আছে কি না। ফরহাদ শিমুর হাত দেখে বলেন, শিমু বেঁচে নেই।

চার্জশিটে আরো উল্লেখ করা হয়, শিমুর মৃত্যুর পর নোবেল ও ফরহাদ মরদেহ লুকানোর পরিকল্পনা করতে থাকেন। একপর্যায়ে নোবেল রান্নাঘর থেকে দুটি পাটের বস্তা এবং ফ্রিজের ওপর থেকে মিষ্টির প্যাকেট বাঁধার প্লাস্টিকের রশি আনেন। ফরহাদ শিমুর মাথা উঁচু করে ধরেন। আর নোবেল একটি বস্তার ভেতর শিমুর মাথার অংশ এবং আরেকটি বস্তায় পায়ের অংশ ভরেন। এরপর প্লাস্টিকের রশি দিয়ে দুটি বস্তা একত্রে সেলাই করে দেন নোবেল। পরে শিমুর মরদেহ নোবেলের গাড়ির পেছনের সিটে ওঠান ফরহাদ। এরপর কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন আলীপুর ব্রিজ এলাকার একটি ঝোপে মরদেহ ফেলে দেন তারা।

যেমন ছিল শিমু-নোবেলে দাম্পত্য জীবন: প্রেমের সম্পর্ক করে নোবেলের বাবা-মায়ের সম্মতি ছাড়া বিয়ে করেন তারা। তাই নোবেলের বাবা-মা আলাদাভাবে বসবাস করতে থাকেন। আর রাজধানীর গ্রিনরোডে বসবাস করেতেন নোবেল-শিমু করতেন। পরে তাদের দুই সন্তান হয়। তবে বিয়ের পর বিভিন্ন বিষয়ে মনোমালিন্য দেখা দেয় দুজনের। নোবেল শিমুকে সিনেমায় অভিনয়ে বারণ করেন। ফলে সিনেমা ছেড়ে বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন বাংলায় চাকরি নেন শিমু। কিন্তু এ চাকরিটাও ভালোভাবে নেননি নোবেল। এনিয়ে নোবেল ও শিমুর সংসারে চলে আসছিল কলহ। এই কলহের কথা নোবেল তার বাল্যবন্ধু ফরহাদের সঙ্গে শেয়ার করতেন। এছাড়া নোবেল মা-বাবার অবর্তমানে এবং বন্ধু ফরহাদের সঙ্গে মিশে কিছুটা উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপন শুরু করেন বলে চার্জশিটে বলা হয়।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি সকাল ১০টায় কেরানীগঞ্জ থানার হযরতপুর ইউপির আলীপুর ব্রিজের কাছে রাস্তার পাশ থেকে অভিনেত্রী শিমুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন বিকেলে অভিনেত্রী শিমুর ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় শিমুর স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল ও তার বন্ধু আব্দুল্লাহ ফরহাদকে আসামি করা হয়। তিনদিনের রিমান্ড শেষে তারা কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া তারা নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন। 

Bootstrap Image Preview