দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে বসবাসরত বাংলাদেশি সম্প্রদায় বসবাস করছে আতঙ্কে। এর কারণ, সম্প্রতি সেখানে বাংলাদেশি বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী মালিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অপহরণ করেছে অজ্ঞাত অপরাধী সিন্ডিকেট। অপহৃতদের মধ্যে শিশুও আছে। শুক্রবার সেখানে মিশেলস প্লেইনের ব্যবসায়ী মালিক আকতার প্রধানকে অপহরণ করা হয়েছে। এ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে স্থানীয় বাংলাদেশি সম্প্রদায়। এ খবর দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার অনলাইন আইওএল। শুক্রবার ৩৭ বছর বয়সী আকতার প্রধানকে অজ্ঞাত তিন ব্যক্তি অপহরণ করে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের লোকজন। এরপর থেকে পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করেছে। তারা সন্দেহজনকদের ট্রেসিং বা শনাক্ত করতে পেরেছে বলে জানানো হয়েছে। ওই ঘটনার একটি ভিডিও টুইটারে শেয়ার করেছেন ক্রাইম রিপোর্টার ইউসুফ আব্রামজি।
তাতে দেখা যায়, একজন ব্যক্তিকে হাত-পা ধরে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। মিশেলস প্লেইনের পুলিশ মুখপাত্র জোসেফ স্বারতবুই বলেছেন, অপহরণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ তদন্ত করছে। শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটের দিকে বাংলাদেশি একজন ব্যক্তি নিজে গাড়ি চালাচ্ছিলেন ওয়েসপোর্ট ড্রাইভ ধরে। এরপর তাকে অপহরণ করা হয়। সে ইস্যুতে তদন্ত চলছে। প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট বলছে, অজ্ঞাত অস্ত্রধারী তিন ব্যক্তি তার গাড়ি থামায়। ভিকটিম গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেই তাকে জোর করে তাদের গাড়িতে তোলা হয়। এরপরই তাকে সহ তাদের গাড়ি ঘটনাস্থল থেকে অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, অজ্ঞাত ওইসব সন্দেহভাজনকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। এ বিষয়ে কারও কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা ক্রাইম স্টপ সেল’কে ০৮৬০০১০১১ নম্বরে কল করে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। জোসেফ স্বারতবুই বলেন, আকতার প্রধান হলেন চিপার চিপস ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি’র মালিক। এটি মিশেলস প্লেইনের একটি পাইকারি বিক্রেতা স্টোর।
ওদিকে নাগরিক সংগঠন ওমেন অ্যান্ড চিলড্রেন অ্যাট কনসার্ন (ডব্লিউসিসি) বলেছে, বিদেশি ব্যবসায়ী মালিকদের অপহরণের ঘটনায় তারা উদ্বিগ্ন। এসব অপহরণ সেখানে এক ক্রমবর্ধমান অপরাধী প্রবণতা হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লড়াই করছে যেন পুলিশ। ডব্লিউসিসির সেক্রেটারি হাফিজ মোহাম্মদ বলেছেন, মাত্র এক মাসের মধ্যে মিশেলস প্লেইন থেকে কমপক্ষে ৪ জনকে এভাবে অপহরণ করা হয়েছে। এর ফলে বিদেশি এই সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক, ভয় দেখা দিয়েছে। কারণ, তারা জানেন না এর পরের শিকার তিনি বা তারা কিনা। তাছাড়া অপহরণকারীরা মুক্তিপণ হিসেবে কতো দাবি করে বসে, তা নিয়েও তারা চিন্তিত।
আকতার প্রধানের পরিবারের পক্ষে হাফিজ মোহাম্মদ বলেন, জুমার নামাজের পরপরই আকতারকে অপহরণ করা হয়েছে। এ সময় তার স্টোর থেকে রাইল্যান্ডসের বাড়িতে ফিরছিলেন। হাফিজ বলেন, আমরা নিশ্চিত নই যে, তাকে কোথায় নেয়া হয়েছে। এখন তার পরিবার মারাত্মক উদ্বেগে আছে, ভয়ে আছে। কারণ, এরকম অপহরণকারীরা প্রচুর অর্থ দাবি করে বসে। তারা মুক্তিপণের অর্থ না পেলে অনেক সময় মেরে ফেলে। এ পর্যন্ত অপহরণ করা হয়েছে ইসমাইল রাজা, শিরীন এসোপ, শাহনেওয়াজ আসগার এবং সর্বশেষ আকতার প্রধানকে।
সম্প্রতি সর্বশেষ অপরাধ বিষয়ক যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দেখা যায় এ বছর এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে ওয়েস্টার্ন কেপ থেকে অপহরণ করা হয়েছে কমপক্ষে ২৩৭ জনকে। হাফিজ বলেন, বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের অন্যদের যেমন চিনি, তেমনি আকতার প্রধানকেও চিনি। আমরা তার নিরাপদ মুক্তি দাবি করি। তাকে অপহরণে যারা জড়িত, আমরা আশা করি তাদের মুখোশ পুলিশ উন্মোচন করবে। শুধু অপহরণকারী নয়, একই সঙ্গে বিদেশি মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং স্টক ডেলিভারিতে ডাকাতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরও মুখোশ উন্মোচন দাবি করি আমরা। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি সিগারেট ডেলিভারি দেয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে সব কেড়ে নেয়া হয়েছে। এ ভাবে তারা প্রচুর অর্থ লুটে নিচ্ছে।
আগস্টের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে দুই ট্রাক সিগারেট ছিনতাই করা হয়েছে ব্রুকলিন এবং রাইল্যান্ডসে। পুলিশ বলেছে, তারা এখনো তদন্ত করছে। ওদিকে আকতার প্রধানকে অপহরণের নিন্দা জানিয়েছে মিশেলস প্লেইন কমিউনিটি পুলিসিং ফোরাম। তারা বলেছে, এতেই দেখা যায় যে, সম্প্রতি বিদেশি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কীভাবে অপহরণ, ছিনতাই হচ্ছে। মিশেলস প্লেইনের সিপিএফ চেয়ারপারসন নরম্যান জানটজিস বলেন, মিশেলস প্লেইনে এটাই প্রথম এমন অপরাধ নয়। এমন আরেকটি ঘটনা সম্পর্কে আমি জানি। সেটাও একজন বিদেশি নাগরিককে অপহরণের। এসব অপহরণের নেপথ্য কারণ জানি না আমরা। তবে সাধারণত এসবের সঙ্গে জড়িত থাকে মুক্তিপণ আদায়কারী একটি চক্র। এই এলাকায় এই সমস্যা বাড়ছে। এ জন্য আমরাও উদ্বিগ্ন। এতে শুধু নিয়মিত অধিবাসীরাই সমস্যায় পড়ছেন এমন নয়। একই সঙ্গে গাড়ি ছিনতাইও অধিক থেকে অধিক কমন একটি বিষয় হয়ে উঠেছে। এর শিকার শুধু ব্যবসায়ী মালিকরাই নন, আমাদের অধিবাসীরাও।