Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৪ শনিবার, ডিসেম্বার ২০২৪ | ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

দেশে ডলার সংকটের জড়িত ১৩টি মানি চেঞ্জার্স

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ আগস্ট ২০২২, ০৫:৪১ AM
আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২২, ০৫:৪১ AM

bdmorning Image Preview


ডলার সংকটের সুযোগ নিয়ে ১৩টি মানি চেঞ্জার্স প্রতিষ্ঠান সরাসরি হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। মানি চেঞ্জার্সের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানগুলো বেআইনিভাবে বেশি দামে নগদ ডলার কিনে সেগুলো মজুত করেছে। এভাবে বাজারে সংকটের মাত্রা বাড়িয়ে লাগাম ছাড়া দাম বাড়িয়ে ডলার বিক্রি করেছে। এক্ষেত্রে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে পাসপোর্টে বৈদেশিক মুদ্রা এনডোর্স করেনি। এমনকি ডলার কেনাবেচার কোনো তথ্য রেজিস্টারেও লিপিবদ্ধ করেনি। অর্থাৎ হুন্ডির মাধ্যমে তারা ডলার কিনেছে। একই সঙ্গে হুন্ডির মাধ্যমে বিক্রিও করেছে।

এদিকে এ চক্রের বিরুদ্ধে ডলার পাচারের আরও ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে। বেআইনিভাবে ডলার মজুত করে তা কতিপয় ব্যবসায়ীর কাছে সরবরাহ করেছে। পরে যেগুলো হুন্ডি সিস্টিমে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) পরিচালিত একটি বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে খোলা বাজারে নগদ ডলারের দাম পাগলা ঘোড়ার গতিতে বেড়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে বিএফআইইউ মানি চেঞ্জার্স প্রতিষ্ঠানগুলোতে তদন্ত শুরু করে। এর আগে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তাদের কাছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম পাঠানো হয়। যেগুলো হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহের তালিকায় ছিল। সেই তালিকা ধরে বিএফআইইউ তদন্ত করে ১৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হুন্ডির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে। বিএফআইইউ মানি লন্ডারিংবিষয়ক ঘটনাগুলো তদন্ত করে থাকে।

সূত্র জানায়, বিএফআইইউর পরিদর্শক দল অভিযুক্ত ১৩টি প্রতিষ্ঠানে সরেজমিন গিয়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ের তদন্ত শেষ করে এখন প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সুনির্দিষ্টভাবে তাদের অপরাধ চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্প্রতি খোলা বাজারে ডলারের দাম বেড়ে সর্বোচ্চ ১২১ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। এর আগে এক দফা ১০৪ টাকায় উঠে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও ডিবি পুলিশ খোলা বাজারে তদন্ত শুরু করলে ডলারের দাম ১০০ টাকার নিচে চলে আসে। এরপর গত মাসে আবার তা বেড়ে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। একদিনের ব্যববধানে খোলাবাজারে ডলারের দাম ১০৬ টাকা থেকে বেড়ে ১১২ টাকায় উঠে। তখন ওইসব সংস্থা আবার তদন্ত শুরু করলে এর দাম কমে ১০৬ টাকায় নেমে যায়। বৃহস্পতিবার ডলারের দাম ফের বেড়ে ১২১ টাকায় উঠে। অপরদিকে ব্যাংকেও নগদ ডলারের দাম বেড়ে সর্বোচ্চ ১০৯ টাকায় উঠেছে। যদিও আমদানির জন্য ডলার বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা দরে।

২৭ জুলাই নগদ ডলারের দাম খোলা বাজারে ১০৮ টাকায় উঠলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এনএসআই ও ডিবি তদন্ত শুরু করে। একই সঙ্গে বিএফআইইউ থেকেও তদন্ত শুরু হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্ত করে ইতোমধ্যে ৫টি মানি চেঞ্জার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিত করেছে। কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ৪২টি প্রতিষ্ঠানকে। ১৫টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠিও পাঠিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা বেচাকেনা সহজ করতে মানি চেঞ্জার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা এখন আইনের বাইরে চলে গেছে। যে কারণে এদের নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর অবস্থান নিয়েছে। নিয়মনীতি লঙ্ঘনের দায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা নিচ্ছে। যেগুলো লাইসেন্স ছাড়া বেআইনিভাবে ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। এর বাইরে যেগুলো মানি লন্ডারিংয়ের মতো গুরুতর অপরাধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে বিএফআইইউ ব্যবস্থা নিচ্ছে। এদিকে বিএফআইইউ থেকে যে ১৩টি প্রতিষ্ঠানে তদন্ত করা হয় এগুলোর সবকটিই ঢাকার মতিঝিল, দিলকুশা, পল্টন ও গুলশান এলাকার। এসব প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন থেকে বেআইনিভাবে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করে আসছে। তারা প্রথমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিয়েছিল। পরে তাদের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও আর নবায়ন করেনি। এর ফলে তারা প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বেআইনিভাবে ব্যবসা করছে। লাইসেন্স না থাকায় তারা ডলার বেচাকেনার কোনো তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দিত না। এমন কি তাদের কোনো জবাবহিদিতাও ছিল না। অর্থাৎ যাদের মনিটরিং করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল, তারা সেটি করেনি।

এ বিষয়ে গ্লোরী মানি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি একেএম ইসমাইল হকের বক্তব্য জানার জন্য মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি মেসেজ পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

সূত্র জানায়, বিএফআইইউর পরিদর্শক দল সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর রেজিস্টার বুক অনুসন্ধান করে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে নগদ ডলার জমা রাখার মিল পায়নি। নিয়মানুযায়ী মানি চেঞ্জার্স প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব ডলার কেনাবেচা করবে তার একটি তালিকা রেজিস্টার বুকে লিপিবদ্ধ থাকবে। এর ভিত্তিতে ভল্টে নগদ ডলার জমা থাকবে। কিন্তু এদের ক্যাশ রেজিস্টারে জমা ডলারের কয়েকগুণ বেশি ডলার ভল্টে পাওয়া গেছে। তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনত। ফলে গ্রাহকরা তাদের কাছেই যেত। এটি জানার পর অন্যান্য অন্য মানি চেঞ্জার্সগুলোও একই পথ অনুসরণ করে তাদের মতো বেশি দামে ডলার কেনাবেচা করেছে। পুরো চক্রটি এভাবে বাজারে ডলারের দাম বাড়িয়েছে।

এছাড়া ডলার কিনলেও তারা সেগুলো বিক্রি করে বাজরের স্বাভাবিক ফ্লো ঠিক রাখেনি। বরং বেশি মুনাফার জন্য জমিয়ে রেখে কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে ওইসব ডলার বিক্রি করেছে। ডলার কেনার জন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আগাম অর্থ নেওয়ার প্রমাণও মিলেছে। ওইসব অর্থে নগদ ডলার কিনে মজুত করেছে। পরে সেগুলো দেশ থেকে পাচার হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেননা ওইসব ডলার তারা কোথায় কিভাবে বিক্রি করেছে তার কোনো তথ্য লিখিত আকারে পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে কোনো মানি চেঞ্জার্স শাখা খুলতে পারে না। অথচ ওই ১৩টি প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটি ঢাকায়ই ১০টি বেশি শাখা খোলার নজির রয়েছে। এর বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বেনাপোলেও শাখা খুলে তারা চড়া দামে ডলার সংগ্রহ করত।

জানা গেছে, দেশে ২৩৫টি বৈধ মানি চেঞ্জার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু অবৈধভাবে রয়েছে ১ হাজার ২০০টির বেশি। যেগুলো নিয়ে এখন তদন্ত হচ্ছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এতদিন অবৈধভাবে বিপুলসংখ্যক মানি চেঞ্জার্স কিভাবে কাদের সহায়তায় চলেছে সেটিই বড় প্রশ্ন।

সূত্র: যুগান্তর

Bootstrap Image Preview