Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৬ সোমবার, মে ২০২৪ | ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

তুমি এসেছিলে বলেই জাতি আজ উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২২, ১২:৪২ AM
আপডেট: ১৮ মে ২০২২, ১২:৪২ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


ড. প্রভাষ কুমার কর্মকার ।। বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশ। সমগ্র বিশ্ববাসীর চোখে এ দেশ এখন ‘উন্নয়নের রোল মডেল’। এই অভূতপূর্ব সাফল্যের একমাত্র কারিগর দেশরত্ন শেখ হাসিনা। তিনি তাঁর সততা, নিষ্ঠা এবং মননে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও প্রেরণাকে ধারণ করে অনেক চড়াই-উতরাই ও নানা ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত মোকাবেলা করে জনকল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করে চলেছেন।

তাঁর এই মানবকল্যাণ ভাবনা, কর্মোদ্দীপনা যেন তারুণ্যের শক্তির মতোই। পরিশীলিত নিষ্ঠাবান এই নেতার মননে শুধুই বাংলাদেশের উন্নয়ন ভাবনা। কিভাবে দেশের কল্যাণ বজায় রাখা যায়, কিভাবে জনগণের ক্ষমতায়নের পথকে ত্বরান্বিত করা যায়? দেশকে ঘিরে অনন্যসাধারণ বিশ্বনেতা দেশরত্ন শেখ হাসিনার ভাবনা যে কত তীক্ষ্ণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, একটু তালাশ করলেই তার অসংখ্য প্রমাণ মেলে।

ভারতের ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি সম্মানসূচক ডি. লিট ডিগ্রি প্রদান করা হয়―সেই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণে তিনি বলেন, “‘জনগণের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন মডেল’-এর ছয়টি পরস্পরনির্ভর স্তম্ভ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে―ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচন, বৈষম্য দূরীকরণ, বঞ্চনা নিবারণ, ঝরে পড়া জনগোষ্ঠীর মূলধারায় অন্তর্ভুক্তি, মানবসম্পদের উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণ এবং সন্ত্রাসবাদের মূলোৎপাটন। ” এগুলো তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন―দেশের উন্নয়নকল্পে তিনি ভিশন-মিশন নির্ধারণ করেছেন, তারই বাস্তবায়িত রূপ আজ ‘বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল’।

ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে কাজ করে চলেছেন। রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার ওপর জঘন্যতম গ্রেনেড হামলা করা হয়, আর হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে অসংখ্যবার। ২০০৮-এর সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে অদ্যাবধি শেখ হাসিনা সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলেও তিনি কখনোই প্রতিশোধের অনল জ্বালেননি কিংবা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এরূপ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রশ্রয় দেননি।

বিশ্বের সর্বস্তরের নেতাদের কাছে স্বীকৃত বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন শুধু কথার কথা নয়, এটি তথ্য-উপাত্তের নিরিখে পরিসংখ্যানিক বিশ্লেষণে প্রমাণিত। যে সত্যের জাগ্রত সাক্ষ্য আজ বাংলাদেশ ও বাঙালির দ্বারে কড়া নাড়ছে, যার সত্যাসত্য বিচারে বিশ্ববাসীও উল্লসিত, তা নিয়ে প্রকৃতপক্ষেই সাদা চোখে কিছুটা বিচার-বিশ্লেষণের অবকাশ রয়েছে। হয়তো তাতে দেশের জ্ঞানপাপীদের কোনো উন্নতি বা পরিবর্তন হবে না, তবে যা-ই হোক না কেন তারুণ্যের গতিশক্তি অনেকাংশেই বৃদ্ধি পাবে। এই কঠিন সত্যের প্রেক্ষাপট কিংবা আজকের অবস্থানে পৌঁছনো ও ঝঞ্ঝামুক্তির উৎস শক্তির ইতিহাস এই প্রজন্মকে বরং সহযোগিতাই করবে। কিভাবে আলোর সন্ধান করতে হয়, সেই বিষয়ে জ্বলন্ত প্রমাণ হয়তো এ দেশের তারুণ্যকে আরো গতিশীল করবে এবং অনুসন্ধিৎসু মনের বাতায়ন খুলতে সহায়ক হবে।

সংক্ষিপ্ত পরিসরের কারণে উন্নয়নসংশ্লিষ্ট পরামিতিগুলো শুধু মোটাদাগে দেখাতে চাই―১. বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আজ বেশ শক্ত, এ শুধু মুখের কথা নয়। ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে এমন বেষ্টনী তৈরির কথা কেউ কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি। জাতির পিতা স্বাধীনতার পর দেশের ভূমিহীন-গৃহহীন, ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করেন এবং তিনি সংবিধানের ১৫(ক) অনুচ্ছেদে দেশের প্রতিটি নাগরিকের বাসস্থান পাওয়ার অধিকারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেন। সে পদাঙ্ক অনুসরণ করে জননেত্রী শেখ হাসিনা গৃহহারাদের গৃহের ব্যবস্থা করতে শুরু করেন। ক্ষুদ্রায়তনের জাতিরাষ্ট্র, বাংলাদেশ সীমিত সম্পদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে বুদ্ধিমত্তা, নিজস্বতা ও সঠিক পরিকল্পনা দিয়ে ঠিক উন্নত বিশ্বের মতো করে, ক্ষেত্রবিশেষে তাদের চেয়ে একটু বেশি সুন্দরভাবেই তিনি এই বলয় তৈরি করছেন। গৃহহীন অসহায় মানুষের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছা অনুযায়ী গৃহনির্মাণ করে জমির মালিকানা দলিলসহ তাদেরকে হস্তান্তর করা হচ্ছে। ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্পের আওতায় এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত মোট পাঁচ লাখ সাত হাজার ২৪৪টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে এবং এ প্রকল্প চলমান রয়েছে। এমন নজির উন্নত বিশ্বেও কতটা মিলবে তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। বাংলাদেশ এখন বিধবা/স্বামী পরিত্যক্তা, বয়স্ক ভাতা, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিচ্ছে, দিচ্ছে অসচ্ছল পরিবারকে সহায়তা।

২. দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে মজবুত―এটি কিন্তু শুধু মুখের বুলি নয়, এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং ডকুমেন্টেড একটি বিষয়। যার মধ্যে আমাদের বৈদেশিক রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, বৈদেশিক রিজার্ভ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি উল্লেখযোগ্য।  

৩. ভৌত অবকাঠামোগত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন বাংলাদেশকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। আজকের বাংলাদেশ তথা বিশ্ববাসীর কাছে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যয়চিত্র, পরিকল্পনা ও বাস্তবসম্মত আকাঙ্ক্ষার যথার্থতা মিলেছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে সরকারের ঘোষণা মোতাবেক আগামী জুন মাসেই স্বপ্নের ‘শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু’ দক্ষিণবঙ্গের সাথে রাজধানীসহ সারা দেশের সরাসরি যোগাযোগ বাতায়ন অবারিত করবে। দেশের অর্থনীতি গতিশীল হবে। এই পদ্মা সেতু নিয়ে কুচক্রী মহল ধড়িবাজি করেছিল―কিভাবে স্বপ্নের সেতু বাস্তবায়নে প্রথমেই বাধা দেওয়া যায়? ওই মহলটি কিন্তু প্রাথমিকভাবে সফলও হয়েছিল, তারা সেদিন বিশ্বব্যাংকে যেভাবেই হোক তাদের মতো করে ভুল তথ্য-উপাত্তযোগেই হোক অথবা অন্য কোনো হেতুতেই হোক দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে পেরেছিল। সে কারণে এখানে কোনো অর্থ বিনিয়োগের আগেই বিশ্বব্যাংক বলেছিল, ‘পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে’। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে আন্তর্জাতিক আদালতেই তা ভুল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। আর তৎক্ষণাৎ দেশরত্ন শেখ হাসিনা তাঁর আত্মপ্রত্যয়ী ঘোষণা দিয়েছিলেন―বলেছিলেন, এই পদ্মা সেতু আমরা বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নেই করব। সত্যি সত্যিই সেই মাহেন্দ্রক্ষণের দেখা মিলতে চলেছে, বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনালোকে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অগ্রযাত্রার মাইলফলক আমরা স্পর্শ করতে চলেছি। বাঙালি প্রাণখুলে নিঃশ্বাস নেবে এবং যত দিন বেঁচে থাকে তত দিন এমনতর অর্জনের সক্ষমতা ও সফলতা আমরা অর্জন করেছি এই বিষয়টি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করে নিজস্ব শক্তিকে তারা আরো বিকশিত করবে প্রজন্ম পরম্পরায়। এই বাংলাকে বিকশিত করার জন্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশকে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নত আধুনিক বাংলাদেশে রূপায়ণের লক্ষ্যে সকলেই এক হয়ে কাজ করে যাবে।

কেউ কি কখনো ভেবেছিল যে ঢাকা শহরে মেট্রো রেল হবে? সেই মেট্রো রেল আজ পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল শুরু করেছে। সুতরাং এই প্রকল্পটিও সফল। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল―এই চিন্তাটিও বাঙালির মনে কখনো ছিল?  উত্তর আসবে, অবশ্যই না। আর সমালোচকরা তো ব্যস্ত সব সময় সমালোচনা নিয়ে, নিজস্ব আখের গোছানো নিয়ে―সে প্রমাণ তারা অতীতেও রেখেছে বহুবার, বহুমাত্রিক উপায়ে। সুতরাং ওদের চিন্তা কখন, কিভাবে বঙ্গবন্ধু পরিবার তথা বঙ্গবন্ধুকন্যাকে এবং স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তিকে আঘাত হানা যায়? সর্বোপরি স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মুছতে চায় সব সময়। তাইতো এ জাতির সমস্ত অর্জনকে ভূলুণ্ঠিত করতে কদর্যে পূর্ণ অশনি চক্র জাতিরাষ্ট্রের স্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বুলেটের আঘাতে বর্বরোচিতভাবে লোমহর্ষক কায়দায় শহীদ করেছিল ১৫ই আগস্ট সংঘটিত করার মধ্য দিয়ে। বাঙালির এই ব্যথাতুর আর্তি ও দুর্বিষহ যন্ত্রণা এবং রক্তক্ষরণ সমগ্র বিশ্ববাসীকে আজও হতবাক করে।   

আওয়ামী লীগ সরকার তথা শেখ হাসিনা সরকারের আমলে রেলপথ সম্প্রসারিত হয়েছে। দেশে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ও পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজও প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এখন ভূ-উপগ্রহে। এই সিদ্ধান্তগুলোর পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন হয়েছে  জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ নেতৃত্বেই। অর্থনৈতিক জোন তৈরি হয়েছে এবং কিছু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দেশে আইসিটি পার্ক তৈরি হয়েছে, প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ভার্চুয়াল ল্যাব। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই ল্যাবের সুবিধা পাচ্ছে, যা অতীতে কখনো ভাবেনি। সড়ক ব্যবস্থাপনাতে উন্নয়ন ঘটেছে, বিভিন্ন মহাসড়কে চার/ছয় লেন রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই সম্পন্ন হয়েছে। নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ হয়েছে। গ্রামের মানুষ এখন কাঁচা রাস্তা নামটি ভুলতে বসেছে।

বঙ্গবন্ধুও  গ্রামের উন্নয়নসহ সমগ্র দেশের উন্নয়ন চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘একটি সম্প্রসারিত কর্মসূচি বাস্তবায়িত করে গ্রামে গ্রামে বিজলি সরবরাহ করতে হবে। এর দ্বারা পল্লি অঞ্চলে ক্ষুদ্রায়তন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারে। ’ পিতার মতো তাঁর কন্যাও দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি কোনো অনুদানমূলক বা প্রতিশুতপূর্ণ উন্নয়ন নয়, ‘টোটাল’ বা ‘সামগ্রিক’ উন্নয়ন চাই। ” তিনি সমগ্র দেশের উন্নয়ন একসাথে শুরু করেছেন, যার কারণে আমরা দেখতে পেয়েছি যে মঙ্গাপীড়িত উত্তরবঙ্গের মানুষ এখন মঙ্গা বলে কোনো শব্দ আছে তাই বলতে পারে না। তিস্তাপারে তৈরি হচ্ছে সিঙ্গাপুরের আদলে ব্যবসায়ী জোন, পর্যটনকেন্দ্র। সমগ্র দেশকে এখন বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। সুতরাং এটিও সুষম উন্নয়নচিহ্ন নিশ্চিত করে। তবে একটি কথা বলে রাখা ভালো যে, দেশে একসময় অসম উন্নয়ন ছিল অর্থাৎ যারা শাসনক্ষমতায় থেকেছেন তাঁরা নিজ এলাকার প্রাধান্য দিয়েছেন।

জননেত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনাতেই বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য অনেক অনেক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ঘরে বসেই আমাদের সন্তানেরা, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যারা লেখাপড়া করে তারা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারছে টেকনোলজির উন্নয়নের কারণেই। বাংলাদেশের ডিজিটাল উন্নয়ন ঈর্ষণীয় হয়েছে সারা বিশ্বের কাছে। অথচ যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা এসেছিল শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের মাধ্যমে ঠিক তখন থেকে যেভাবে গ্রামে-গঞ্জে-শহরে তথাকথিত একদল মানুষ নিজস্ব কারণে অথবা সুবিধার জন্যই হোক আর আওয়ামীবিরোধী হওয়ার কারণেই হোক, পদে পদে এ দেশের প্রতিটি মানুষকেই তারা কটাক্ষ করেছে। সময় জিজ্ঞেস করলে তারা বলত, ডিজিটাল সময় বলব না স্বাভাবিক সময়! ওজনের কথা এলেই তারা বলত, ডিজিটাল ওজন নাকি? কিন্তু খুব অবাক লাগে যখন দেখা যায় সে মানুষগুলোই বর্তমান ডিজিটাইজেশন সেবা―থ্রিজি, ফোরজি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আর মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে চোখের নিমেষেই আবারও সরকারের সমালোচনা করার উপাদান খোঁজে ওই সেবার আওতায়। এখনো নির্লজ্জভাবে তাচ্ছিল্যে ভরপুর হয়। বাঙালিরা সম্পূর্ণ ডিজিটাল বাংলাদেশের নাগরিক সুবিধা নিচ্ছে―খাজনা, ব্যাংকিং, টেন্ডার সমস্ত কিছু তথ্য আদান-প্রদান করা, বৈদেশিক রেমিট্যান্স পাঠানো, তা গ্রহণ করা সব কিছুতেই আজ ডিজিটাইজেশনের ছোঁয়া লেগেছে। তার বড় প্রমাণ করোনাকালীন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমেই হয়েছে―করোনাকালীন আমাদের দৈনন্দিন সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া সমস্ত কিছুই এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সম্পন্ন হয়েছে। Nikkei COVID-19 Recovery Index অনুযায়ী করোনাভাইরাস সামলে ওঠার ক্ষেত্রে সফলতার তালিকায় দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম এবং সারা বিশ্বের মধ্যে এই সফলতায় পঞ্চম।

বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সক্ষমতা, গ্লোবাল মার্কেটিংয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব, মেধা বিকশিত করা এসব আসলে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেই সুফল। এই ডিজিটাইজেশনের জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছেও কৃতজ্ঞ। শেখ হাসিনার মেধা ও দক্ষতায় এমডিজি গোলসমূহ অর্জিত হয়েছে, এসডিজি গোলসমূহ অর্জনের একেবারেই দ্বারপ্রান্ত। তাঁরই বিচক্ষণতায় ঋণগ্রহীতার অপবাদ আমাদেরকে আর তাড়িত করে না বরং আমরা ঋণ প্রদান করি। সুতরাং দিন বদলেছে―যুক্তরাজ্যভিত্তিক সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) কর্তৃক প্রজেকশন অনুযায়ী ২০৩৩ সালেই বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতির দেশের মর্যাদা লাভ করবে।

ভারতের সাথে দেশের সমুদ্র সীমানাতে বিজয় অর্জিত হয়েছে, সিটমহল বিনিময় সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়াও দেশের মধ্যে পার্বত্য এলাকায় শান্তিচুক্তির কারণে জনজাতি ও বাঙালিদের মধ্যে সুসম্পর্ক বিরাজ করছে।

যে ভাষার অধিকার রক্ষায় জাতি ১৯৫২ সালে রক্ত দিয়েছে, বঙ্গবন্ধু কারাগারের অভ্যন্তরে একটানা ১২ দিন অনশন করেন এবং তিনি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন ভাষার লড়াইয়ে জিততে সেই ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি আদায় করেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বের একমাত্র জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের মানুষের প্রিয় বাংলা ভাষা বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় ভাষাগুলোর মর্যাদা সমুন্নত রাখতে অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ। একুশে ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্ববাসী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করছে, সেই পাকিস্তানিরাও প্রিয় বাংলা ভাষাকে শ্রদ্ধা দেখায়, এই দিবস পালন করে।

রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠা পেয়েছে, ক্ষতবিক্ষত পবিত্র সংবিধানকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বাঙালির মুক্তি মিলছে। তবু সংস্কার আর উন্নয়নের অনেক পথ বাকি। তবে দুঃখের সাথেই বলতে হয়, ১৯৯৬ নির্বাচনে জয়লাভের পরই বঙ্গবন্ধুকন্যাকে যদি ২০০১-এর নির্বাচনে কারচুপির ছক কষে হারানো না হতো তবে ইতিমধ্যে আমরা উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরো সামনে যেতে পারতাম।

তবে যা-ই হোক, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পর উন্নত বিশ্বের যাদেরকে বলতে শোনা গেছে―এটি একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্র, তলাবিহীন ঝুড়ি, যাদের শঙ্কা ছিল এই দেশটি হয়তো দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারবে না, তারাই আজ বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

নিজের জীবন বাজি রেখে দেশকে রক্ষা করার শঙ্কা এবং অবহেলিতের রক্ষা করার শঙ্কা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার দূরদর্শী বিশ্বনেতা জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরেছিলেন বলেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের এই উন্নয়নচিত্র আজকে উর্বীতলে বাঙালিকে আশান্বিত করছে। সেই উন্নত বাসনার ধারক দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্বদেশে শুভাগমন দিবস আজ মহিমামণ্ডিত হচ্ছে তাঁরই সুদূরপ্রসারী ভিশন-মিশন, রূপকল্প ২০৪১ ও ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যানের মাধ্যমে। উন্নত ও সমৃদ্ধায়ন আধুনিক বাংলাদেশের শুভ সূচনাক্ষণে আলোক অভিসারী বাঙালির গর্বের পুরোধা ব্যক্তিত্ব জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশে শুভাগমন দিবসে ১৭ কোটি মানুষের পক্ষে উষ্ণ অভিনন্দন ও শুভ কামনা। হে বাঙালির লক্ষ্যভেদের অগ্রনায়ক, সেদিন তুমি এসেছিলে বলেই জাতি আজ উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর। হে দেশমাতৃকার প্রাণ, তুমি শতায়ু পার করেও আমাদেরকে সমৃদ্ধ করো―তারুণ্যের এই প্রত্যাশায় আজ প্রতিটি বাঙালিই জাগ্রত। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। জয়তু শেখ হাসিনা।

লেখক : অধ্যাপক, পরিসংখ্যান বিভাগ ও সাবেক প্রশাসক, জনসংযোগ দপ্তর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং সভাপতি, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

Bootstrap Image Preview