সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের শেষ জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নগরীর ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে দুপুর ২টার দিকে অনুষ্ঠিত জানাযায় হাজারও মানুষ অংশ নেন। এতে ইমামতি করেন মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রয়াত মুহিতের মরদেহ জানাযার জন্য আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নিয়ে আসা হয়। নগরীর রায়নগরে পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে।
জানাযার পূর্বে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন প্রয়াতের পরিবারের পক্ষে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিতের জীবদ্দশায় অসাবধানতাবশত ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে প্রয়াতের জন্য দোয়া কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমার বড়ভাই সারাজীবন মানুষের জন্য কাজ করেছেন। এ সময় কারও মনে তিনি অসাবধানতাবশত কষ্ট দিয়ে থাকলে আপনারা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। তার কোনো দেনা থাকলেও তাও পরিশোধ করা হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ভাই হারিয়েছি, আর জাতি সম্পদ হারিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমার বড় ভাইকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছিলেন, এজন্য আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’ এসময় প্রয়াতের বড় ছেলে সাহেদ মুহিতসহ পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ জানাযায় অংশ নেন।
জানাযার পূর্বে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনের পরিচালনায় অনুভূতি প্রকাশ করেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, বন ও পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এমপি, সিলেট-৫ আসনের এমপি হাফিজ আহমদ মজুমদার, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক, হবিগঞ্জ-২ আসনের এমপি আব্দুল মজিদ খান, মৌলভীবাজার-৪ আসনের এমপি উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, সিলেট-২ আসনের এমপি মুকাব্বির খান, সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন।
শনিবার সাবেক অর্থমন্ত্রীর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর গুলশান আজাদ মসজিদে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাযার পর সড়কপথে তার মরদেহ সিলেটে নিয়ে আসা হয়। শনিবার রাত ১০টার দিকে সিলেটে আনার পর রাতে নগরীর ধোপাদিঘীরপাড়ের পারিবারিক বাসা হাফিজ কমপ্লেক্সে রাখা হয়।
রোববার দুপুর ১২টায় নগরীর ধোপাদিঘীরপাড়ের বাসা হাফিজ কমপ্লেক্স থেকে সাবেক অর্থমন্ত্রীর মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়। সেখানে মহানগর পুলিশের একটি চৌকস দল ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করা হয়। এরপর প্রয়াতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সর্বশেষ সর্বস্তরের মানুষ প্রয়াতের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শুক্রবার রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন মুহিত। তিনি ক্যান্সারসহ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ (সদর-নগর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন। এই সময়ে তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে দেশের সবচেয়ে বেশিবার বাজেট প্রণয়নের রেকর্ড গড়েন। ‘আলোকিত সিলেট’ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে অবসর নেন।