ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি আলোচনার টেবিলে থাকা এক ব্যক্তিকে কিয়েভে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ইউক্রেনিয়ান সিকিউরিটি সার্ভিসের এজেন্টরা শনিবার রাজধানী কিয়েভে মাথায় গুলি করে তাকে হত্যা করেছে বলে জানা গেছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা অভিযান চলমান অবস্থায় ইতোমধ্যে দুই দফা আলোচনায় বসেছে দুই ক্রেমলিন ও কিয়েভ। সোমবার প্রথম দফা আলোচনায় তেমন কোনো অগ্রগতি জানা না গেলেও বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফা আলোচনায় কিছু আপাত স্বস্তির খবর ছিল। আর এসব আলোচনায় ডেনিস কিরিভ উপস্থিত ছিলেন।
ইউক্রেন-বেলারুশ সীমান্তে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফা আলোচনায় বেসামরিক লোকজনকে নিরাপদে ইউক্রেন ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে মানবিক করিডরসহ তিন দফা সিদ্ধান্ত আসে। রাশিয়ার পক্ষ থেকেও এই প্রস্তাবে সম্মতির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। যদিও পরবর্তী সময়ে রাশিয়া সেই কথা রাখেনি। ইউক্রেনে গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে পুতিনের বাহিনী।
সূত্রের উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা আরটির প্রতিবেদনে জানানো হয়, কিয়েভ-ক্রেমলিন শান্তি আলোচনা আয়োজনে ভূমিকা রাখা ডেনিস কিরিভ শনিবার কিয়েভে গুলিতে নিহত হয়েন। ইউক্রেনের সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্টরা শনিবার কিয়েভে তাকে গ্রেপ্তারের সময় মাথায় গুলি করে হত্যা করে। বেলারুশে অনুষ্ঠিত রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বৈঠকে আলোচনার টেবিলে দেখা গিয়েছিল কিরিভকে।
ডেনিস কিরিভ নিহত হওয়ার খবরটি প্রথম প্রকাশ্যে আনেন ইউক্রেনের বিতর্কিত এমপি ও সাংবাদিক আলেকজান্ডার দুবিনস্কির। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে তিনি দাবি করেন, কিরিভকে গ্রেপ্তার করার সময় ইউক্রেনিয়ান সিকিউরিটি সার্ভিসের এজেন্টরা হত্যা করেছে।
সংবাদমাধ্যমেও খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মিডিয়া আউটলেট Ukraina.ua এবং Obozrevatel এই খবর নিশ্চিত করলেও এর উৎস হিসেবে বেনামি সূত্রের উল্লেখ করেছে।
মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরের সঙ্গে কিছুটা অস্পষ্ট একটি ছবি প্রকাশ করে দাবি করা হয়েছে এটি ডেনিস কিরিভের মরদেহ। ছবিতে দেখা যাচ্ছে ফুটপাতে এক ব্যক্তি চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন। তার মুখের পাশ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে নামছে। এ ঘটনায় শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ইউক্রেনীয় রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক আনাতোলি শারিজ কথিত এ ঘটনার আরও নাটকীয় বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, কিয়েভের একটি আদালতের কাছে কিরিভকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়।
সোমবার রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার প্রথম দফা বৈঠকে ইউক্রেনের অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনার টেবিলের একেবারে ডান দিকে বসে থাকা কিরিভের ছবি দেখা গেছে। এই আলোচনায় অংশ নিতে ইউক্রেন ছয় প্রতিনিধির যে তালিকা প্রকাশ করে তাতে অজ্ঞাত কারণে কিরিভের নাম ছিল না। ফলে ওই আলোচনা অনুষ্ঠানে তার অবস্থানটাও অস্পষ্ট রয়ে গেছে।
ইউক্রেনীয় টিভি চ্যানেল-ফাইভ দাবি করেছে, কিরিভের বিরুদ্ধে রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার অভিযোগ ছিল। ইউক্রেনিয়ান সিকিউরিটি সার্ভিস (এসবিইউ) ২০২০ সাল থেকে ওই অভিযোগের তদন্ত করছিল। কিন্তু এসবিইউর উচ্চপর্যায়ে কিরিভের ব্যক্তিগত যোগাযোগ থাকায় সেই তদন্ত মাঝপথেই থেমে যায়।
তবে এ তথ্যও কতটা বস্তুনিষ্ঠ, তা-ও নিশ্চিত করে বলা কঠিন। কারণ চ্যানেল-ফাইভ টিভি চ্যানেলটির মালিক ইউক্রেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেঙ্কো। ফলে এটি উদ্দেশ্যমূলক নেতিবাচক প্রচারণার অংশ কি না, তা নিয়ে আছে প্রশ্ন।