কোনো ঘোষণা ছাড়াই রাশিয়া ও ইউক্রেনের আলোচনা শেষ হয়েছে। সোমবার বেলারুশ সীমান্তে আলোচনা শেষে দুই পক্ষই পরামর্শের জন্য তাদের রাজধানীতে ফিরে গেছেন বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইল পোডোলিয়াক।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য দুই পক্ষই আরেক দফা আলোচনায় বসতে পারে।
এর আগে যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। স্থানীয় সময় বেলা ১টায় বেলারুশের গোমেল অঞ্চলে এ আলোচনা শুরু হয়।
দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শেষে মিখাইল পোডোলিয়াক বলেন, ‘ইউক্রেনীয় এবং রাশিয়ান প্রতিনিধিদল প্রথম দফা আলোচনায় বসেছিল। এর মূল লক্ষ্য ছিল যুদ্ধবিরতি এবং ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার। দুই পক্ষই এসব বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য দুই পক্ষ তাদের রাজধানীতে পরামর্শের জন্য ফিরে গেছেন।’
সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য দুই পক্ষই আরেক দফা আলোচনায় বসতে পারে বলে জানান তিনি।
এর আগে রোববার এক ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছিলেন, তিনি এই আলোচনা থেকে তেমন কোনো অগ্রগতি আশা করেন না। তবে তিনি বলেছেন, ছোট হলেও এই সুযোগ তাদের ব্যবহার করা উচিত, যাতে কেউ ইউক্রেনকে যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা না করার জন্য দোষারোপ করতে না পারে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের জনগণকে ক্ষমতাসীনদের নিপীড়ন থেকে মুক্ত করা এবং নাৎসিবাদ হটানোর লক্ষ্যে দেশটিতে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর স্থল, আকাশ ও নৌপথে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী; যদিও অনেকে রাশিয়ার এই অভিযানকে আগ্রাসন হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এর আগে, রোববার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বেলারুশে শান্তি আলোচনায় তার দেশ অংশ নেবে না বলে জানিয়ে দেন। এরপর তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো। পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে কোনো ধরনের পূর্ব শর্ত ছাড়া ইউক্রেন শান্তি আলোচনায় অংশ নেবে বলে জানানো হয়।
রাশিয়ার আগ্রাসনের পঞ্চম দিনেও সোমবার ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রুশ সৈন্যদের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শুরু হওয়া সবচেয়ে বড় আক্রমণের এই ঘটনার পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং পশ্চিমারা একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে।
বিশ্বের এমন পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়ে রোববার দেশের পারমাণবিক প্রতিরোধ বাহিনীকে পরমাণু অস্ত্র ‘উচ্চ সতর্ক’ অবস্থায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের এমন নির্দেশের পর গোমেলে শান্তি আলোচনায় কোনো ধরনের অগ্রগতি আসবে কি না তা এখনো পরিষ্কার নয়।
মস্কোর প্রধান প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে পশ্চিমা-নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে ইতোমধ্যে ডলারের বিপরীতে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের দাম ৩০ শতাংশ পড়ে গেছে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও রাশিয়ার আগ্রাসনের জবাবে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ বৃদ্ধি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা।
এদিকে, সোমবার ভোরের দিকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ এবং দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান শহর খারকিভে ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। রাশিয়ার স্থল বাহিনীর খারকিভ শহর দখলের চেষ্টা প্রতিহত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন।
অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জাপোরিঝঝায়া অঞ্চলের দুটি শহর বার্ডিয়ানস্ক এবং এনেরহোদারসহ একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দখল করেছে রুশ সৈন্যরা। তবে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স। রাশিয়ার সৈন্যদের হাতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পতনের দাবি অস্বীকার করেছে ইউক্রেন।
দোনেৎস্কের আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান পাভলো কিরিলেনকো সোমবার টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, ইউক্রেনের বন্দর নগরী মারিউপোলের আশপাশে রাতভর লড়াই চলেছে। তবে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী কোনো ভূখণ্ড দখল অথবা হারিয়েছে অথবা কোনো হতাহত হয়েছে কি না সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানাননি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট বলেছেন, বৃহস্পতিবার থেকে এখন পর্যন্ত সংঘাতে ইউক্রেনে কমপক্ষে ১০২ বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৩০৪ জন আহত হয়েছেন। তবে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা ‘যথেষ্ট বেশি’ বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশে ৩ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়ে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেছেন, বৃহস্পতিবারের পর থেকে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে ৩৫০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে রাশিয়া। এসবের মধ্যে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র বেসামরিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে।