ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দুটি অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া।
সোমবার এ স্বীকৃতি দেয়ার ঘণ্টার মধ্যেই পূর্ব ইউক্রেনে ‘শান্তি বজায় রাখতে’ সেনা পাঠানোর ঘোষণাও দিয়েছে মস্কো। অসমর্থিত বিভিন্ন সূত্রের দাবি ইউক্রেনের সীমান্ত অতিক্রম শুরু করেছে রুশ সেনাবাহিনী।
রাশিয়ার চোখে ‘স্বাধীন’ দুই দেশের নাম এখন দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক।
ইউক্রেনের পূর্ব অংশের এই দুটি অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার শুরু ২০১৪ সালে। ইউরোনিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ওই দুই অঞ্চলে জনমত নিজের দিকে টানতে বিপুলসংখ্যক মানুষকে রাশিয়ার পাসপোর্ট দিয়েছে মস্কো। দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককের প্রায় ৩৮ লাখ মানুষের মধ্যে এখন পর্যন্ত সাত লাখ মানুষ পেয়েছে রাশিয়ান পাসপোর্ট।
আর এখন সেই ‘রুশ নাগরিকদের’ রক্ষার যুক্তি দিচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক ঐতিহাসিকভাবে ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চলের অন্তর্গত। ১৯২২ সালে দোনবাসকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। তবে ওই অঞ্চলের অধিকাংশ নাগরিক রুশ ভাষায় কথা বলেন।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর থেকে ইউক্রেনের জাতীয় নির্বাচনগুলোতে নির্দিষ্ট একটি ধরন লক্ষ করা যায়। দোনবাস অঞ্চল ও ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলের পরিষ্কার মেরুকরণ ঘটে এসব নির্বাচনে। দুই অঞ্চলে ভোটের বেশিরভাগই পান অঞ্চলভিত্তিক প্রধান প্রার্থীরা।
২০১৪ সালের ১১ মে লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে গণভোটের আয়োজন করে। এতে স্বাধীনতার পক্ষে রায় হলেও তা মেনে নিয়নি ইউক্রেন। এর প্রায় আট বছর পর ২১ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের ওই দুই অঞ্চলকে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দিল রাশিয়া। এই আট বছরে ওই অঞ্চলে সংঘাতে মারা পড়েছেন ১৪ হাজারের বেশি মানুষ।
আয়তনে খুব বড় না হলেও কৌশলগত দিক থেকে অঞ্চল দুটি রাশিয়া তথা ইউরোপের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক
৮ হাজার ৯০২ বর্গকিলোমিটারের দোনেৎস্কে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রধান প্রশাসক হিসেবে ২০১৮ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন ডেনিস পুশিলিন।
এর আগে ২০১০ সালে ইউক্রেন জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হন রাশিয়ার মদদপুষ্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ। তিনি ছিলেন দোনেৎস্ক অঞ্চলের বাসিন্দা। ২০১৪ সালের ইউক্রেনীয় বিপ্লবের সময় ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হন। ওই ঘটনা মেনে নিতে পারেনি দোনেৎস্কের মানুষ ও রাশিয়া।
স্বাধীনতার জন্য গণভোট ভণ্ডুল হয়ে যাওয়ার পর দোনেৎস্কের বিদ্রোহী ও ইউক্রেনের সরকারি বাহিনীর মধ্যে শুরু হয় সশস্ত্র সংঘাত।
২৩ লাখ ২০ হাজার ৪৪ জনসংখ্যার দোনেৎস্কের আয়ের মূল উৎস ইস্পাত, বিদ্যুৎ ও বস্ত্র। এ তিন পণ্য অঞ্চলটির অর্থনীতির প্রায় ৮০ শতাংশের জোগান দেয়। ২০২০ সালে দোনেৎস্ক নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই বছরের প্রথমার্ধে ২৫.৬ কোটি ডলারের শিল্পপণ্য রপ্তানি করে দোনেৎস্ক।
ইস্পাতের আকরিকের খনি সমৃদ্ধ অঞ্চলটি ইউক্রেনের প্রধান স্টিল সরবরাহকারী। আর কৃষ্ণসাগর সীমানায় দোনেৎস্কের রয়েছে বিশাল কয়লার খনি।
রাজনীতির পাশাপাশি দোনেৎস্কের শিক্ষাক্ষেত্রেও রয়েছে রাশিয়ার প্রভাব। স্থানীয় স্কুলগুলোতে ইউক্রেনে প্রচলিত ১২ পয়েন্টের গ্রেডিং ব্যবহার না করে রাশিয়ার ৫ পয়েন্টের গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। শিক্ষার্থীরা স্কুল পেরোনোর সময়ে পান রাশিয়ান ডিগ্রি। এটি রাশিয়ার যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে বা রুশ প্রতিষ্ঠানে চাকরির ক্ষেত্রে কাজে আসে।
লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক
৮ হাজার ৩৭৭ বর্গকিলোমিটারের লুহানস্ক ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার সীমান্ত ঘেঁষা অঞ্চল। এর অবস্থান দোনেৎস্কের ঠিক উত্তরে।
নতুন দেশ হিসেবে রাশিয়ার স্বীকৃতি পাওয়া লুহানস্কের জনসংখ্যা ১৪ লাখ ৬৪ হাজার ৩৯। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষে এর প্রধান হিসেবে লিওনিড পাশেচনিক ২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর থেকে দায়িত্বপালন করছেন।
লুহানস্কের পুরনো নাম ছিল ভরোশিলোভগ্রাদ। এটিও মূলত শিল্পোভিত্তিক অঞ্চল। দোনেৎস্কের মতোই এখানে রয়েছে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় কয়লার মজুদ।
রাশিয়া সৈন্য পাঠানোর আগে লুহানস্ক ও দোনেৎস্কে বিভিন্ন বাহিনী মিলিয়ে রুশপন্থি মোট মিলিশিয়া সদস্য ছিল ৪২ হাজার ৫০০।