বছর দশেক আগের ঘটনা। তাও ঢাকার পার্শ্ববর্তী একটি জেলার। গৃহপালিত পশুর সাথে যৌনাচার করতে গিয়ে ধরা পরে এক তরুণ। মাছুম (ছদ্মনাম) নামের এই তরুণের বয়স তখন ছিল ২১/২২ বছর। সকালে নদীতে গোসলে গিয়েছিলেন তিনি। ঘাটও ছিল জনশুন্য। আর এতেই বিকৃতমনা হয়ে উঠেন মাছুম। ওই খানে থাকা এক পশুর সাথেই যৌনাচার শুরু করে দিয়েছিলেন। অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই এই বিকৃত কাণ্ড দেখে ফেলেন দু’জন গ্রামবাসী। পরে এই ঘটনায় গোপনে ছোট একটি সালিশও বসে। আর এতে জরিমানাও গুনতে হয়েছিল মাছুমকে। জরিমানার অঙ্কও বেশ ভালোই ছিল। গুঞ্জন তৈরির ভয়ে পশুটির মালিক অবশ্য পরে পশুটিকে হাটে নিয়ে বিক্রি করে দেন।
পশুকামিতার এই উদাহরণ অনেকের কাছেই বানানো মনে হতে পারে। আবার কেউ কেউ এই প্রতিবেদককে উন্মাদও মনে করতে পারেন। কিন্তু এটা নিছক গাঁজাখুরি কোন গল্প বা মাতালের প্রলাপ নয়; সত্য ঘটনার ছদ্ম উপস্থাপন মাত্র। আমাদের চারপাশে এই রকম উদাহরণ হয়তো ভুরি ভুরি নেই। কিন্তু তাও এই সমস্ত ঘটনাকে ব্যতিক্রম বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেইসাথে বিকৃতমনা বলেও অবজ্ঞা করা যায় না। বিভিন্ন সময়েই এই রকম পশুকামিতার বিষয়ে শোনা যায়। যৌনতা আমাদের সমাজে গোপনীয় ও কিছুটা নিষিদ্ধ। ফলে যৌনতা নিয়ে বিকৃতমনার সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়। অবশ্য আড়ষ্টটা ও সংকোচের কারণে অনেকেই এসব বিষয়ে কথা বলতে স্বস্তিবোধ করেন না।
গ্রাম এলাকায় এই রকম পশুকামিতার গল্প অনেক শোনা যায়। অবশ্য এদের সব সত্য নয়। তবে বেশিরভাগ ঘটনা যে সত্য, তার অসংখ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। ‘যৌনতা নিয়ে মানুষের আগ্রহ বা আকর্ষণ সহজাত। আর এই চাহিদাটাও মৌলিক। কিন্তু মৌলিক এই চাহিদার নিবৃত্তি অনেক সময় সামাজিক বাস্তবতায় আটকে যায়। আর এতে করেই অবদমন প্রক্রিয়ায় পশুকামিতার মতো ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশে পশু কামিতা স্বীকৃত নয়। ফলে অনেকেই গোপনে এমন চর্চায় অভ্যস্ত’ পশুকামিতা সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেন একজন যৌন অধিকার কর্মী।
সমকামিতাকে অনেক ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক বলে মেনে নিয়েছে, আধুনিক বিজ্ঞান। জাতিসংঘও এটাকে ‘মানসিক বিকৃতি’র তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন অনেক আগে। কিন্তু পশুকামিতা নিয়ে বৈজ্ঞানিক কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। বিজ্ঞানে এখনো এই বিষয়ে কোন যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় না। সারা বিশ্বেই এই ধরণের যৌন সম্পর্ককে মানসিক বিকৃতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবেও বিবেচিত হয় পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে।
পশুকামিতা সম্পর্কে একজন যৌন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এটাকে সহজাত যৌনতা বলা চলে না। অনেকেই ভিন্ন রকম আগ্রহ থেকে এই রকম বিকৃত মনস্কামনার পরিচয় দিয়ে থাকে। নৈতিক শিক্ষা ছাড়া পশুকামিতা বন্ধ করার সুযোগ নেই’। যৌনতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন এক রকম একজন জানান, আমাদের এখানে পশুকামিতা রয়েছে, এই বিষয়ে সবাই অবগত। কিন্তু এর সংখ্যা কত বা কোন ধরণের মানুষ এই পশুকামিতার দিকে ঝুঁকছে, এই বিষয়ে কোন সঠিক পরিসংখ্যান বা তথ্য উপাত্ত নেই। কারণ এসব বিষয়ে কোন কাজ বা গবেষণা নেই বললেই চলে।