দুর্গাপূজা উপলক্ষে গত সেপ্টেম্বরে মোট ৪ হাজার ৬০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দুই দফায় এ অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ১১৫ প্রতিষ্ঠানকে। কিন্তু অনুমতি পেয়েও অনেকেই ইলিশ রপ্তানি করেনি বলে জানা গেছে।
কোন প্রতিষ্ঠান, কী পরিমাণ ইলিশ ভারতে রপ্তানি করেছে—বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে পরিপূর্ণ তথ্য নেই। মন্ত্রণালয় এবার প্রকৃত ইলিশ রপ্তানির তথ্য জানতে চায়।
আজ সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইলিশ রপ্তানির তথ্য চেয়ে ৭৩টি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে। তথ্য দিতে সময় দেওয়া হয়েছে সাত কার্যদিবস। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মৎস্য অধিদপ্তর, কাস্টম হাউস ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোকে। এর আগে ৪২টি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে তাদের রপ্তানিচিত্র সংগ্রহ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ মুঠোফোনে বলেন, ‘রপ্তানির পুরো তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার পর আমরা বুঝতে পারব কারা, কেন অনুমতি নিয়েও শেষ পর্যন্ত ইলিশ রপ্তানি করতে পারেননি।’ অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা ভালোভাবে যাচাই করা হবে বলেও জানান তিনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ২০ সেপ্টেম্বর ৫২টি ও ২৩ সেপ্টেম্বর ৬৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৪০ টন করে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল। রপ্তানির শেষ সময় ছিল ৩ অক্টোবর। শর্ত ছিল কয়েকটি। এগুলো হচ্ছে বিদ্যমান রপ্তানিনীতির বিধিবিধান মানতে হবে, শুল্ক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ইলিশের কায়িক পরীক্ষা করাতে হবে এবং প্রতিটি চালান (কনসাইনমেন্ট) শেষে রপ্তানিসংক্রান্ত কাগজপত্র বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দাখিল করতে হবে।
এ ছাড়া অনুমোদিত পরিমাণের চেয়ে বেশি ইলিশ রপ্তানি না করা, অনুমতি কোনোভাবেই হস্তান্তর না করা এবং অনুমোদিত রপ্তানিকারক ছাড়া ঠিকায় (সাবকন্ট্রাক্ট) রপ্তানি না করার শর্ত ছিল।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গত ২৬ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপন জারি করে গত ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, কেনাবেচা ও বিনিময় নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এ কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো ইলিশ রপ্তানি করতে পারেনি।
রপ্তানিকারকদের এ অসুবিধার কথা বিবেচনা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ২৬ অক্টোবর নতুন করে ইলিশ রপ্তানির সময় বাড়ায় ৫ নভেম্বর পর্যন্ত।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যে ৪২টি প্রতিষ্ঠান রপ্তানির তথ্য দিয়েছে, মন্ত্রণালয় বিশ্লেষণ করে দেখেছে, তাদের মধ্যে কেউ ৪০ টনই রপ্তানি করেছে, কেউ করেছে ৩০, ৩৫ বা ৩৭ টন। কেউ আবার একেবারেই রপ্তানি করতে পারেনি, কেউ করেছে ৩ টন বা ৫ টন।
রপ্তানির জন্য বেশি সময় না পাওয়া, কোভিড-১৯–এর প্রকোপ, সক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও রপ্তানির অনুমতি নেওয়া—এগুলো হচ্ছে ভালো রপ্তানি না হওয়ার অন্যতম কারণ। একজন রপ্তানিকারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিনি রপ্তানির অনুমতি নিয়েছিলেন প্রভাব খাটিয়ে। চেয়েছিলেন কারও কাছে এটা বিক্রি করে দিতে। কিন্তু হস্তান্তর করতে না পারার শর্ত থাকায় কেউ রাজি হননি।
বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতি (বিএফএফইএ) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ বছরে প্রায় ছয় লাখ টন ইলিশ উৎপাদন হয়। সেখান থেকে চার-পাঁচ হাজার টন ইলিশ রপ্তানি হলে বাজারে তেমন কোনো প্রভাব পড়ে না। বরং ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার সমান বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়।
বিএফএফইএ সভাপতি মো. আমিন উল্লাহ ২০ সেপ্টেম্বরের অনুমতির দিন বলেছিলেন, হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারকেরা মূলত চিংড়ি রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে চিংড়ি উৎপাদন ও রপ্তানি দুটিই কম। এ সময়ে অল্প ইলিশ রপ্তানির সুযোগ পেলে ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারবেন। তবে ইলিশ রপ্তানির সময়সীমা আরেকটু বাড়ালে বাজারে কম প্রভাব পড়বে। কারণ, স্বল্প সময়ে রপ্তানির বাধ্যবাধকতা থাকায় সব রপ্তানিকারক কাছাকাছি সময়ে বাজার থেকে ইলিশ কিনতে যাবেন।