নানান বিশৃঙ্খলা আর অনিয়মের মধ্যে চলছে দেশের সম্ভাবনাময় খাত ই-কমার্স। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা নীরবে গ্রাহকদের পকেট কাটছে। এ বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে মাঠে নেমেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চালু হচ্ছে নতুন নিয়ম। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় আসছে নিবন্ধন প্রক্রিয়া। নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হবে ইউনিক বিজনেস আইডেন্টিটিফিকেশন নম্বর। গ্রাহকরা এ নম্বর যাচাই করে সঠিক প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য কিনতে পারবেন।
নিবন্ধন ও ইউনিক বিজনেস আইডেন্টিটিফিকেশন নম্বর প্রক্রিয়াটি ই-কমার্স খাতে নতুন মাত্রা তৈরি করবে। কেননা গ্রাহকেরা ওই নম্বর দেখে নিশ্চিত হতে পারবেন যে তারা সঠিক প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য ক্রয় করছেন। আবার যারা ব্যবসা পরিচালনা করছেন তারাও সতর্ক হয়ে কাজ করবেন, কেননা তাদের তথ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে থাকবে।ই-ক্যাবের যুগ্ম সম্পাদক নাসিমা আক্তার নিশা
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ডব্লিউটিও সেল মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ই-কমার্সের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সঙ্গে দেওয়া হবে ইউনিক বিজনেস আইডেন্টিটিফিকেশন নম্বর। এ নম্বরের মাধ্যমেই গ্রাহকরা ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে পারবেন।’
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও তার স্ত্রী (চেয়ারম্যান) শামীমা নাসরিনকে গ্রেফতার করা হয়
তিনি বলেন, ‘ই-কমার্স খাত নিয়ে আইন প্রণয়নসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে খাতটি আরও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হবে। এতে সহজেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসা যাবে।’
ই-ক্যাবের সহ-সভাপতি ও ই-কমার্স উদ্যোক্তা মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘এটি খুবই ভালো একটা উদ্যোগ। যাদের ট্রেড লাইসেন্স নেই তারাও নিবন্ধন করার সুযোগ পাবেন। ফলে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় উদ্যোক্তাদের জন্য তেমন কোনো সমস্যা হবে না। তবে সত্যতা যাচাইয়ে সব ধরনের তথ্য নেওয়া হবে।’
ই-কমার্সের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্যে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সঙ্গে দেওয়া হবে ইউনিক বিজনেস আইডেন্টিটিফিকেশন নম্বর। এ নম্বরের মাধ্যমেই গ্রাহকরা ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে পারবেন।বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ডব্লিউটিও সেল মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সচিব (কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেল) মুহাম্মদ সাঈদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘নিবন্ধন ও আইডি নম্বর প্রদানের অংশ হিসেবে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কাজ শুরু হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে কাজটি সম্পাদন করা হচ্ছে। দ্রুতই আমরা সেবাটি নিয়ে আসতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘যারা ই-কমার্স নিয়ে ব্যবসা করতে চান তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে। এরপর এসব আবেদন যাচাই বাছাই করে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হবে। নিবন্ধনের সময়ে ওইসব প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হবে ইউনিক বিজনেস আইডেন্টিটিফিকেশন নম্বর। নম্বরটি যে কোনো ডিজিটের হতে পারে। এই নম্বর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইটসহ সবখানে প্রকাশ করবে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর ভারত-নেপাল সীমান্ত থেকে ই–অরেঞ্জের কথিত পৃষ্ঠপোষক বনানী থানার বরখাস্ত হওয়া পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানাকে আটক করে বিএসএফ
ই-কমার্স খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে খাতটিতে শৃঙ্খলা আসবে। এ খাতে কেউ ব্যবসা বাণিজ্য করতে চাইলে সেও সতর্ক থাকবে। তখন নিয়ম মেনেই তারা ব্যবসা পরিচালনা করবে। নিবন্ধন না থাকার ফলে অনেক ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছিল না। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে সেই সমস্যাও দূর হবে।
ই-ক্যাবের যুগ্ম সম্পাদক নাসিমা আক্তার নিশা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘নিবন্ধন ও ইউনিক বিজনেস আইডেন্টিটিফিকেশন নম্বর প্রক্রিয়াটি ই-কমার্স খাতে নতুন মাত্রা তৈরি করবে। কেননা গ্রাহকেরা ওই নম্বর দেখে নিশ্চিত হতে পারবেন যে তারা সঠিক প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য ক্রয় করছেন। আবার যারা ব্যবসা পরিচালনা করছেন তারাও সতর্ক হয়ে কাজ করবেন, কেননা তাদের তথ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে থাকবে।’
নিবন্ধন ও আইডি নম্বর প্রদানের অংশ হিসেবে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কাজ শুরু হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে কাজটি সম্পাদন করা হচ্ছে। দ্রুতই আমরা সেবাটি নিয়ে আসতে পারব।বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সচিব ডব্লিউটিও সেল মুহাম্মদ সাঈদ আলী
এ নারী উদ্যোক্তা বলেন, ই-কমার্স খাতটি আমাদের দেশের জন্যে অনেক বড় প্লাটফর্ম। এ খাতে যত শৃঙ্খলা থাকবে তত বেশি আস্থা তৈরি হবে।
ই-কমার্স খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু আইন বা নিয়ম করলে হবে না তার বাস্তবায়নও সঠিকভাবে করতে হবে। তবেই এর সুফল সবাই পাবে। অনলাইনে লেনদেনে অবশ্যই গ্রাহকদের সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। বড় বড় চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে লোভে পড়ে পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে। ই-কমার্সের মাধ্যমে নিজের প্রয়োজনে পণ্য কিনতে হবে, ব্যবসার জন্যে পণ্য কেনা ঠিক নয়। এখানে লোভ করা যাবে না।