Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৫ বুধবার, মে ২০২৪ | ৩১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পরীদের ট্রায়াল হোক, মিডিয়া ট্রায়াল যেন না হয়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ আগস্ট ২০২১, ১০:১৭ AM
আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২১, ১০:১৭ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


মামুনুর রশীদ।। বিনোদন অঙ্গনের কেউ আটক হওয়া এটাই প্রথম নয়, এর আগেও বহুবার এমন প্রসঙ্গ সামনে এসেছে। পত্রপত্রিকায় অনেক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় লাইভে সেসব দেখানো হয়েছে। মানুষের কৌতূহল মেটাতে গিয়ে সেসব ঘটনার অনেক ধরনের ডালপালা গজিয়েছে।

মডেল তিন্নি হত্যার ঘটনায় অভিনয়শিল্পীদের অনেককেই নিয়মিত পুলিশের বিশেষ শাখায় ধরনা দিতে হতো। তখন ছিল বিএনপির সময়। শেষ পর্যন্ত উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপে সেটি বন্ধ হয়েছিল। এরপরও দু-একজন নামকরা অভিনেত্রীকে নিয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আমরা বলেছি, এগুলোর ট্রায়াল হোক, মিডিয়া ট্রায়াল যেন না হয়। অতীতে যাঁরা আটক হয়েছিলেন, পরে বিচারে তাঁদের কিছু বের হয়ে আসেনি।

সম্প্রতি যা ঘটেছে, তাতে অনেক বিষয় দৃশ্যমান হয়েছে। কিন্তু যেটা দৃশ্যমান হয়নি, সেসব পরিণত হয়েছে গুজবে। নানা রকম কাঁচা-কথা, নানা রকম কুৎসা সমাজের বিভিন্ন স্তরে মুখরোচক আলোচনা হিসেবে বাজার সরগরম করেছে। সম্প্রতি যাঁরা আটক হয়েছেন, এঁদের মধ্যে একমাত্র পরীমনি সবার পরিচিত। সে কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছে এবং নানা কারণে আলোচিত হয়েছে। কিন্তু গ্রেপ্তার হওয়া অন্যদের মধ্যে যাঁদের মডেল বলা হচ্ছে; তাঁদের কেউ চেনেন কি না জানি না, আমরা চিনি না। তাঁদের সঙ্গে পরীমনিকে মিলিয়ে ফেলা যাবে না।

একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রীকে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে জনপ্রিয়তার একটা জায়গায় পৌঁছাতে হয়। পরীমনিকে সেই সংগ্রাম করতে হয়নি বললেই চলে। নানা কারণে সমাজের অনেক ক্ষমতাবান লোকের সঙ্গে তার পরিচয়ের সুযোগ হয়েছে। ফলে দেখা গেছে, তার মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে যে আইন তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। যে কারণে সে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নাম করছিল, এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছেও বিচার চাইছিল। গণমাধ্যম তার বিষয়টি লুফে নিয়েছে। দর্শকেরা অত্যন্ত আগ্রহভরে তার ঘরে নানা রকম বিদেশি মদ দেখেছে। প্রচলিত আইনে মদ যেখানে নিষিদ্ধ, সেখানে তার বাড়িতে কীভাবে মদের পাহাড় গড়ে উঠল, তার আদ্যোপান্ত কিছুই বোঝা যায় না।

আমাদের সমাজে নারীদের চরিত্র হনন খুব সহজ। একটি স্থিরচিত্রই একজন নারীর চরিত্র হননের জন্য যথেষ্ট। আজকের ইলেকট্রনিক মিডিয়া এসব সংবাদ প্রচারে যথেষ্ট আগ্রহ দেখিয়ে থাকে। সেটার মধ্য দিয়ে এই নারীদের একধরনের বিচারও হয়ে যায়। দেশে এ-সংক্রান্ত কিছু আইন আছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নেই। যা আছে সবক্ষেত্রে সেসব মানা হয় না। বিষয়টিকে এমন ফলাও করে প্রচার না করে আইনের পথে অগ্রসর হওয়া গেলে পরীমনি ও অন্যদের যে আপাত সম্ভ্রমহানি হলো, সেটা হতো না। তারপর বিচার-বিবেচনা, যুক্তি-তর্ক এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেটি প্রমাণ হতো, সেটি প্রকাশ করাই যথার্থ হতো বলে বিবেচনা করি। আইনের প্রয়োগ যথার্থভাবে হলে আমরা এ রকম অনেক সংকট থেকে রক্ষা পেতে পারি।

  • মামুনুর রশীদ,নাট্যব্যক্তিত্ব।। 

(লেখাটি প্রথম আলো থেকে সংগৃহীত) 

Bootstrap Image Preview