পাঁচ বছর আগে হঠাৎ শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে অসুস্থ হন মর্জিনা। সহায় সম্বল শেষ করেও স্বাভাবিক হতে পারেননি। চিকিৎসার খরচের জন্য বিক্রি করতে হয়েছে গরু-ছাগল। করতে হয়েছে ধারদেনা। হাত-পা বাঁকা ও অবশ হওয়ায় চার বছর ধরে একা চলাফেরা করতে পারে না। পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে মর্জিনা বেগমকে (৪২)।
বিয়ের পর থেকে জীবনযুদ্ধে কখনো ঢাকায় পোশাক কারখানায় কখনো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঁটাতার পেরিয়ে দিল্লির ইটভাটায় কাজ করেছেন সামরুল হক (৪৭) ও মর্জিনা বেগম (৪২) দম্পতি। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের চর বড়লই এলাকার এই দম্পতির ঘরে চার ছেলে ও এক মেয়ে। পড়াশোনা করাতে পারেননি। কষ্টের মধ্যে চলতো সংসার।
এমন অবস্থাতে স্বামীও ছেড়ে যান তাকে। রেখে যায় পাঁচ সন্তান। বিয়ে করেন অন্যত্র। প্রায় চার বছর ধরে স্ত্রী-সন্তানদের খোঁজ নেননা স্বামী সামরুল।
বর্তমানে বড়লই গ্রামে বৃদ্ধা মায়ের বাড়িতে সন্তান নিয়ে পঙ্গু মর্জিনার সময় যাচ্ছে। ঠিকমতো কথাও বলতে পারেন না মর্জিনা।
পরিবারের আয় বলতে বৃদ্ধা মায়ের বয়স্ক ভাতা। তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন যায়। পাঁচ শতক জামিতে ভাঙাচুরা টিনসেড ঘর। ছোট চালার ঘর একটি। তারও টিনে ছিদ্র হওয়ায় বৃষ্টির পানি পড়ে ঘরের ভেতরে। টিনের ওপর পলিথিন দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করলেও পানি ভিজিয়ে দেয় সব।
এদিকে অসুস্থ মেয়ে ও নাতি-নাতনি বাড়িতে আসার পর থেকে মেয়ের পঙ্গু ভাতা ও সরকারি পাকা ঘরের জন্য মর্জিনার মা বৃদ্ধা আবিয়া বেওয়া চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে ছোটাছুটি করলেও কিছু মেলেনি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আবিয়া বেওয়া (৬৮) জানান, ১০ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছি। এদিকে অসুস্থ পঙ্গু মেয়েসহ নাতি-নাতনিকে ফেলে বিয়ে করে ঘর-সংসার করছে পাষণ্ড জামাই। গত পাঁচ বছরেও খোঁজ নিতে আসেনি। মেয়েটার করুণ পরিণতি দেখে একজন পুরাতন হুইল চেয়ার দিছে বাহে। তাও নষ্ট। একান হুইল চেয়ার কিনতে না পারায় মেয়েটা সারাদিন ঘরেই বন্ধী হয়ে কাটান। ভাতার টাকা দিয়া ৭ জনের সংসার। অনেক কষ্ঠে খ্যায়া না খ্যায়া বেঁচে আছং বাহে। বেটিটার জন্যে এখ্যান হুইল চেয়ার কিনে দিবার পাং নাই।
তিনি আরও জানান, টাকা দিতে পারিনি বলে মেয়ের ভাতাসহ সরকারি ঘর পাইনি। সরকার অসহায় মানুষকে পাকা ঘর দিচ্ছে। আমার মতো অসহায় মানুষের কপালে কি পাকা ঘর জুটবে বাহে। দরিদ্র পরিবারটির একটি হুইল চেয়ার কেনার সামর্থ্য না থাকায় আপাতত অসুস্থ পঙ্গু মেয়ের জন্য সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে একটি হুইল চেয়ারের আকুতি জানিয়েছেন অসহায় বৃদ্ধা মা আবিয়া বেওয়া।
স্থানীয় আশরাফুল ও খোকন মিয়া জানান, এমন অসহায় পরিবার জীবনে দেখি নাই। এদের এতো কষ্ট। কীভাবে যে তারা বেঁচে আছে এক আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারবে না। অনেক কষ্টে তারা একটি ঘরে অতোগুলো লোক গাদাগাদি করে থাকেন। তাই এলাকাবাসী মিলে একটা টিনের চালা করে দেয়। সেখানেই আবিয়া বেওয়ার অসুস্থ মেয়েটা তার সন্তানদের নিয়ে থাকেন। একটা হইল চেয়ারের অভাবেই মর্জিনা সারাদিন ঘরের মধ্যে থাকেন। কেউ যদি মর্জিনার জন্য একটা হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দিতেন খুব ভালো হতো।
বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খয়বর আলী জানান, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখতেছি। আবিয়া বেওয়ার জন্য একটি পাকা ঘর ও তার অসুস্থ পঙ্গু মেয়ের ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।