নাসার মহাকাশযান পারসিভেয়ারেন্স-এর রোবট সফলভাবে মঙ্গল গ্রহের বুকে নামার পর সেখান থেকে ছবি পাঠাতে শুরু করেছে। ছয় চাকার এই রোবটযান আগামী দু'বছর মঙ্গল গ্রহ থেকে নমুনা সংগ্রহের কাজ করবে। প্রাচীন হ্রদ এলাকার মাটিপাথরের মধ্যে খনন চালিয়ে এটি অতীত অণুজীবের অস্তিত্ব সন্ধানের কাজ করবে। মঙ্গল গ্রহের পাথরের নমুনা সংগ্রহে খোঁড়াখুড়ির প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার পাঠানো পারসিভারেন্স রোভার।
গ্রহের বিষুব অঞ্চল, যার নাম জেযেরো, তার কাছে গভীর এক গহ্বরে এই রোবটকে নামানো হয়েছে।
নভোযানটি মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করার মুহূর্তে উল্লাসে ফেটে পড়েন ক্যালিফোর্নিয়ায় নাসার মিশন কন্ট্রোলের প্রকৌশলীরা।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, আঙুলের সমান একটি পাথরখণ্ড সংগ্রহ করে সেটিকে বাতাসহীন টিউবে ঢুকিয়ে পৃথিবীতে পাঠানো হবে।
বিজ্ঞানীদের মতে, মঙ্গলে কখনও প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কি না, সে বিষয়টি নিশ্চিত হতে লাল গ্রহটি থেকে সংগৃহীত উপাদান পৃথিবীতে এনে গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিশ্লেষণের বিকল্প নেই।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মঙ্গলের কেন্দ্রে ৪৫ কিলোমিটার প্রশস্ত জেজিরো ক্রেটারে সফল অবতরণ করে পারসিভারেন্স।
কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাঠানো ছবির তথ্য বিশ্লেষণ করে ধারণা মেলে, এক সময় হয়তো হ্রদ ছিল জেজিরো খাদের অংশটি। এ ধারণা সত্য হলে সেখানে প্রাচীন ক্ষুদ্র জীবাণুধর্মী প্রাণের অস্তিত্ব মিলতে পারে বলেও মনে করা হয়।
মঙ্গলপৃষ্ঠ ছোঁয়ার পর থেকে পাঁচ মাসে দক্ষিণে প্রায় তিন হাজার ফুট পথ অতিক্রম করেছে নাসার রোবটটি।
বর্তমানে সেটি ‘পেভার স্টোন’ নামে পরিচিত একটি জায়গায় অবস্থান নিয়েছে। এই জায়গাটি ফ্যাকাসে রঙের একটি পাথুরে এলাকা। এটি জেজিরোর তলদেশের পৃষ্ঠ বলে ধারণা করা হয়।
বিজ্ঞানীরা জানতে চান, পেভার স্টোনের এই পাথরগুলো পলিবাহিত, নাকি আগ্নেয়।
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নমুনা সংগ্রহে প্রথমে পেভার স্টোনের ওপরের ধুলো-ময়লার আস্তর সরাবে পারসিভারেন্স। এরপর বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে সেখানকার মাটি পরীক্ষা করবে।
পারসিভারেন্স তার রোবটিক হাতে ধরা এসব যন্ত্র দিয়ে রাসায়নিক গঠন, খনিজ গুণ ও পাথরের ভেতরের গঠনবিন্যাস পরীক্ষা করবে।
সবশেষে আগস্টের শুরুতেই পাথর ফুটো করার কাজ শুরু করবে রোবটটি। এ ধরনের প্রায় ৪০টি নমুনা সংগ্রহ করবে সেটি।
এসব নমুনা পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে পরে যৌথ উদ্যোগ নেবে নাসা ও ইউরোপের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইএসএ।
এছাড়া রোভারের বয়ে নিয়ে যাওয়া ১ দশমিক ৮ কেজি ওজনের ড্রোন ইনজেন্যুনিটিও অভিযান পরিচালনা করছে মঙ্গলপৃষ্ঠে।
গ্রহের বায়ুমণ্ডলে এ ধরনের যানের গতিশীলতা বুঝতে ইনজেন্যুনিটির মাধ্যমে একের পর এক পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ ভবিষ্যতে দুর্গম জায়গাগুলোতে অনুসন্ধানের জন্য মহাকাশচারী ও রোবট পাঠানোর আগে এ ধরনের ড্রোন পাঠাতে চান তারা।