Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

স্টাফদের সঙ্গে বৈষম্য, সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে আন্দোলনে যাবেন বিমানের পাইলটরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ জুলাই ২০২১, ১২:৩০ PM
আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২১, ১২:৩০ PM

bdmorning Image Preview


মোটা অংকের বেতন কাটা আর অন্যান্য স্টাফদের সঙ্গে বৈষম্যের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে আন্দোলনে যাবেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাইলটরা।

মোটা অংকের বেতন কাটা আর অন্যান্য স্টাফদের সঙ্গে বৈষম্য নিয়ে অস্বস্তিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলটরা। এমন পরিস্থিতিতে পাইলটদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও ফ্লাইট পরিচালনা ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি তাদের। বেতন বৈষম্য দূর না করলে কঠোর আন্দোলনেও যেতে পারেন পাইলটরা।

আজ বুধবার পাইলটদের সংগঠন বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) নির্বাহী কমিটি জরুরি বৈঠকে বসছে। বৈঠক থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বাপা সূত্র এ

গত সোমবার বাপা এক চিঠিতে বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে, বেতন কর্তনের সিদ্ধান্ত ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে পাইলটরা চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত কোনো ফ্লাইট পরিচালনা করবেন না।

রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থাটির পাইলটরা জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে ১৫৭ জন পাইলট কর্মরত রয়েছেন। ২০২০ সালের মে মাস থেকে তাদের বেতন ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) বিমানের পরিচালক (প্রশাসন) জিয়াউদ্দীন আহমেদের একটি অফিস আদেশে সংস্থাটির সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। কিন্তু পাইলটদের বেতন কাটার বিষয়টি বহাল থাকে। এরপর থেকেই ক্ষুব্ধ হন তারা।

ওই আদেশে বলা হয়েছে, বিমানে কর্মরত ‘কর্মকর্তা’ এবং যেসব ককপিট ক্রুর চাকরির বয়স শূন্য থেকে পাঁচ বছর, জুলাই মাসে তাদের কোনো বেতন কাটা হবে না।

তবে আদেশে ককপিট ক্রুদের বিষয়ে বলা হয়েছে, যেসব ককপিট ক্রুর (পাইলট অন্তর্ভুক্ত) চাকরির বয়স ৫ থেকে ১০ বছর জুলাই মাসে তাদের বেতন থেকে ৫ শতাংশ এবং যাদের চাকরিকাল ১০ বছর বা এর ঊর্ধ্বে তাদের ২৫ শতাংশ বেতন কাটা হবে।

এমন বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলটদের সংগঠন বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)।

বাপার সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে। বাংলাদেশের কোনো ফ্রন্টলাইনারের বেতন কর্তন হয়েছে বলে আমার জানা নাই। প্রথমে কর্তন করা যেমন একটি অন্যায় হয়েছে, বর্তমানে পাইলট বাদে অন্যদের বেতন সমন্বয়ে আরেকটি অন্যায় করা হলো। অন্যান্য খাতে ফ্রন্টলাইনারদের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে, আর বিমানে প্রণোদনা তো দূরের কথা, কোয়ারেন্টাইনের জায়গাটিও দেওয়া হয়নি। এখন বেতন কর্তনের বৈষম্য করলো তারা। এ বিষয়টা কি পাইলটরা ভালোভাবে নিতে পারছেন? এমন পেইন দিয়ে, অনেকটা চাপের মধ্যে পাইলটকে ফ্লাইট পরিচালনা করানো হচ্ছে। আমাদের চাকরিটা গ্রাউন্ড জব না।

তিনি আরও বলেন, বিমানের বেতন কাটার প্রক্রিয়াও ত্রুটিপূর্ণ ছিল। আমাদের বেতনের অন্তর্ভুক্ত ওভারসিজ ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। এই ভাতা ২০১০ সাল থেকে বিমানের পাইলটদের বেতনের অংশ হিসেবে দেওয়া হচ্ছিল। বেতন থেকে ওভারসিজ ভাতা বাদ দিয়ে যে টাকা হচ্ছে সেটার ওপর আবার কর্তন করা হচ্ছে। যাদের ২৫ শতাংশ বেতন কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিমান, ত্রুটির কারণে কর্তন করা হয়েছে ৫৭ শতাংশ। যাদের ৫০ শতাংশ বেতন কর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তাদের বেতন কেটেছে ৭২ শতাংশ। বিমান আইন লঙ্ঘন করে একক সিদ্ধান্তে এমনটি করা হচ্ছে। বিমানের সঙ্গে পাইলটদের একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছে। তারা এই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন পাইলট বলেন, চীনের যেই উহান শহর থেকে করোনা ছড়িয়েছে, বিমানের পাইলটরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখানে গিয়েছে, যাত্রী এনেছে। আমরা ঢাকা-লন্ডন-ঢাকা রুটে শাটল ফ্লাইট পরিচালনা করেছি, ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি করে আফ্রিকায় আসা-যাওয়া করেছি। আজ যদি আমরা ফ্লাইট পরিচালনা না করতাম বিমানের কী হতো? বিমান কীভাবে আয় করতো? অথচ আজ ডেস্কের কর্মকর্তাদের বেতন আগের মতো দিয়ে আমাদের বঞ্চিত করা হল।

এক বছরে করোনায় আক্রান্ত বিমানের ২৫ পাইলট

পাইলটরা বলছেন, করোনা মাহমারির দুঃসময়ে পাইলটরা ঝুঁকি নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন। গত এক বছরে বিমানের ২৫ জন পাইলট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এখনও একাধিক পাইলট করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ধুঁকছেন। ৮ জন পাইলটের পুরো পরিবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।

তাদের দাবি, ফ্লাইট পরিচালনার পর তারা কোয়ারেন্টাইনের করারও সুযোগ পাচ্ছেন না। ফ্লাইট নিয়ে বিদেশে গিয়ে তাদের নিজের পকেটের টাকায় করোনা টেস্ট করতে হয়েছে। বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের কারণ একজন সিনিয়র পাইলটের বেতন সাড়ে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। এটা তাদের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক আচরণ।

এর আগে সোমবার (১২ জুলাই) বাপার সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান বিমানকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে তারা ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে বেতন কর্তনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে বাইল্যাট্রাল অ্যাগ্রিমেন্টের বাইরে আর ফ্লাইট অপারেশন করবে না বলে জানান।

বিমান সূত্র জানায়, যদি পাইলটরা এগ্রিমেন্টের বাইরে ফ্লাইট না চালানোর সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবী, দুবাই, কাতারের দোহা, সৌদি আরবের দাম্মাম রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হতে পারে।

বাপার একটি সূত্র জানায়, পাইলটদের বেতন কাটার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে আন্দোলনে যাবেন তারা। এ নিয়ে বুধবার (১৪ জুলাই) পাইলটদের সংগঠন বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) নির্বাহী কমিটি জরুরি বৈঠকে রয়েছে। বৈঠক থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

Bootstrap Image Preview