শুভ কামাল: আমেরিকায় একটা টার্ম আছে- ‘রঙ টাইম, রঙ প্লেস’। আমেরিকায় এদিক সেদিক গিয়ে প্রতি বছর অনেক লোক মারা যায়, ধরুন পিৎজা ডেলিভারি দিতে গিয়ে এক বাঙালি ছেলে মারা গিয়েছিলো কয়েক বছর আগে। এমন খবরের পোস্টের নিচে এই কমেন্টটা দেখবেন অনেকেই করে। আমাদের নিউইয়র্কের ডাউন টাওনে এমন জায়গা ছিল, সেখানে সন্ধ্যার পর ছেলে মেয়ে যে কেউ গেলে ধরা খাওয়ার চান্স অনেক অনেক বেশি। প্রতিটা শহরেই এমন জায়গা আছে, যেখানে মানুষ ভুল সময়ে পারতপক্ষে যায় না, সে ছেলে মেয়ে বা যতো বিশাল শরীরের অধিকারীই হোক। পরীমনি বলেছেন রাত বারোটার পর নাকি তিনি চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিলেন আশুলিয়ায় অপরিচিত এক লোকের সাথে, যার পেশা বিল্ডিং বানানো, অর্থাৎ ডেভেলপার।
যাই হোক, এই আশুলিয়া আর রাত বারোটা শুনে আমার প্রথম যা মাথায় এসেছে সেটা হচ্ছে- রঙ টাইম, রঙ প্লেস! চলচ্চিত্র নিয়ে কথা বলার জন্য পেশায় যে ডেভেলপার সে উপযুক্ত লোক না, সেই আলোচনা করার জন্য রাত বারোটার পর আশুলিয়াও সুবিধাজনক জায়গা না। রাত বারোটার পর আশুলিয়ার মতো নির্জন জায়গা পুরুষদের জন্যও নিরাপদ না, সুপারম্যানের জন্যও নিরাপদ না। এমন আলোচনার জন্য বা অন্য কিছুর জন্য পাঁচ তারকা হোটেলগুলা ভাল জায়গা হতে পারতো, সেখানে চাইলে নারী পুরুষের প্রাইভেসিও বজায় থাকে, এসব স্থানে যতো রাতই হোক যতো বড় হেডামই হোক এসব অঘটন ঘটানোর সাহস পেত না।
যাইহোক, বাংলাদেশি শিল্পপতিরা প্রায়ই নারীঘটিত অঘটন ঘটিয়ে আলোচনায় আসেন, কারণ এদের বেশিরভাগই হঠাৎ করে চুরি-বাটপারি করে অল্প সময়ে অগাধ টাকার মালিক হয়ে গেছে, তাই তারা দিশে হারিয়ে ফেলে। তাদের সুবিধার্থে আমি এই পোস্টে কিছু রিকমেন্ডেশন রাখতে চাই। টাকাপয়সা ওয়ালা লোকে হালকা নারী নিয়ে ওঠাবসা করবে এটা পৃথিবীতে নতুন কোনো ঘটনা না। কিন্তু সভ্য লোকে এটা করে সিস্টেমে। যেমন ধরুন আমেরিকার কোনো প্রভাবশালী লোক এমন করলে ভালো একটা মিডিয়ার মাধ্যমে নারী ম্যানেজ করবে। সেই মিডিয়ার সাথে তাদের ‘নন ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট’ হবে। অর্থাৎ লিখিত থাকবে এসব ঘটনা বাইরে আসলে তারা মামলা খাবে। একসঙ্গে ডেটিংয়ে যাওয়ার আগে তাদের মাঝে চুক্তি হবে, সেখানে স্পষ্ট লেখা থাকবে সেই ডেটিং এ কী কী কাজ চলবে, কী কী চলবে না! সেখানে নারীরও স্বাক্ষর থাকবে। ডেটিংয়ের সময় সেই চুক্তির টার্মের বাইরের কোনো কাজই নারীটি করবে না বা তাকে করতে বাধ্য করা যাবে না। সেটা করলে যে লোক নারীটির সঙ্গ আশা করেছে সে মামলা খাবে।
আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না? কারা কারা ‘ফিফটি শেডস অফ গ্রে’ পড়েছেন? সেখানে বিলিয়নিয়ার নায়ক গ্রে অনেক উলটাপালটা কাজ করতো নারী ভাড়া করে। কিন্তু সে আগে স্পষ্ট অনুমতি নিয়ে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর নিতো। সেখানে বিস্তারিত লিখিত থাকতো সে সময়ে কী কী করা যাবে,
কী কী করা যাবে না, সেটি নারীটিই নির্ধারণ করতো।
মাস কয়েক আগে হিউম্যান অব নিউইয়র্কে এক সাবেক স্ট্রিপারের ইন্টারভিউ ছাপিয়েছিল কয়েক পর্বে। সেখানে সেই স্ট্রিপার নাম উল্লেখ না করে বলেছিলো আমেরিকার সাবেক এক প্রেসিডেন্টও প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় নিউইয়র্কে আসলে এক নারীর সঙ্গ নিতো, সে সব বললেও নাম বলতে সাহস পায়নি, কারণ নন ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট ছিল, নাম বললে সে মামলা খেতে পারে। এটা আসলে একটা চুক্তি, দুজনের সম্মতিতে তারা চুক্তি অনুযায়ী যা খুশি করতে পারে, কিন্তু সম্মতির বাইরে কিছু করলে সেটা ধর্ষণ।
এমন আগে থেকে কাগজে কলমে এগ্রিমেন্ট করে নিলে দুই পক্ষই নিরাপদ থাকে। ঢাকার বাসে উঠে গ্যাঞ্জাম করলে বাসের কন্টাকটাররা একটা কথা বলতো, ভাই আপনে বাসের একটা টিকেট কিনছেন, বাস তো কিন্যা ফেলেন নাই। বাংলাদেশের বেশির ভাগ নব্য ধনী লোকই টাকা দিয়ে নারীসঙ্গ নিলে এমন ভাব করে যেন বাসই কিনে ফেলেছে, এখন যেন নারীটির মতামতের আর কোন দাম নাই। এটা অবশ্যই ভুল, এটা অবশ্যই ধর্ষণ। এটা করার সাহস পায় দেশে আইনের শাসন নাই বলে। জানে টাকা থাকলে যে কোনো কিছু করেই পার পেয়ে যাবে। অথচ টাকা দিয়ে করলেও কোন সভ্য দেশে কোনো এসকর্টের সঙ্গে মানুষ এমন করার সাহস পাবে না, করলে এর জন্য ভুগতে হবে কোর্টে। আমি পরীমনির প্রশংসা করি কারণ সে সামনে এসে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে।
বাংলাদেশের অধিকাংশ অপ্রচলিত পেশার নারীই এমন ঘটনা চেপে যায়, কারণ যদি প্রশ্ন উঠে এতো রাতে অমুক জায়গায় অমুকের সাথে কি করতে গিয়েছিলে? তাহলে তার উত্তর দেওয়ার মতো সাহস থাকে না। এই ঘটনার সুবাদে অন্তত দেশে এই নন ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্টের প্রচলন হোক, এতে দুই পক্ষই নিরাপদ থাকবে যতক্ষণ তারা চুক্তির মাঝে থাকবে। চুক্তি ভাঙলে তারা বিচারের মুখোমুখি করতে পারবে অন্য পক্ষকে। দেশে আইনের শাসন থাকলে এমন কিছুই হতো। এই লুচ্চা মদ্যপ নাসির উদ্দিন মাহমুদ এর বিচার চাই, যাদের মদ খেলে মাথা ঠিক রাখতে পারে না, তাদের প্রচলিত আইনে বিচারের দাবি জানাই।