‘স্বাস্থ্যবিধি মানব গাড়ি-ঘোড়া চালাব’ স্লোগানে রাজধানীতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে গণপরিবহন শ্রমিকরা। রোববার (২ মে) রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত সারাদেশে ২৪৯টি পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন আজ এই কর্মসূচি পালন করছে।
মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে গণপরিবহন শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে মোট যাত্রীর অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চালুর দাবি জানান। এতে ঢাকা জেলা বাস মিনি বাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে পরিবহন শ্রমিকরা বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন ও পণ্য পরিবহন চালুর চালুসহ তিন দফা দাবিতে আজ আমরা রাজপথে নেমেছি। আমরা চাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে মোট যাত্রীর অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চালু করা হোক। সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সহায়তা করতে হবে। সারাদেশে বাস ও ট্রাক টার্মিনালগুলোতে পরিবহন শ্রমিকদের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে ওএমএসের মাধ্যমে চাল বিক্রি করতে হবে।
বিক্ষোভ সমাবেশে ঢাকা জেলা বাস মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন (মহাখালী) সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক বলেন, লকডাউন বা বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হলেও একমাত্র পরিবহন ছাড়া সব কিছুই চলছে। এদিকে পরিবহন শ্রমিকরা কাজ না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমরা চাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে। আমাদের এই সুযোগ করে দেন, আমরা খেয়ে পরে পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচতে চাই।
গণপরিবহন চালুর দাবিতে এ দিন সকাল ১০টার পর থেকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে জড়ো হতে থাকেন পরিবহন শ্রমিকরা। পরে তারা ঢাকা মহানগর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এতে সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা ও নগর বাস টার্মিনাল শ্রমিক কমিটির তিন শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। এসময় শ্রমিকদের হাতে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন দেখা গেছে। তবে বিক্ষোভে করোনার অনেকের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি উপেক্ষিত ছিল।
অন্যদিকে সকাল সাড়ে ১০টার পর রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে গণপরিবহন শ্রমিকরা। তারা মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে বাস টার্মিনালের এক পাশ থেকে অন্য পাশে যান। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহ সম্পাদক মো. আব্বাস উদ্দিন বলেন, আমাদের রুটি-রুজির কথা চিন্তা করে আজ সকাল থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছি। এই বিক্ষোভ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ৪ মে সারাদেশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের নির্দেশে আমাদের এই বিক্ষোভ কর্মসূচি চলমান থাকবে।
তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন বাস চলাচল না করায় আমরা পরিবহন শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। অনেকে না খেয়ে দিন যাপন করছেন। অনেক পরিবহন মালিকরা ব্যাংকের ঋণের টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করতে পারছেন না। প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক বেকার অবস্থায় পড়ে আছে। রাজনৈতিক নেতারা রাজনৈতিক কর্মীদের সাহায্য সহযোগিতা করছেন কিন্তু আমাদের খবর কেউ রাখছেন না। গাড়ি চললে তবেই আমরা খেতে পারি। এজন্য অতি দ্রুত আমাদের পরিবহন চালু করার দাবি জানাচ্ছি।
মো. আব্বাস উদ্দিন আরও বলেন, দেশে সবকিছুই খোলা রয়েছে। শুধুমাত্র পরিবহনের ক্ষেত্রে করোনা। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়ি এমনকি অ্যাম্বুলেন্সে করেও যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে, যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা একেবারেই হচ্ছে না। সেখানে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুই সিটে একজন করে যাত্রী পরিবহন করতে চাই। যদি আমরা এই নিয়ম না মানি, আমাদের জন্য শাস্তিযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তারপরও আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন চালু করতে চাই।
এদিকে শ্রমিক নেতারা ‘স্বাস্থ্যবিধি মানব গাড়ি-ঘোড়া চালাব’ স্লোগানে সকাল থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করলেও তারা নিজেরাই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। যার ফলে প্রশ্ন উঠেছে পরিবহন চালু করলেও তারা যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন চালাতে পারবেন কি না।
রোববার সকালে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনে পরিবহন শ্রমিকদের বিক্ষোভ চলাকালে দেখা যায়, এতে কয়েকশ শ্রমিক ও পরিবহন নেতা অংশ নিয়েছেন। কিন্তু তাদের অনেকেই করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি এবং মাস্ক পরেননি। প্রায় সবাই একে অন্যের সঙ্গে ঘেঁষাঘেঁষি করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহ সম্পাদক এবং ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন বলেন, আজ আমরা অনেক শৃঙ্খলা বজায় রেখে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছি। তবে আমি অস্বীকার করছি না যে আজ অনেকে মাস্ক পরেনি। অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালন করেনি। আমাদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন, তাই আমি ভালোভাবে বিষয় খেয়াল রাখতে পারিনি। পরবর্তীতে কোনো কর্মসূচি দিলে অবশ্যই আমরা এ বিষয়ে সচেতন থাকব।
তিনি বলেন, আজকের কর্মসূচিতে স্বাস্থ্যবিধি না মানা হলেও পরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে অর্থাৎ বাস চলাচল শুরু করলে তখন যাত্রী এবং শ্রমিকদের শতভাগ মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিত করা হবে। আমরা আমাদের পরিবহন শ্রমিকদের কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়ে দেব, তারা যেন কোনোভাবেই স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ না করে।
শ্রমিকদের ৩ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-
১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে নৌপরিবহন ও পণ্য পরিবহন চলাচলের ব্যবস্থা করা।
২. সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করা।
৩. সারাদেশে ট্রাক টার্মিনালগুলোতে পরিবহন শ্রমিকদের জন্য ১০ টাকায় ওএমএসের চাল বিক্রির ব্যবস্থা করা।
এদিকে ঈদ সামনে রেখে গণপরিবহন চালু করার বিষয়ে সরকার চিন্তা ভাবনা করছে বলে শনিবার (১ মে) জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তবে পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, সরকার শুধু আশ্বাস দিচ্ছে, বাস্তবায়ন করছে না। ফলে তারা কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছেন।