কোমরে চারকোণা ওয়াকম্যান আর কানে হেডফোন- এখনকার ছেলেমেয়েরা হয়তো এর গুরুত্ব সেভাবে বুঝবে না। তবে গত শতাব্দীতে জন্ম নেওয়া মানুষদের কাছে এটি ছিল পরম আরাধ্য, অনেকটা স্বপ্নের মতো! সেইসব ওয়াকম্যান ও ক্যাসেট প্লেয়ারগুলোতে গান বাজত প্লাস্টিকে খাপে তৈরি টেপের সাহায্যে। এটি আবিষ্কার করেছিলেন ল্যু ওটেনস নামে এক ডাচ বিজ্ঞানী। গত সপ্তাহে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চিরবিদায় নিয়েছেন তিনি।
নেদারল্যান্ডসের সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গত ৬ মার্চ দেশটির ব্র্যব্যান্ট প্রদেশের ডুজেল শহরের নিজবাড়িতে মারা যান ওটেনস। তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।১৯৬০ এর দশকে বাজারে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ১০ হাজার কোটি ক্যাসেট বিক্রি হয়েছে।মানুষের গান শোনার অভ্যাস বদলে দিয়েছিলো ল্যু ওটেন্সের আবিষ্কার। ডিজিটাল যুগে এসেও মানুষ ক্যাসেট টেপ খুঁজে ফিরেছে। ওটেন্স ১৯৬০ সালে ফিলিপসের পণ্য উন্নয়ন বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। সেখানে তিনি ও তার দল ক্যাসেট টেপ তৈরি করেন। ১৯৬৩ সালে বার্লিন রেডিও ইলেকট্রনিক্স মেলায় তা প্রদর্শন করা হয়। এরপর গোটা বিশ্বে সফলতা অর্জন করে অডিও ক্যাসেট টেপ।ক্যাসেট উদ্ভাবনের পরপরই অনেক জাপানি প্রতিষ্ঠান অডিও টেপ বাজারে নিয়ে আসতে শুরু করে। কিন্তু সেগুলোর আকার ঠিক ছিল না। ক্যাসেট ভেদে আকার ভিন্ন হতো। পরে নিজ মডেলের ক্যাসেটকে পেটেন্ট করাতে ফিলিপস এবং সনির সঙ্গে চুক্তি করেন ওটেন্স।১৯৮২ সালে ফিলিপস যখন সিডি প্লেয়ার প্রদর্শন করে, তখন ওটেন্স বলেছিলেন, “এখন থেকে গতানুগিতক রেকর্ড প্লেয়ার বাতিলের খাতায় নাম লেখালো।”
সিডি প্লেয়ার প্রদর্শনের ঠিক চার বছর পর অবসরে যান ওটেন্স। নিজ কর্মজীবনের মাত্র একটি বিষয় নিয়েই তার আক্ষেপ ছিল। সেটি হলো, “আইকনিক ক্যাসেট প্লেয়ার ওয়াকম্যান সনি তৈরি করেছে, ফিলিপস নয়।”সাম্প্রতিক বছরে আবার হুট করে বেড়েছে ক্যাসেট টেপের চাহিদা। মার্কিন পপ তারকা লেডি গাগা ও দ্য কিলারসের মতো শিল্পীরা ক্যাসেটে গান রিলিজ করেছেন।যুক্তরাজ্যের অফিশিয়াল চার্টস কোম্পানির দেওয়া তথ্য অনুসারে, গত বছরের প্রথমার্ধে ২০১৯ সালের তুলনায় ক্যাসেট বিক্রি বেড়েছিল ১০৩ শতাংশ। আর যুক্তরাষ্ট্রের নেইলসেন মিউজিকের তথ্যানুযায়ী আগের বছরের তুলনায় ২০১৮ সালে ক্যাসেটের বিক্রি বেড়েছে ২৩ শতাংশ।