মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করায় শিশুদের ডে-কেয়ারসহ সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। নিজের দুই বছরের ছেলেকে দেখাশোনা করতে মেডিকেল বিলারের চাকরি চাড়তে বাধ্য হন মা সাভানাহ বেনাভিডেজ (২৩)। নিজের সুবিধা মোতাবেক কোনও চাকরি না পেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘অনলিফ্যানস’ এ অ্যাকাউন্ট খুলেন। আর সেখানে নিজের নগ্ন, খোলামেলা বা অন্তর্বাস পরিহিত ছবি শেয়ার করার মাধ্যমে আয় করতে থাকেন তিনি।
অনলিফ্যানস হচ্ছে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। যেখানে যেকোনো ব্যবহারকারী মাসিক গ্রাহকদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ একটা অর্থের বিনিময়ে নিজের ‘অর্জিনাল কনটেন্ট’ বিক্রি করেন। প্ল্যাটফর্মটি যাত্রা শুরু করে ২০১৬ সালে কিন্তু করোনার মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে এটি। ২৩ বছরের চাকরিহারা ওই নারী গত জুন থেকে ছবি বিক্রি করে আয় করেছেন প্রায় ৬৪ হাজার ডলার। উপার্জিত এ অর্থ দিয়ে নিজের বকেয়া পাওনা শোধ করার পাশাপাশি পরিবার-স্বজনদেরও সহায়তা করেছেন।
সাভানাহ বেনাভিডেজের মতোই একই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আয় করার প্রত্যাশা ছিল লেক্সি আজেনবার্গারেরও (২২)। মহামারি ভাইরাসে তিনবার চাকরিচ্যুত হয়েছেন তিনি। অক্টোবরে অর্থাভাবের সম্মুখীন হন। প্লাজমা ডোনেট করেও বকেয়া পরিশোধের মতো যথেষ্ট অর্থ ছিল না। এ কারণে গত নভেম্বরে অ্যাকাউন্ট করেন ‘অনলিফ্যানস’-এ। কিন্তু এ পর্যন্ত সেখান থেকে মাত্র ৫০০ ডলার আয় করতে পেরেছেন ২২ বছর বয়সী এই তরুণী।
অনলিফ্যানস প্ল্যাটফর্মে গত মাসে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৯ কোটিরও অধিক। কনটেন্ট ক্রিয়েটরের সংখ্যা মাত্র এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ৮ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। করোনায় চাকরি হারিয়ে অনেকেই এখন উপার্জনের পথ হিসেবে এই প্ল্যাটফর্মকে বেছে নিয়েছেন। সাভানাহ বেনাভিডেজের মতো অনেকে সেখান থেকে অর্থ আয় করতে পারলেও লেক্সি আজেনবার্গারের মতো অনেকে কাজ করতে এসে আবার হতাশ হচ্ছেন।
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক এঞ্জেলা জোনস জানান, এটা অবশ্যই সংকীর্ণ একটি প্ল্যাটফর্ম। মানুষ কেবল একটি অ্যাকাউন্ট খুলে অর্থ আয় করতে পারবে তা এমদমই ভুল ধারণা। সাধারণ বিভিন্ন মডেল, পর্ণ তারকা, সেলিব্রেটিরা যাদের আগে থেকে অনেক ভক্ত-অনুসারী রয়েছেন তাদের জন্য ‘অনলিফ্যানস’ অর্থ আয়ের জন্য সহজ পথ। অনলিফ্যানস প্রতি পেমেন্টের জন্য ২০ শতাংশ কেটে নেয়। তবে কেউ কেউ সাবস্ক্রিপশনের বাইরে ব্যক্তিগত মোবাইলে কনটেন্ট সরবরাহ করেন শুধুই অতিরিক্ত অর্থ আয়ের জন্য। এসব কনটেন্টের অর্থ গ্রাহক-ক্রিয়েটর নিজেদের মধ্যে লেনদেন করে। এ কারণে তাদের লেনদের অর্থ থেকে কোনও ভাগ পায় না ‘অনলিফ্যানস’ কর্তৃপক্ষ।
প্ল্যাটফর্মটিতে যোগ দেয়া ক্রিয়েটরদের অনেকেরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুব বেশি অনুসারী না থাকায় তাদের পক্ষে আয় করা অনেক কঠিন।
গত এপ্রিলে প্ল্যাটফর্মটিতে অ্যাকাউন্ট থাকার জন্য চাকরিচ্যুত হন ভারতীয় এক নারী। এছাড়া প্ল্যাটফর্মটির গ্রাহকরা চাইলে ক্রিয়েটরদের হয়রানি করতে পারেন। তাদের অনুমতি ছাড়াই ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ্যে তুলে ধরতে পারেন। কয়েকজন ক্রিয়েটর তো সোশ্যাল মিডিয়ায় ধর্ষণ ও প্রাণনাশের হুমকিও পেয়েছেন।