সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ছেলে এবং মেয়েদের কিছু ভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে যেটার ব্যাপারে আমরা অবগত বা সচেতন নই। ইংল্যান্ডের লফবারো বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘুম গবেষণা কেন্দ্রের গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, পুরুষদের তুলনার নারীদের বেশি বিশ্রাম বা ঘুম দরকার।
সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, মেয়েদের সারাদিনের সব তথ্য তাদের মস্তিষ্কের পুনরুদ্ধার করার জন্য সময় বেশি দরকার হয়। কম ঘুম হওয়া মেয়েরা বেশি দুঃখ বা রাগ দেখান তাদের ব্যবহারের মাধ্যমে। তবে এই সম পরিমাণ ঘুমের পর ছেলেদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হয় না। মেয়েদের এই সমস্যা হওয়ার মূল কারণ হলো, মেয়েরা জাগ্রত অবস্থাতে তাদের মস্তিষ্ক বেশি পরিশ্রম করে।
ব্রিটেনের ঘুম বিশেষজ্ঞ ডা. জিম হর্ন ডেইলি মেইলে প্রকাশিত তার একটি নিবন্ধে উল্লেখ করেন যে, মেয়েদের ছেলেদের তুলনায় ২০ মিনিট বেশি ঘুমের দরকার। একজন নারী একই সাথে কয়েকটা কাজ করতে পারেন এবং সেজন্যই তাদের মস্তিষ্কের পরিশ্রম বেশি হয়।
ছেলেদের থেকে মেয়েদের বেশি ঘুমের দরকার, তার কারণ হিসেবে নিচের বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো।
মেয়েদের কাজের সূচি বেশি থাকে
পুরুষদের তুলনায় নারীদের কাজ বেশি থাকে। যারা চাকরি করেন তারা চাকরির পাশাপাশি বাসার কাজও করেন। আবার যারা চাকরি করেন না তারা বাড়িতে সারাদিন অনেক কাজ করেন। হয়ত অল্প সময়ের অনেক কাজ থাকে বা ছোট ছোট কাজ থাকে দেখে আমরা গুরুত্ব দেই না। কিন্তু এই কাজগুলোর জন্যই মেয়েদের পরিশ্রম বেশি হয়। এবং তাদের বেশি বিশ্রাম বা ঘুমের প্রয়োজন হয়।
মেয়েরা হরমোনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়
প্রতি মাসে মেয়েরা একটি নিদিষ্ট সময়ে হরমোনের পরিবর্তন সহ্য করেন। এর মধ্যে মাতৃত্ব এবং মেনোপজও যুক্ত। এই সময়ে মেয়েদের মস্তিষ্কের বেশি বিশ্রাম দরকার হয়। কারণ এই হরমোনের পরিবর্তনের সময়ে তারা এমনিতেই অনেক শারীরিক এবং মানসিক চাপে থাকেন। এই সময়ে বেশিরভাগ মেয়েরা উদ্বেগ এবং হতাশায় ভোগেন।
বেশিরভাগ মেয়েরা পর্যাপ্ত বিশ্রাম পান না
একজন পুরুষ যখন চাকরি করেন তখন তিনি ঘুম থেকে উঠার আগে তার মা বা বৌকে ঘুম থেকে উঠতে হয় কাজের জন্য। আবার একই ভাবে ওই পুরুষটি ঘুমিয়ে পড়ার পরে তার মা বা বৌ ঘুমাতে যান। এটা আমাদের চারপাশের বেশিরভাগ ঘরের ঘটনা। একজন নারী সারাদিনে একজন পুরুষের তুলনার বেশি কাজ করেন। এবং তার মধ্যে বেশিরভাগ মহিলারা পর্যাপ্ত বিশ্রাম পান না। না দিনের বেলা, না রাতের বেলা।
ঘুম কম হওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধি পায়
এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটি নিদিষ্ট এলাকায় পুরুষদের তুলনার মহিলারা বেশি স্থূলকায় হয়ে থাকেন। আপনি যদি গর্ভাবস্থাকে বাদ দেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই মানতে হবে যে ওই সব মহিলাদের মধ্যে বেশিরভাগ মহিলারা কম ঘুমের স্বীকার। একজন মহিলার স্বাস্থ্য দেখে তার বিশ্রামের পরিমাণ আন্দাজ করা যায়।
পুরুষের তুলনায় গঠন ভিন্ন ধরনের
পুরুষের তুলনায় মহিলাদের গঠন ভিন্ন ধরনের। মহিলারা একসাথে যেমন অনেক কাজ করতে পারেন তেমন শুতে গেলেই যে তাদের মস্তিষ্ক কাজ বন্ধ করে দেয় তা না। একজন মহিলার জন্য তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়াটাও মুশকিল।
আমাদের জীবন এবং সামাজিক দিকগুলোর কারণে মেয়েরা বেশি প্রভাবিত হন। মেয়েরা নিজেরাই তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে কম সচেতন থাকেন। ঘুম কম হলে মন-মেজাজ দুটিই খারাপ থাকে এবং কাজে মনোযোগী হওয়া সম্ভব হয় না। মহিলারা যেমন একই সাথে অনেকগুলো কাজ করতে সক্ষম তেমনি পর্যাপ্ত ঘুমের ব্যাপারটাও তাদের মাথায় রাখা উচিৎ। তাহলে প্রতিটা দিন আরো সুন্দর হতে পারে।
তথ্যসূত্র : স্লিপ অ্যাডভাইজার