১৪ দিনের নবজাতককে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়েছেন গর্ভধারিণী মা। ঘটনার পর থেকে কন্যাশিশুটিকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান অনেকেই।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নারী ও শিশু ওয়ার্ড একটি বেডে এক নবজাতককে কাঁদতে দেখে সেখানে ছুটে যান কর্তব্যরত নার্স। কিন্তু বেশকিছু সময় পরও শিশুটির পাশে ছুটে আসেনি তার মা।
হাসপাতালের চিকিৎসকদের মতে, অপরিণত বয়সে জন্ম নেওয়া শিশুটি প্রথমদিকে অসুস্থ থাকলেও সেবা-যত্ন পেয়ে এখন বেশ সুস্থ। অন্যদিকে, প্রকৃত অভিভাবক শেষপর্যন্ত না পাওয়া গেলে সরকারের নিয়ম মেনেই এই বিষয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ নার্স মুক্তি রানী দাস জানালেন, গত ১৪ দিন আগে এখানে প্রসব করে এই শিশুটি। চার দিন প্রসূতি ও নবজাতক একসঙ্গে ছিলেন। পরে চলেও যায় তার। কিন্তু ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে আবারো ভর্তি হয়। তারপর শুক্রবার রাতে শিশু রেখে মা চলে যান। তবে চাঁদপুর সদরের শাহতলী গ্রামের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে হাসপাতালে ভর্তি হলেও সেখানে এই ঠিকানায় তাদের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে এই নিয়ে বেকায়দায় পড়েন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, হাসপাতালে ফেলে যাওয়া শিশুটিকে নিয়ে যেতে অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এর মধ্যে একজন মা তার বুকের দুধ খাওয়াতে শুরু করেছেন। শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহী চাঁদপুর সদর মডেল থানায় কর্মরত বিল্লাল হোসেন জানান, গত দুই সপ্তাহ আগে তার সহধর্মিণী জমজ শিশু জন্ম দেন। কিন্তু দুটি সন্তান ভূমিষ্ট হবার পর মারা যায়। এমন পরিস্থিতিতে একজন মা নবজাতক রেখে চলে গেছেন। এই সংবাদের ভিত্তিতে আমরা হাসপাতালে ছুটে যাই। এর মধ্যে তার সহধর্মিণী বুকের দুধ খাওয়াতে শুরু করেছেন।
চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল আজিজ জানান, অপরিণত বয়সে জন্ম নেওয়া শিশুটির শারীরিক অপূর্ণতা থাকলেও এখন ভালো সেবা পেয়ে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে শুরু করেছে। একজন মা তাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন। এর মধ্যে এই নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে নীলা।
চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম জানান, সরকারি নিয়ম মেনেই নবজাতককে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বিষয় আগামীকাল রবিবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে প্রকৃত অভিভাবক ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব।
তিনি আরো জানান, এই নবজাতককে দত্তক নিতে এর মধ্যে ১৫ জনেরও বেশি ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।