ডেঙ্গু ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ায় তা নিয়ে মানুষের আতঙ্কের প্রেক্ষাপটে এই জ্বরের লক্ষণ ও তা দেখা দিলে কী করতে হবে, তা সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সোমবার ‘ডেঙ্গু মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞ পরামর্শ’ শিরোনামের এক তথ্য বিবরণীতে বিষয়গুলো জানানো হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ডেঙ্গু রোগে বিচলিত বা আতঙ্কিত না হয়ে পরামর্শগুলো অনুসরণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
আগের বছরগুলোতে যে লক্ষণগুলো দেখে ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত করা যেত, এবার তা বদলে যাওয়ায় বিভ্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই।
কী লক্ষণ দেখলে হাসপাতালে যেতে হবে
নিচের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলে অতিসত্বর হাসপাতালে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
>> জ্বর কমার প্রথম দিন রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি
>> বার বার বমি/ মুখে তরল খাবার খেতে না পারা
>> পেটে তীব্র ব্যথা
>> শরীর মুখ বেশি দুর্বল অথবা নিস্তেজ হয়ে পড়া/হঠাৎ করে অস্থিরতা বেড়ে যাওয়া
>> শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক কমে যাওয়া/শরীর অস্বাভাবিক ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া
বাড়িতে চিকিৎসা
>> পর্যাপ্ত বিশ্রাম (জ্বর চলাকালীন এবং জ্বরের পর এক সপ্তাহ)
>> স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খাওয়া, যেমন খাবার স্যালাইন
>> গ্লুকোজ, ভাতের মাড়, বার্লি, ডাবের পানি, দুধ/হরলিকস, বাসায় তৈরি ফলের রস, স্যুপ ইত্যাদি
জ্বর থাকাকালীন চিকিৎসা
>> প্যারাসিটামল ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। পূর্ণবয়স্কদের জন্য ২টি করে প্রতি ৬/৮ ঘণ্টা পর পর; শিশুদের জন্য বয়স ও ওজন অনুসারে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী।
>> কুসুম গরম পানি বা নরমাল তাপমাত্রার পানি দ্বারা সারা শরীর মোছা
>> জ্বর থাকাকালীন রোগী দিনরাত সবসময় মশারির ভেতরে থাকবে
যে সব ওষুধ বারণ
>> ব্যথানাশক ওষুধ (এন.এস.এ.আই.ডি গ্রুপ যেমন, ডাইক্লোফেন, আইবুপ্রোফেন, ন্যাপারক্সেন, মেফেন)
>> এসপিরিন/ক্রোপিডোপ্রেল (এন্টি প্লাটিলেট গ্রুপ) হৃদরোগীদের জন্য জ্বর থাকাকালীন ও প্লাটিলেট হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে
>> ওয়ারফারিন (এন্টিকোয়াগুলেন্ট) হৃদরোগীদের জন্য জ্বর থাকাকালীন ও প্লাটিলেট হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে
>> এন্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ (বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিরেকে)
এবছর বর্ষার শুরুতেই মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ দেখা দেয় ঢাকায়; এখন তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি হিসাবে ১৮ জনের মৃত্যুর খবর দেওয়া হলেও এই সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়ে যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়ে মোট ২০৬৫ জন ডেঙ্গু নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত মোট ২৭ হাজার ৪৩৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৯ হাজার ৭৬১ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ৭ হাজার ৬৫৮ জন এখনও চিকিৎসাধীন।