কথা, আবৃত্তি ও সংগীতের মাধ্যমে কণ্ঠশীলনের ছত্রিশ বছরে পদার্পণ উৎসব পালন করছে বাংলা সাহিত্যের বাচিক চর্চা ও প্রসার প্রতিষ্ঠানটি।
২রা বৈশাখ ১৪২৬, সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় কণ্ঠশীলন কার্যালয়, বৃহত্তর যশোর সমিতি ভবন, নীলক্ষেত, ঢাকায় সাহিত্যের বাচিক চর্চা ও প্রসার প্রতিষ্ঠান কণ্ঠশীলনের ছত্রিশে পদার্পণ উৎসবের আয়োজন করা হয়।
কণ্ঠশীলন এই যাত্রা আরম্ভ করেছে ১৩৯১ সালের ২রা বৈশাখে (১৯৮৪ সালের ১৫ই এপ্রিল)। সুবাচন চর্চার নিয়মিত পাঠক্রমের মধ্য দিয়ে এ-পর্যন্ত প্রায় আট হাজার তরুণ-তরুণীকে কণ্ঠশীলন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাথমিক পাঠ দিয়েছে। অগ্রসর এবং গভীর আস্বাদের আগ্রহীরা প্রতিষ্ঠানে স্থায়ীভাবে যুক্ত হয়ে নিরন্তর অনুশীলনের ফল হিসেবে উপহার দিয়ে চলেছেন আবৃত্তি অনুষ্ঠান, শ্রুতিনাট্য ও মঞ্চনাটক।
কণ্ঠশীলন কেবল কিছু মঞ্চ ও মাইক্রোফোন-সফল পারফর্মার-মাত্র গড়তে চায়নি। এখানে ভাষাকে ভালোবেসে যত মানুষ লগ্ন হয়েছে, একে অপরে ঘন হয়ে রয়েছে জীবন ও সমাজের ধারক বৃত্তিগুলিকে, তারা সর্বতোমুখী বিকাশের চর্চায় নিরত।
‘অন্তর মম বিকশিত করো, অন্তর তর হে’ গানের মাধ্যমে কণ্ঠশীলনের ছত্রিশে পদার্পণ উৎসবের উদ্বোধন হয়। কণ্ঠশীলনের নিয়মিত, অনিয়মিত সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা কণ্ঠশীলনের ছত্রিশ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানান। একসঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।
অনন্যা গোস্বামীর উপস্থাপনায় কথা, আবৃত্তি ও গানে মূখর হয়ে ওঠে পুরো অনুষ্ঠান। কণ্ঠশীলনের সাহিত্য সংস্কৃতিতে অবদান নিয়ে আলোচনা করেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রতিনিধি ও কণ্ঠশীলনের প্রবীণ সদস্যরা। বক্তারা বলেন, কণ্ঠশীলন শুধু শুদ্ধ উচ্চারণ ও আবৃত্তি শিক্ষার প্রশিক্ষণই দিচ্ছে তা নয়, মানুষের মানবিক গুণাবলীর বিকাশে অতুলনীয় ভূমিকা পালন করছে। বাঙালি সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে, ধর্মান্ধতার কুচক্রীকে প্রতিহত করার সাংস্কৃতিক আন্দোলনে প্রথম সারিতে রয়েছে কণ্ঠশীলন।
নাদিমুল ইসলাম, শ্রেয়সী রহমান শ্রেয়া ও অঝরা সাধ্য’র গানের পাশাপাশি আবৃত্তি করেন বিলকিস আহমদ, নুরুজ্জামান নান্নু, আফরিন খান ও নিবিড় রহমান।
শিক্ষাগুরু ওয়াহিদুল হক ও বাকশিল্পাচার্য নরেন বিশ্বাসের দীর্ঘসময় পথচলার সঙ্গী অধ্যক্ষ মীর বরকত, সভাপতি গোলাম সারোয়ার, সহ-সভাপতি মোস্তফা কামাল ও নির্বাহী সদস্য ইলা রহমান কণ্ঠশীলন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। ১৯৮৪ সালে কণ্ঠশীলন প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিয়মিত শুদ্ধ উচ্চারণ ও আবৃত্তি শিক্ষার আবর্তন পরিচালনা করে আসছে। ওয়াহিদুল হক, নরেন বিশ্বাসের স্বপ্ন ছিলো বাংলার মানুষ শুদ্ধ বা প্রমিত উচ্চারণে কথা বলবে।
ওয়াহিদুল হক বলতেন, ‘কথা মানুষকে কাছে টানে, কথা মানুষকে দূরে ঠেলে দেয়। কথা মানুষকে বন্ধু করে, কথা মানুষকে শত্রু করে।’ তাই এক মানভাষায় কথা বলার আমাদের এই আন্দোলন চলতেই থাকবে। সবার সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যাবে কণ্ঠশীলন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
‘যিনি সকল কাজের কাজী, মোরা তাঁরই কাজের সঙ্গী ...’ সম্মেলক গানের পরে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।