বছর ঘুরে আবারও এলো ভাষার মাস। বছর ঘুরে বাঙালীর দুয়ারে আবার কড়া নেড়েছে প্রাণের বইমেলা। আজ থেকে শুরু হচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯। সাধারণত বইপ্রেমীদের নিকট তা পরিচিত অমর একুশে বইমেলা নামে। চিন্তাশীল পাঠক থেকে শুরু করে সাহিত্য প্রেমী, ফিকশন প্রেমী, বা শিশুতোষ গ্রন্থপ্রেমিক সবার প্রাণের খোরাক জোগায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা।
১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বর্ধমান হাউজের সামনে বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার সূচনা করেন। এ ৩২টি বই ছিল চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (বর্তমান মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশি শরণার্থী লেখকদের বই। ১৯৮৪ সালে বর্তমান অমর একুশে বইমেলার সূচনা হয়। নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’।
আজ শুক্রবার বিকাল তিনটায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী এ গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন শেষে তিনি মেলা পরিদর্শন করবেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিদেশি অতিথি থাকবেন ওপার বাংলার কবি শঙ্খ ঘোষ এবং মিসরের লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক মোহসেন আল-আরিশি। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করবেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল।
স্বাগত ভাষণ প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। এবার মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশের পরিসর ৩ লাখ বর্গফুট। অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে ৪টি চত্বরে বিন্যস্ত করা হয়েছে। গতকাল সকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
এদিকে বইমেলাকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।
তিনি বলেন, বইমেলায় আগত সবাইকে নিরাপত্তা বলয় পেরিয়ে প্রবেশ করতে হবে। প্রবেশ পথে আর্চওয়ে, ফুট পেট্রোলিং ব্যবস্থা, পোশাকধারী পুলিশের অবস্থান, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও আইএডি শাখার সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। গতকাল সকালে বইমেলার নিরাপত্তাবিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ভাষার মাসের প্রথম দিন আজ শুক্রবার ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে শুরু হচ্ছে জাতীয় কবিতা উৎসব। এটি উৎসবের ৩৩তম আসর। সকাল ১০টায় দুই দিনের এ উৎসবের উদ্বোধন করবেন কবি আসাদ চৌধুরী। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ইরাক, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক, উরুগুয়ে, যুক্তরাজ্য, কঙ্গো, স্পেন, মালয়েশিয়া ও চীনসহ বিশে^র ১২টি দেশের তিন শতাধিক কবি এ আসরে অংশ নিচ্ছেন। আগামীকাল শেষ হবে দুই দিনের এই কবিতা উৎসব।
প্রবেশ ও বাহিরে মূল ২টিসহ ৯ পথ
মেলায় প্রবেশ ও বাহিরে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের টিএসসি ও দোয়েল চত্বর উভয় দিকে প্রতিবারের মতো দুটি মূল প্রবেশপথ থাকবে। এ ছাড়া বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রবেশ ও বাহিরে তিনটি পথ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাহিরের মোট ছয়টি পথ থাকবে। আর বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।
গ্রন্থমেলার সময়সূচি
মাসব্যাপী বইমেলার ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত মেলা চলবে।
বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সকালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা ছাড়াও মেলা স্পনসর প্রতিষ্ঠান বিকাশের সিএমও মীর সওগত আলী, নিরাপদ মিডিয়া ও কমিউনিকেশনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, বাংলা একাডেমির সচিব আব্দুল মান্নান ইলিয়াস, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল পুস্তক প্রকাশনা সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।