আওয়ামী লীগ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৫৯ টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। জোটগতভাবে তারা মহাজোট থেকে পেয়েছে ২৮৮টি আসন। অপর দিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জোটগতভাবে পেয়েছে ৭টি ও এককভাবে বিএনপি ৫টি। মহাজোটে থেকে এরশাদের জাতীয় পার্টি পেয়েছে ২০টি আসন। এখন হিসেব অনুযায়ী বিরোধী দলের আসন দখল করার কথা জাতীয় পার্টির।
ইতিমধ্যে ঐক্যফ্রন্ট ঘোষণা করেছে ৩ জানুয়ারি-২০১৯ বৃহস্পতিবার সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তারা থাকবেন না অর্থাৎ শপথগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করেছে। এ অবস্থায় জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের আসনে কারা বসবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার ডালপালা বিস্তার করছে। বিষয়টি নিয়ে বিডিমর্নিং দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের বুদ্ধিজীবী ও আইনবিদদের সাথে কথা বলেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ বিডিমর্নিং এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ২৮৮টি আসনে বিজয়ী হয়েছে। আর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে ৭টি আসন। এ অবস্থায় একাদশ জাতীয় সংসদ কোন দল বিরোধী দলের আসনে বসবে তা নির্ধারণ করবে বিজয়ী দলের প্রধান অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী। যেহেতু জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ২০টি আসন পেয়েছে তারা মহাজোট থেকে বেরিয়ে এসে বিরোধী দলের আসনে বসতে পারে। এটি সাধারণত নির্ভর করবে প্রধানমন্ত্রী কি যাচ্ছেন সেটির উপর।
বিরোধী দলের প্রধান হওয়ার জন্য কত আসন প্রয়োজন এমন কোন আইন কি আমাদের আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, এটি নেই। তবে যারাই বেশি সংখ্যক আসন পায় তারা সরকার গঠন করে। আর যারা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেয়ে থাকে তারা বিরোধী দলের আসনে বসে। জাতীয় পার্টি তো মহাজোটের সাথে জোট করে নির্বাচন করেছিল। তারা চলমান সংসদে বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করছে। এখন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর উপর নির্ভর করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আ অা ম স আরেফিন সিদ্দীক বিডিমর্নিংকে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট ৭টি আসন পেয়েছে। অপরদিকে এরশাদের জাতীয় পার্টি পেয়েছে ২০টি আসন। সে ক্ষেত্রে হয়তো জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের আসনে তারাই বসবে। কারণ সর্বোচ্চ সংখ্যক আসনপ্রাপ্তরা সরকার গঠন করে। আর যারা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পায় তারা বিরোধী দলের আসনে বসে।
তিনি বলেন, বিরোধী দলের আসনে বসে যদি গঠনমূলক আলোচনা করে আর সরকারপ্রধান ও স্পিকার তাদেরকে সেই সুযোগ দেন তবে ভালো। ইতিপূর্বেও আমরা দেখেছি সংসদে বিরোধীদল ভালো একটি অবস্থান গ্রহণ করেছিল। গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনা করেছে। প্রাণবন্ত একটি সংসদ গেছে। বিএনপি না আসলেও কোন ধরনের সমস্যা তৈরি হওয়ার কথা নয়।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদিন মালিক একটি গণমাধ্যমকে বলেন, আওয়ামী লীগ এককভাবে সরকার গঠন করার মতো আসনে জয়লাভ করেছে। এখন তারা চাইলে তাদের জোটের সদস্যদেরও সরকারে রাখতে পারে।
তিনি বলেন, এরপর যেসব এমপি বা দল থাকবে, তারা বিরোধী দল হিসেবে সংসদে থাকবে। প্রধান বিরোধী দল হতে, কত আসনে জয়ী হতে হবে? এমন কোনো বিধান রয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যারা দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ তারাই প্রধান বিরোধী দল হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজ বিডিমর্নিংকে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, আমাদের দেশে বিরোধী দলের আসনে বসার জন্য কত সংখ্যক আসন প্রয়োজন নির্দিষ্ট করে তা বলা নেই। বিএনপি ঐক্যফ্রন্টের সাথে জোট বেধে মাত্র ৭টি আসন পেয়েছে। তাদের বিরোধী দলে যাওয়ার সুযোগ নেই। অপরদিকে এরশাদের জাতীয় পার্টি ২০টি আসন পেয়েছে তারা হিসেব অনুযায়ী বিরোধী দলে যেতে পারে। এক্ষেত্রে তাদেরকেই সেভাবে হয়তো ভাবা হচ্ছে। এখন অপেক্ষা করতে হবে পরিস্থিতি দেখার জন্যে।
কোন দলের কত আসন : আওয়ামী লীগ ২৫৯টি আসন, বিএনপি ৫টি, জাসদ ২টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩টি, বিকল্পধারা ২টি, তরীকত ফেডারেশন ১টি, জাতীয় পার্টি (জেপি) ১টি ও গণফোরাম ২টি আসনে জিতেছে। ৩টি আসনে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
ভোট পড়েছে ৮০ ভাগ : একাদশ সংসদ নির্বাচনে গড়ে ৮০% ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।
ভোটের মাঠে ছিল আওয়ামী লীগের ২৬০, বিএনপির ২৫৭ প্রার্থী : একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের ব্যালটে ছিল ১ হাজার ৮৬১ প্রার্থীর নাম। তাদের মধ্যে দলীয় প্রার্থী ১ হাজারর ৭৩৩ জন; বাকি ১২৮ জন স্বতন্ত্র। আদালতের নির্দেশনার পর ধানের শীষের প্রার্থী ১৫ জন কমলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী বেড়েছে ২৯ জন। আওয়ামী লীগ ও শরিকদের মিলিয়ে নৌকার ২৭২ জন প্রার্থী চূড়ান্ত লড়াইয়ে ছিল। তাদের বিপরীতে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি ও শরিকদের প্রার্থী সংখ্যা ২৮২। সবচেয়ে বেশি ২৯৮ জন প্রার্থী ছিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকে।
কোন দলের কত প্রার্থী ছিল : এলডিপি ৮ (ধানের শীষ ৪), জেপি ১১ (মহাজোট ২), সাম্যবাদী দল ২, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৮ (ধানের শীষ ৪), সিপিবি ৭৪, আওয়ামী লীগ ২৬০ (নৌকা ২৭২), বিএনপি ২৫৭ (ধানের শীষ ২৮২), গণতন্ত্রী পার্টি ৬, ন্যাপ ৯, জাতীয় পার্টি ১৭৫ (মহাজোট ২৫), বিকল্পধারা ২৬ (নৌকা ৩), ওয়ার্কার্স পার্টি ৮ (নৌকা ৫), জাসদ ১১ (নৌকা ৩), জেএসডি ১৯ (ধানের শীষ ৪), জাকের পার্টি ৯০, বাসদ ৪৪, বিজেপি ৩ (ধানের শীষ ১), তরীকত ফেডারেশন ১৭ (নৌকা ১), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ২৪, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ৪৮, এনপিপি ৭৯, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ৮ (ধানের শীষ ৩), গণফোরাম ২৮ (ধানের শীষ ৭), গণফ্রন্ট ১৩, পিডিপি ১৪, বাংলাদেশ ন্যাপ ৩, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১১, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ১৮, কল্যাণ পার্টি ২ (ধানের শীষ ১), ইসলামী ঐক্যজোট ২৫, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ৫, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২৯৮, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ২৫, জাগপা ৪, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ২৮, খেলাফত মজলিস ১২ (ধানের শীষ ২), বিএমএল ১, মুক্তিজোট ২, বিএনএফ ৫৭ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ১২৮ জন।
ইভিএম আসনে গড় ভোট পড়েছে ৪৫.৮২ ভাগ : সংসদ নির্বাচনে এবার প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হয়। দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৬টিতে ইভিএম ব্যবহার করে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ইভিএম আসনগুলোতে গড় ভোট পড়েছে ৪৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। এসব আসনের মোট ২১ লাখ ২৪ হাজার ৫৫৪টি ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ৯ লাখ ৭৩ হাজার ৪৫৫টি। ব্যালট পেপারের ভোটগ্রহণের হার গড়ে ৮০ ভাগ হলেও ইভিএমের ৬ আসনে গড় ভোট পড়েছে ৪৫ দশমিক ৮২ শতাংশ।