অ্যাজমা বা হাঁপানি শ্বাসনালির অসুখ। যদি কোনো কারণে শ্বাসনালিগুলো অতিমাত্রায় সংবেদনশীন হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন ধরনের উত্তেজনায় উদ্দীপ্ত হয়, তখন বাতাস চলাচলের পথে বাধার সৃষ্টি হয়ে শ্বাস নিতে বা ফেলতে কষ্ট হয়। শীতকালে এ রোগের প্রকোপ একটু বেশি হয়। এর অন্যতম কারণ ধুলোবালি ও বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জেন দ্রব্য। যে কোনো বয়সী মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
যাদের রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের হাঁপানি আছে, তাদের এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। আবার দাদা-দাদির থাকলে (বাবা-মায়ের না থাকলেও) নাতি-নাতনি বা ছেলেমেয়েরা এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। মাতৃকুল থেকে হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অ্যাজমা ছোঁয়াচে কোনো রোগ নয়। আবার অ্যাজমায় আক্রান্ত মায়ের বুকের দুধ পান করে শিশুরও অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। এমনকি মায়ের সংস্পর্শ থেকেও হওয়ার আশঙ্কা নেই।
এ রোগের প্রধান উপসর্গ বা লক্ষণগুলো হলো-বুকের ভেতর বাঁশির মতো সাঁই সাঁই আওয়াজ। শ্বাস নিতে ও ছাড়তে কষ্ট। দম খাটো অর্থাৎ ফুসফুস ভরে দম নিতে না পারা। ঘন ঘন কাশি। বুকে আঁটসাঁট বা দম বন্ধ ভাব। রাতে ঘুম থেকে উঠে বসে থাকা। এ রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে রক্তের বিশেষ পরীক্ষা ও বুকের এক্স-রে করা খুব জরুরি। পরীক্ষার ক্ষেত্রে স্কিন প্রিক টেস্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ।
রোগীর চামড়ার ওপর বিভিন্ন অ্যালার্জেন দিয়ে পরীক্ষা করা হয় এবং এ পরীক্ষায় কোন জিনিসে রোগীর অ্যালার্জি আছে, তা ধরা পড়ে। স্পাইরোমেট্রি বা ফুসফুসের ক্ষমতাও দেখতে হয়। এ পরীক্ষা করে ফুসফুসের অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণা করা যায়। এ ছাড়া অ্যালার্জেন পরিহার জরুরি। অর্থাৎ যে জিনিসে অ্যালার্জি, তা যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
ওষুধ প্রয়োগেও রোগী সুস্থ থাকতে পারেন। হাঁপানি নিরাময়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা হলো ভ্যাকসিন গ্রহণ। বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। প্রথম দিকে ধরা পড়লে অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমা রোগ একেবারে সারিয়ে তোলা সম্ভব। প্রতিকারের চেয়ে রোগ প্রতিরোধ উত্তম। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।