Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৪ শনিবার, ডিসেম্বার ২০২৪ | ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

জামায়াত-শিবিরকে ‘হুমকি’ উল্লেখ করে মার্কিন কংগ্রেসে বিল

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০১৮, ১০:২০ PM
আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৮, ১০:২০ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


দেশের স্থিতিশীলতা ও ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের জন্য ‘হুমকি’ উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির ও হেফাজতে ইসলামের মতো কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ও অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে মার্কিন কংগ্রেসে উত্থাপন করা এক প্রস্তাবে।

তাতে ওই কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে থামাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ওই গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে অর্থায়ন এবং তাদের সঙ্গে অংশীদারি বন্ধ করতে আহ্বান জানানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) প্রতি।

ইন্ডিয়ানা রাজ্যের রিাপবলিকান কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাঙ্কস এবং হাওয়াইয়ের ডেমোক্রেট কংগ্রেসওম্যান টুলসি গ্যাবার্ড গত ২০ নভেম্বর এই প্রস্তাব করেন। পরে প্রস্তাবটি হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।

‘বাংলাদেশে ধর্মের নামে পরিচালিত গোষ্ঠীগুলোর কারণে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি সৃষ্ট হুমকির কারণে উদ্বেগ প্রকাশ’ শীর্ষক ওই খসড়া প্রস্তাবে চারটি দফা রয়েছে। প্রথম দফায়ই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ এবং অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে।

দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ও অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের প্রতি জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির ও হেফাজতে ইসলামের মতো কট্টর গোষ্ঠীগুলোর হুমকির কথা উল্লেখ করে সেগুলোকে থামাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

তৃতীয় দফায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের অনুরোধকে গুরুত্ব দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি। চতুর্থ দফায় জামায়াত, শিবির ও হেফাজতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন এবং তাদের সঙ্গে অংশীদারি বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

১৯৭১ সালে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সৃষ্টি এবং ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ছাড়াও ধর্মে বিশ্বাসী নয়- এমন ব্যক্তিদের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, এক কোটিরও বেশি লোকের বাস্তচ্যুতি এবং দুই লাখ নারীর লাঞ্ছিত হওয়ার বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের কথা তুলে ধরে এতে বলা হয়েছে, প্রাণহানি, সম্ভ্রমহানি ও বাস্তচ্যুতির অনেক ঘটনাই ঘটিয়েছিল জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ইসলামের নামধারী সহযোগীরা।

প্রস্তাবে মিয়ানমারে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলমানের স্বেচ্ছায় ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ রয়েছে।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবে। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তথ্য উল্লেখ করে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল। তাদের হামলায় হিন্দুদের ৪৯৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হিন্দুদের ৫৮৫টি দোকানে হামলা বা লুট হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙচুর হয়েছে ১৬৯টি মন্দির।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সম্প্রতি হামলার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী জড়িত। এ ছাড়া বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও আহমদিয়া মুসলমানদের ওপর ধর্মীয় উগ্রবাদীরা হামলা চালিয়েছে। হেফাজতে ইসলাম অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে পুরোপুরি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে আন্দোলন চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবে। এতে বলা হয়েছে, দাবি মানা না হলে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদের হুমকি দিয়েছে হেফাজত।

প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা, অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের জন্য আসন্ন ও চলমান হুমকি। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ওই ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর হামলার ঝুঁকিতে আছে।

বাংলাদেশে জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার কর্মকাণ্ড নিয়ে ন্যাটোর স্থল কমান্ডের সাবেক অধিনায়ক জেনারেল জন ডাব্লিউ নিকোলসনের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয়টিও প্রস্তাবে আমলে নেওয়া হয়েছে।

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অব্যাহত হামলা, জামায়াত-শিবিরসহ কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলোর কারণে ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতার কারণে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থ ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলেও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসপন্থীদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বাংলাদেশে ইসলামের নামে কট্টরপন্থার প্রবণতা বাড়ার যোগসূত্র আছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। ধর্মের নামে উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ করতে এবং মানবাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের স্বার্থে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আরো সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত বলেও প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে।

বাসস জানিয়েছে, মার্কিন কংগ্রেসের দাফতরিক ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, পরে প্রস্তাবটি রেজ্যুলেশন ১১৫৬ হাউজ ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটিতে রেফার করা হয়েছে।

বিলে ইউনাইটেড স্টেট এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএইড) ও মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরকে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সকল গ্রুপের সঙ্গে সব ধরনের অংশীদারিত্ব ও তহবিল ব্যবস্থাপনা বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশে বিগত নির্বাচনের সময় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। যার ফলে ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৪৯৫টি হিন্দু বাড়ি ধ্বংস করা হয়। ৫৮৫টি দোকানে হামলা ও লুট এবং ১৬৯টি উপাসনালয় ভাংচুর করা হয়।

এদিকে, ফিলাডেলফিয়াভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক মিডল ইস্ট ফোরাম (এমইএফ) এক বিবৃতিতে এ বিলকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, ‘জামায়াতে ইসলামী একটি প্রভাবশালী ও বিপজ্জনক ইসলামী গ্রুপ, যাদের সহিংসতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।’

উল্লেখ্য, চলতি বছরের অক্টোবরে নির্বাচন কমিশন (ইসি) হাইকোর্টের একটি আদেশ অনুযায়ী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে।

২০১৩ সালের আগস্টে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক চাঁদপুরী এবং অপর ২৪ জনের দায়ের করা একটি রিট পিটিশনের প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট দলটির নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন।

Bootstrap Image Preview