Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করবে বিএনপি নেতারা!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০১৮, ০৭:০৭ PM
আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৮, ০৭:০৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোলা-১ (সদর)  আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন পেতে অনেকেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তবে এই আসনে দুজনের মনোনয়ন প্রায় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে আছে। তারা হলেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট থেকে দলের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ।

তবে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে জোটের শরীক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের সঙ্গে চলা 'টানাপোড়েন' দূর করে একক প্রার্থী বাছাই করাই বিএনপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। এদিকে আসনটি আন্দালিব রহমান পার্থকে ছেড়ে দিলে বিএনপির নেতারা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করবেন বলে প্রচার করছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।

ভিআইপি আসন হিসেবে খ্যাত ভোলা-১ আসনে আওয়ামী লীগের ৬ জন ও বিএনপির ৬ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০–দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ এ আসনে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে আছেন।

এদিকে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বিএনপির নেতারা বলেন, গোলাম নবীকে মনোনয়ন না দিয়ে বিজেপি থেকে কেউ মনোনয়ন পেলে তাঁরা আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করবেন—এসব কথা বলে বিএনপির অনেক নেতা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, এ আসনে তোফায়েল আহমেদ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হবেন। এখানে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা শক্ত। আর গোলাম নবী আলমগীর বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মইনুল হোসেন বলেন, মনোনয়ন না পেলে জেলা বিএনপির একটি অংশ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করবে, এ ধরনের প্রস্তাব অনেক আগে থেকে আওয়ামী লীগের কাছে রয়েছে। তবে তাঁরা কখনো এটা বিশ্বাস করেননি, আমলেও নেননি।

জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর বলেন, নিশ্চিত বিজয়ের জন্য তার মনোনয়ন পাওয়া উচিত। তবে কেন্দ্র যা চাইবে, তিনি সে নির্দেশমতো কাজ করবেন। আওয়ামী লীগ অনেক কথাই ছড়াতে পারে। সে দায় তাদের।

বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিভ বলেন, যাঁরা বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন না পেলে জোটের পক্ষে নির্বাচন করবেন না বলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করেন, তাঁরা আসলে বিএনপি করেন না।

উল্লেখ্য, সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত ভোলা-১ আসনে কোনো দলই এককভাবে আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি। ১৯৭৩ সালে এ আসনে প্রথম সাংসদ হন তোফায়েল আহমেদ। ১৯৭৯ সালে আসনটি চলে যায় বিএনপির নেতা মোশারেফ হোসেন শাজাহানের দখলে। এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৬ এবং ১৯৮৮ সালে নির্বাচিত হন সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির তৎকালীন মহাসচিব নাজিউর রহমান। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আবার নির্বাচিত হন তোফায়েল আহমেদ। ২০০১ সালে মোশারেফ হোসেন ও ২০০৮ সালে চারদলীয় জোটের শরিক দল বিজেপির আন্দালিভ রহমান এ আসনে জয়লাভ করেন। সর্বশেষ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন তোফায়েল।

এক নজরে ভোলা-১ আসন-

আওয়ামী লীগঃ তোফায়েল আহমেদ এই আসন থেকে দলের মনোনয়ন নিয়ে বহুবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী নির্বাচনেও মনোনয়ন চাইবেন দলের। ইতোমধ্যে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে দলীয় বিভিন্ন প্রোগ্রামে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট চাইতে শুরু করেছেন তিনি। দলীয় নেতারা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবার আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করার আহ্বান জানাচ্ছেন।

দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, ভোলা-১ আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট থেকে দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদের মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত। তিনি এ আসন থেকে দলের মনোনয়ন পেয়ে বহুবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। 

ভোলা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল ইসলাম জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোলায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। সেই লক্ষ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠন এবং পুনর্গঠনের মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে মহিলা সমাবেশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

নির্বাচন সামনে রেখে দলকে সুসংগঠিত করচেন জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মইনুল হোসেন বিপ্লব বলেন, ‘বিভিন্ন উপজেলায় কমিটি গঠন করছি। দলের হাজার হাজার নারী-পুরুষ নেতা-কর্মীরা ওই সব কমিটিতে অংশ নিয়েছেন। নির্বাচনের জন্য দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন প্রস্তুত।’

বিএনপিঃ এই আসনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিকদল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থর মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা।

বিজেপি নেতা পার্থ মনোনয়ন পেলে বিএনপির একটি অংশ তার পক্ষে নির্বাচন করবে বলেও দলীয় সূত্র জানায়। তারা বিজেপি নেতার সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। ওই অংশের নেতা-কর্মীদের সমর্থন নিয়েই ২০০৮ সালে জোট থেকে মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।     

পার্থর মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত হলেও বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর। তাকে এ আসনে জোট থেকে দলের মনোনয়নের দাবি জানিয়েছিলেন বিএনপি নেতাকর্মীদের একটি অংশসহ তার অনুসারীরা। তাদের দাবি ভোলা-১ আসনে জোট থেকে জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীরকে মনোনয়ন দিয়ে জোটের শরিক দল বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থকে ঢাকার কোনো আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়া হোক।

তবে, পার্থর মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার খবরে হতাশা বিরাজ করছে বিএনপির নেতা আলমগীর অনুসারিসহ দলের একটি গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে। তাদের মনোবলও যেন ভেঙে পড়েছে। দলীয় কার্যালয়টিও অধিকাংশ সময়েই বন্ধ থাকছে।

ভোলা শহরের উকিলপাড়ার এক হোটেল ব্যবসায়ী বিএনপি কর্মী আব্দুল মন্নান বলেন, শেষ পর্যন্ত বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা পার্থর পক্ষেই নির্বাচন করবে। তাদের সমর্থন পেয়েই ২০০৮ সালের নির্বাচনেও পার্থ এমপি হয়েছিলেন।

বিজেপিঃ অন্যদিকে ভোলায় বিজেপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চাঙ্গা ভাব। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে বিজেপির কার্যালয়ে। কার্যালয়ে এসে চা পান ও টেলিভিশ দেখে আলোচনায় ঝড় তুলছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

বিজেপির দলীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি ঢাকায় ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের এক সভায় ভোলা-১ (সদর) আসনে ২০ দলীয় জোট থেকে বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থকে দলের মনোনয়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সাংগঠনিকভাবেও দল আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী বলে দাবি বিজেপির নেতাকর্মীদের। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, বিজেপি নেতা পার্থ তার দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন। 

এ বিষয়ে বিজেপি ভোলা দলীয় কার্যালয়ে কথা হয় দলের কার্যকরী কমিটির সদস্য আলমগীর হোসেন মানিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য দল ও জোট প্রস্তুত।

বিজেপির সহযোগী সংগঠন জাতীয় যুব সংহতি ভোলা জেলা শাখার সহ-সভাপতি অনুপম দত্ত জানান, নির্বাচন সামনে রেখে দলকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। বিজেপি ও দলের সহযোগী সব সংগঠনের জেলা-উপজেলা, পৌরসভা ও ওয়ার্ডে কমিটি গঠন ও পুূনর্গঠন করা হচ্ছে। 

আর এবারও জয়ের আশা করছেন আন্দালিব রহমান পার্থ। তিনি বলেন, গত নির্বাচনে জোট থেকে মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছি। এবারও জোট থেকে মনোনয়ন পেয়ে জোটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এমপি নির্বাচিত হব।’ 

Bootstrap Image Preview