৩৬০ আউলিয়ার পুণ্য ভূমি সিলেট বিভাগের অন্যতম একটি জেলা মৌলভীবাজার। বিশেষ করে মনোমুগ্ধকর অসংখ্য দর্শনীয় স্থানের জন্য এ জেলার পরিচিতি বিশ্বব্যাপী। পাহাড়ি আকাবাঁকা সড়ক, সারি সারি চাবাগান পাহাড় টিলা জলপ্রপাতসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে এই জেলায়। তাই প্রতিদিন দেশ-বিদেশের হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মুখর থাকে এই জেলা। তাই বেড়ানোর জন্য ভ্রমণ পিপাসু দেশি বিদেশী পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ এখন এই জেলা।
প্রায় প্রতিদিনই দেশি-বিদেশী পর্যটকদের পদভারে মুখর থাকে প্রতিটি পর্যটন স্পট। বিশেষ করে শীত মৌসুমে প্রতিটি হোটেল মোটেল, কটেজ থাকে কানায় কানায় পূর্ণ। আর দর্শনীয় স্থানগুলো থাকে লোকে লোকারণ্য। আর এই জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার গহীন অরণ্যে লোক চক্ষুর অন্তরালে রয়েছে নয়নাভিরাম একটি জলপ্রপাত যা স্থানীয়দের কাছে হামহাম জলপ্রপাত নামেই পরিচিত। প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ভারত সীমান্ত ঘেষা গভীর বনে আবিষ্কৃত হওয়া বাংলাদেশের সর্ববৃহ জলধারার জলপ্রপাত ‘হাম-হাম‘ জলপ্রপাত দেখতে মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রায় প্রতিদিন সেখানে ছুঠে চলেছেন অসংখ্য দেশি-বিদেশী পর্যটক।
সরকারি উদোগে হামহাম জলপ্রপাতটি পরিণত হতে পারে মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের ন্যায় আরেকটি জনপ্রিয় আকর্ষণীয় জলপ্রপাত। দুর্গম পাহাড়ের ভিতর ১৫০ ফুট উচ্চতার এই জলপ্রপাতটি পাহাড়ী আদিবাসীদের কাছেও ‘হাম-হাম‘ জলপ্রপাত নামেই পরিচিত। পর্যটকদের কাছে এই স্থানটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে ইতোমধ্যে নানান উদোগ হাতে নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
কিভাবে আসবেন:
ঢাকা থেকে ট্রেনে অথবা বাই-রোডে শ্রীমঙ্গল আসতে হবে। শ্রীমঙ্গল থেকে ফোর- স্টোক সিএনজি অথবা জীপ গাড়ি বাড়ায় নিয়ে শ্রীমঙ্গল থেকে ভানুগাছ সড়ক হয়ে লাউয়াছড়ার ভিতর দিয়ে কমলগঞ্জ পৌঁছতে হবে। কমলগঞ্জ থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে কুরমা বনবিট এলাকার পশ্চিম দিকে চাম্পারায় চা-বাগান। চাম্পারায় চা বাগান এলাকা থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার ভেতরে এই হামহাম জলপ্রপাতের অবস্থান। হামহাম জলপ্রপাতে সরাসরি যানবাহন নিয়ে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই।তাই গহীন অরণ্যে প্রবেশের আগে তৈলংবাড়ী কিংবা কলাবাড়ী বস্তির আদীবাসী গাইডদের সাহায্য নিয়ে দুর্গম পাহাড়ের ভেতর দিয়ে হামহাম জলপ্রপাতে পৌঁছে যাবে।
পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা উঁচু-নিচু পথে ট্রেকিং করেই চলতে হয়। মাঝে মধ্যে সিমেন্টের ঢালাইয়ের ন্যায় দেখতে বড় বড় পাথর খন্ডের উপর দিয়ে চলতে হবে। পাথরের উপর দিয়ে সাবধানে না এগুলে দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তৈলংবাড়ী থেকে রওনা দেয়ার আগেই বাঁশের লাঠি স্থানীয় গাইডদের সহযোগিতায় নামমাত্র মূল্যে কিনে নিতে পারেন। কারণ উঁচু-নিচু পাহাড় পাড়ি দিতে হলে আপনাকে বাঁশের একটি লাঠি নিয়ে ট্রেকিং করে করে যেতে হবে।
যেতে যেতে দেখা মিলবে জারুল, চিকরাশি, কদমের চারার ফাঁকে ফাঁকে হাজারো প্রজাপ্রতি ডানা মেলে উড়ে বেড়ানোর নয়নাভিরাম দৃশ্য।ডুমুর গাছের শাখা আর অসংখ্য বেত বাগানতো রয়েছেই ভাগ্য ভালো থাকলে পথেই দেখা মিলবে চশমা পড়া বানরের। চারিদিকে গাছ-গাছালি আর প্রাকৃতিক বাঁশবনে ভরপুর গোটা এলাকা। ডলু, মুলি, মিরতিঙ্গা, কালী ইত্যাদি বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ বাগানের রাজত্ব আপনাকে দিবে বাড়তি আনন্দ। পাথুরে পাহাড়ের ঝিরি ঝিরি পথে হেটে যেতে যেতে পাখীর সু-মধুর কল-কাকলী ভাল লাগার অনুভুতিতে ভরিয়ে দিবে পর্যটকদের মন। দূর থেকে শুনা যাবে বিপন্ন বনমানুষ, উল্লুক, গিবসনের ডাক। এভাবেই হাঁটতে হাঁটতে একসময় পৌছে যাবেন কাঙ্খিত হামহাম জলপ্রপাতে। কাছাকাছি পৌছা মাত্র শুনতে পাবেন জলপ্রপাতের শা শা শব্দ।
জলপ্রপাতের কাছে পৌছেই দেখবেন ১৩০ ফুট উচুঁ পাহাড় থেকে অঝোর ধারায় পানি পরার শা শা শব্দ। জল পড়ার সেই অপূর্ব দৃশ্য দেখে কয়েক মিনিটের জন্য হলেও চোখ ফেরাতে পারবেন না। মৌলভীবাজার জেলার জেলা প্রশাসক তোফায়েল আহমেদ সারাবাংলাকে জানিয়েছেন,প্রকৃতি ঠিক রেখে এই পর্যটন কেন্দ্রটিকে আধুনিকায়ন করতে সরকারি উদ্যোগে রাস্তা সংস্কার কাজ শীগ্রই শুরু করা হবে।
কোথায় থাকবেন/খাবেন:
হামহাম জলপ্রপাতের ধারে কাছে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই!তাই যেখান থেকেই আসেন অন্তত প্রথমদিনটা শ্রীমঙ্গলে কাটাতে পারেন এক সুযোগে দেখে নিতে পারেন শ্রীমঙ্গলের চা-বাগান বৌদ্ধভূমি একাত্তর,বিটিআরই সহ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। পরের দিন খুব ভোরে ওঠে নাস্তা সেরে রওনা দিতে পারেন হামহাম জলপ্রপাতের পথে। যেহেতো শ্রীমঙ্গলে থেকেই যেতে হবে তাই থাকার জন্য শ্রীমঙ্গলে রয়েছে কম দাম থেকে শুরু করে পাঁচ তারকা হোটেল গ্রান্ড সুলতানও রয়েছে। তবে মোটামোটি বাজেটের মধ্যে শহরের চৌমোহনায় রয়েছে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সহ হোটেল স্কাই পার্ক,হোটেল মহসিন প্লাজা, হোটেল সুলতান সহ প্রায় পঞ্চাশটির মতো হোটেল।
আর যারা একটু নিরিবিলি পরিবেশে জঙ্গলে থেকে বিভিন্ন পশু পাখির শব্দ উপভোগ করতে চান তাদের জন্যও শহর থেকে একটু দূরেই রয়েছে টি রিসোর্ট জঙ্গল বাড়ি রিসোর্ট,লেমন গার্ডেন রিসোর্ট, এস কেডি আমার বাড়ি ইত্যাদি। প্রায় বেশিরভাগ হোটেল রিসোর্টে তাদের নিজস্ব রেস্টুরেন্টে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে তবে টাকা সাশ্রয় করতে হলে শহরে হোটেল পানসি, কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্ট, হোটেল পাঁচ ভাই ছাড়াও আরো অসংখ্য হোটেল রয়েছে।