Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৬ সোমবার, মে ২০২৪ | ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কুমিল্লা-৩: নৌকার প্রার্থী হতে চান ১৫ জন, অভ্যন্তরীণ কোন্দল

আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০৭:৫১ PM
আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০৭:৫১ PM

bdmorning Image Preview


কুমিল্লা-৩ সংসদীয় আসনের মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে দ্বিধা-বিভক্তি ছড়িয়ে পড়েছে। এখানে দলের কমিটি ও পাল্টা কমিটির কারণে নেতা-নেতৃত্বে দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। এতে বিগত উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দল ও জোটের মনোনীত ও সমর্থিত অনেক প্রার্থীকে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সাথে লড়তে হয়েছে।

কোন্দলে জ্বলছে অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ নিয়ে সেই বিভক্তি আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। এখনই নেতা-নেতৃত্বে কোন্দল নিরসন করা না গেলে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাঠে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত শনিবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মননোয়ন পত্র বিতরণ শুরু করলে কুমিল্লা-৩ মুরাদনগর আসনে ১৫ জন প্রার্থী নৌকার মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহ করেছেন।

তারা হলেন- বর্তমান স্বতন্ত্র এমপি ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন এফসিএ, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হানিফ সরকার, ম. রুহল আমিন, কেন্দ্রীয় আ’লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ সম্পাদক আ.খ.ম গিয়াস উদ্দিন, মুরাদনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম খসরু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ আহাম্মদ হোসেন আউয়াল, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সদস্য সচিব ড. এহসানুল আলম সরকার কিশোর, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, উপজেলার শ্রীকাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অলিউল্লাহ পলাশ, আবুল কালাম আজাদ, জাহাঙ্গীর আলমসহ ১৫ জন।

মুরাদনগর উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন, মুরাদনগর থানা ও বাঙ্গরা বাজার থানা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৩ আসন। এ আসনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে আ’লীগের রাজনৈতিক মাঠ। দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগে দেখা দিয়েছে কোন্দল ও বিভক্তি। দলীয় কোন্দল ও বিভক্তির কারনে ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা: ওয়ালী আহাম্মদের পর আর জয়ের মূখ দেখেনি দলটি।

১৯৭৯ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০১৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত বারবার প্রার্থী বদল করেও এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি দলীয় কোন্দলের কারনে। এবারও সংসদ নির্বাচনে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে আ’লীগ।

আ’লীগ দলীয় সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা-৩ মুরাদনগর আসনে নেতৃত্বের আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন ও কুমিলা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকারের মধ্যে চলছে এই বিরোধ। এ বিভাজন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট দুই প্রার্থীর মধ্যে ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন গত ৫ বছরে মুরাদনগর উপজেলা ২০১৪ সাল ৫ই জানুয়ারী আমি নির্বাচিত হয়ে গত ৫ বছরে মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানা প্রতিষ্ঠা, শ্রীকাইল কলেজ সরকারীকরণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ৮  থেকে ৩২ মেঘাওয়াটে উন্নতি, ৩২১০টি সোলার প্যানেল স্থাপন, মুরাদনগরে হাটবাজার, কবরস্থানে ৪৬৬টি আলোকিত সোলা স্ট্রীট লাইট স্থাপন, ১৪৭টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় বহুতল নতুন ভবন নির্মান ও মেরামত, ৬৬৫টি মাধ্যামিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা ভবন নির্মান ও মেরামত, ৬৭টি ব্রিজ ও কালর্ভাট নির্মান, কোম্পানীগঞ্জ-গুঞ্জর সড়ক, কোম্পানীগঞ্জ-কুলুবাড়ী- পদুয়া সড়ক, টনকি-বাইড়া-বইলাবাড়ী সড়ক, টনকি- যাত্রাপুর সড়ক, পান্নারপুল- বাখরাবাদ সড়ক, মীর্জাপুর- কামেল্লা- নোয়াগাও সড়ক, মেটাংগড়-শ্রীকাইল সড়ক, কোম্পানীগঞ্জ-মুরাদনগর-হোমনা ২৪ কিলোমিটার, কোম্পানীগঞ্জ-গাজিরহাট সড়ক-১৯ কিলোমিটার, মুরাদনগর-ইলেটগঞ্জ-৩৫ কিলোমিটার, রাজাচাপিতলা-বিষ্ণুপুর-ব্রাক্ষণচাপিতলা ১৭ কিলোমিটার, কোম্পানীগঞ্জ-মুরাদনগর- রামচন্দ্রপুর সড়কসহ বিভিন্ন আঞ্চিলিক সড়ক নির্মান ও পূর্ননিমান, মুরাদনগর সরকারী হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন ও সংস্কার, মিনি স্টেডিয়াম নির্মান, উপজেলা স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, মুরাদনগর জিরো পয়েন্টে দোয়ল চত্তর নির্মান, মুরাদনগর কেন্দ্রীয় কবরস্থানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে উন্নায়ন করা হয়েছে।

২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পূর্ন আর ২টি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র স্থাপন, আইটি রিসোর্স সেন্টার, মুরাদনগর উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মান, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, শিল্পকলা একাডেমী, টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, পাহাপুর ইউনিয়ন পান্তি বাজার পুলিশ ফাড়ি স্থাপন, জেলা পরিষদ ৪তলা মার্কেট, কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মান, মুরাদনগর কাঁচা বাজার সংস্কার, পরিবার পরিকল্পনা অফিস ভবন এবং সেন্টার, ১০০০ মে,টন ধারণ ক্ষমতাসম্পূর্ন খাদ্য গুদাম ও মডেল মসজিদ নির্মানসহবিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে। অপরদিকে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার রয়েছে উপজেলা আ’লীগের মূল ধারার নেতাকর্মীদের নিয়ে। -এ দ্বন্দ্বে আগামী সংসদ নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের তৃণমুল নেতারা।

এ দিকে বড় দুই নেতার এই দ্বন্দের কারনে দল থেকে তৃতীয় কেউ মনোনয়ন পাওয়ার আশঙ্কা থাকায় ও গ্রহনযোগ্য প্রার্থী চাওয়ায় কারণে এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনায়পত্র সংগ্রহ করেছেন ১৫ জন। দুই নেতার দ্বন্দ মেটাতে না পারলে এবারও এই আসনটি হারাতে পারে আওয়ামী লীগ এমনটাই ধারনা তৃণমূলের কর্মীদের।

মূলত ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন কুমিল্লা উত্তর জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার। পরবর্তিতে তা পরির্বতন করে ১৪ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীকে।

বিদ্রোহী হিসেবে মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন মুরাদনগর আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে ড. এহসানুল আলম সরকার কিশোর। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের সঙ্গে। ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়ে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয় পান। ফলে মুরাদনগর ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকারের নেতৃত্বের আধিপত্য ও দ্বন্দ্ব আরো একধাপ জায়গা করে নেয়। ইউনিয়নয় পরিষদ নির্বাচন নিয়ে দুই জনের মধ্যে এই দ্বন্দ্বের কারনে নৌকা মার্কার প্রার্থী পরাজিত হয়।

ইউসুফ হারুনেরও ব্যক্তি ইমেজ রয়েছে। ইউসুফ হারুন এ আসনে মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হয়ে উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখবেন বলে আশা ব্যক্ত করছেন দলের নেতা-কর্মীরা।

অন্যদিকে, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার তৃনমূল নেতা-কর্মীদের নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ। আটঘাঁট বেঁধে নেমে পড়েছেন প্রচারণায়। তিনি মুরাদনগরের উন্নয়নের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন দিবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করছেন দলের নেতা কর্মীদের কাছে। মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের তুঙ্গে থাকা বিভেদ-দ্বন্দ্ব শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা নিয়ে সাধারণ জনগণ এবং ভোটারদের মাঝে চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা ও চাপা আতঙ্ক।

আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ইউছুফ আব্দুল্লাহ হারুন এমপি বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আসন্ন নির্বাচনে আমাদের বিজয় অর্জন করতে হবে। আওয়ামী লীগ একটি বড় দল, এখানে নেতাও অনেক বেশি। তাই নেতা-নেতৃত্বে মতবিরোধ কিংবা মান-অভিমান থাকতেই পারে। সময় মতো সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে।

কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, আওয়ামী লীগ যারা করে তাদের দলের জন্য সকলের ত্যাগ আছে। সবাইকে নিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে রাজনীতি করি।

তিনি বলেন, আমি নৌকা প্রতীকের পক্ষে, তাই উপজেলা আ’লীগ আমাকে নিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করছে। গত নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে পরে দলের স্বার্থে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে মহাজোটকে (লাঙ্গল) এই আসনটি ছেড়ে দেই। ফলে দলে আমার ভাবমূর্তি যেমন অক্ষুন্ন তেমনি আওয়ামী লীগের কর্মীদের কাছে বেড়েছে অতিমাত্রায় গ্রহণযোগ্যতা। কারণ দলীয় শৃঙ্খলা আমি ভঙ্গ করিনি।

Bootstrap Image Preview