Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চট্টগ্রাম-১১: আ.লীগে একাধিক, বিএনপি-জাতীয় পার্টিতে একক প্রার্থী

বশির আলমামুন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০৬:১৩ PM
আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০৬:১৩ PM

bdmorning Image Preview


বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জনগুরুত্বপূর্ণ আরেকটি আসন হচ্ছে চট্টগ্রাম-১১। ১০ আসনটি ভেঙে এ আসনটি করা হয়। ৫ লাখ ১৪ হাজার ৬৮০ ভোটারের এ আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৯১ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগে এমএ লতিফ। তার নিকটতম প্রতিদ্বদ্বী বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী পান ১ লাখ ৪১ হাজার ৯৪৬ ভোট।

২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে এমএ লতিফ বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি হন। আগামী নির্বাচনে এমএ লতিফ দলের শক্ত মনোনয়নপ্রত্যাশী। আওয়ামী লীগের আরও একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকলেও বিএনপি একক প্রার্থী নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ আসনে জাতীয় পার্টিও রয়েছে ভালো অবস্থানে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হচ্ছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম।

দেশের অর্থনীতির প্রাণ চট্টগ্রাম বন্দর, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, রেলওয়ে স্টেশন, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, দুটি রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনা চট্টগ্রাম-১১ এলাকায় পড়ায় এ আসনের গুরুত্ব অনেক। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এ আসন থেকে কে প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমএ লতিফ ছাড়াও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও নগর আওয়ামী লীগের সদস্য রোটারিয়ান মোহাম্মদ ইলিয়াছ মাঠে রয়েছেন।

আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে খোরশেদ আলমকে চূড়ান্ত করা হলেও শেষ মুহূর্তে চট্টগ্রাম চেম্বারের একাধিকবার নির্বাচিত সভাপতি এমএ লতিফ মনোনয়ন পান। দীর্ঘ সময় এমপি থাকায় সরকারি বরাদ্দে উন্নয়নের পাশপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেশ কিছু কাজ করে আলোচিত হন এমএ লতিফ। বিভিন্ন পয়েন্টে বছরব্যাপী হাজার হাজার গরিবের মাঝে ট্রাকে ট্রাকে ন্যায্যমূল্যের চাল-ডাল-তেল-চিনিসহ ভোগ্যপণ্য বিতরণ করে প্রশংসা কুড়ান।

সর্বশেষ নিজের ছবির সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখমন্ডলের ছবি লাগিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগে লতিফের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। শেষ পর্যন্ত অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। আগামী নির্বাচনে হ্যাটট্রিক চান এমএ লতিফ এমপি।

এমএ লতিফ বলেন, ১০ বছর পর আমাকে আওয়ামী লীগে নবাগত বলার সুযোগ নেই। আমি এ দল ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করেছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ আমাকে কতটুকু ধারণ করেছে জানি না। বঙ্গবন্ধুকন্যা ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আমার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। জনগণের কল্যাণে কাজ করে সে আস্থা ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। আমি আবারও মনোনয়নের জন্য কাজ করছি না। কাজ করছি জনকল্যাণে।

খোরশেদ আলম বলেন, এমএ লতিফকে দু'বার দল মনোনয়ন দিলেও তিনি সেই মর্যাদা রক্ষা করেননি। মহেশখালে বাঁধ দিয়ে এলাকাবাসীকে জলাবদ্ধ করেছেন, দুর্ভোগে ফেলেছেন। আমি আন্দোলনের মাধ্যমে সেই বাঁধ অপসারণ করেছি। এলাকাবাসীকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে খানিকটা হলেও মুক্তি দেয়ার চেষ্টা করেছি। জনপ্রতিনিধির কাজ জনকল্যাণ করা।

আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, আমি বন্দর এলাকার সন্তান। আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে বন্দরের উন্নয়নেও বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করছি। দলের বাইরে থেকে এসে কেউ সুযোগ-সুবিধা লুটে নেবে, দলের স্বার্থ চিন্তা করবে না- সে ধরনের প্রার্থী এলাকার মানুষ ও দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা চান না।

অপরদিকে, বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। জেলে যাওয়ার আগে তিনি বলেছিলেন, বর্তমান বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সবক'টি ওয়ার্ড চট্টগ্রাম-১০ আসনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিএনপি বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে গেলে এ আসন থেকে আমি নির্বাচন করব।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আরো বলেছিলেন, কর্ণফুলীতে টানেল নির্মাণ, মেরিনড্রাইভ প্রকল্পসহ বড়-বড় সব প্রকল্পই বিএনপির আমলে নেয়া। বিএনপি আরেকবার ক্ষমতায় আসতে পারলে অনেক আগেই এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়ে যেত। ৮ বছর পার করে আওয়ামী লীগ এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

খসরু বলেছিলেন, শুধু বন্দর-পতেঙ্গা আসন নয় পুরো চট্টগ্রামেই বিএনপির আমলেই সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুও বিএনপির করা। আগ্রাবাদে যে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার এখন দৃশ্যমান সেই সেন্টারের জন্য ১০০ কোটি টাকার জায়গা প্রতীকী মূল্যে বিএনপিই দিয়েছিল। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল যে মহীরুহে পরিণত হচ্ছে এ হাসপাতালের জন্যও ১০০ কোটি টাকার জায়গা বিএনপি দিয়েছিল প্রতীকী মূল্যে।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমকে বলেন, বন্দর-পতেঙ্গা আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য আমাকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন স্যার (পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ)। কারণ ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগত নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে যে ৭০টি আসন দেয়ার কথা ছিল এর মধ্যে বন্দর-পতেঙ্গা আসনটি ছিল। কিন্তু পরে ৩৫টি আসন দেয়া হয়। যে কারণে আসনটি আমার হাতছাড়া হয়।

তিনি বলেন, আশা করি আগামী নির্বাচনে অবশ্যই জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয়া হবে জোটগত নির্বাচন হলে। জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করলে এ আসন থেকে নির্বাচন করব।

তিনি আরও বলেন, আমার জন্ম এ নির্বাচনী এলাকায়। আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে। সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় বন্দর-পতেঙ্গা আসন থেকে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হবে এটাই আমার বিশ্বাস।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনটি বৃহত্তর চট্টগ্রামে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৮ সালে পুনর্গঠিত হওয়ার পর থেকেই আসনটি আওয়ামী লীগের কব্জায়।

Bootstrap Image Preview