Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ রবিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চট্টগ্রাম-১০: আ'লীগে আফছারুল ও মনজুরের দৌড় ঝাপ, বিএনপিতে মাঠে আছে নোমান 

বশির আলমামুন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি 
প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০২:২৭ PM
আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০২:২৮ PM

bdmorning Image Preview


চট্টগ্রাম শহরের মূল ভু-খন্ড কোতোয়ালী-পাচঁলাইশ নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৯ আসনের মত চট্টগ্রাম-১০ আসনটি ও রাজনীতির মাঠে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। দলীয় ও জাতীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে এখানকার নেতা কর্মীরা দলের জন্য নিবেদিত এবং ত্যাগ স্বীকার করে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ২৪, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড এবং হালিশহর-ডবলমুরিং থানা নিয়ে পুনর্গঠিত আসনটি হচ্ছে চট্টগ্রাম-১০।

চার লাখ ৫৭ হাজার ৯৭৯ ভোটার অধ্যুষিত এ আসনে ২০০৮ সালে এক লাখ ৬৪ হাজার ভোট পেয়ে বিজয়ী হন সাবেক মন্ত্রী নগর আ’লীগের সহ-সভাপতি ডা. আফছারুল আমীন। তার নিকটতম প্রতিদ্ধী বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান পান এক লাখ ৪১ হাজার ৯৪৬ ভোট। প্রথম মেয়াদে বিজয়ী হওয়ার পর তাকে প্রথমে নৌপরিবহন, পরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী করা হয়।

২০১৪ সালে বিনা ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর তিনি কোনো মন্ত্রিত্ব পাননি। আগামী নির্বাচনে আফছারুল আমীন মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ ছাড়া এ আসন থেকে সাবেক মেয়র মনজুর আলম সহ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্তত ছয়জন নেতা রয়েছে।  তাদের বিপরীতে বিএনপি একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছে আবদুল্লাহ আল নোমান নিয়ে মাঠে রয়েছেন।

তবে আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপিতে যাওয়া, পরে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়া সাবেক সিটি মেয়র এম মনজুর আলমও নৌকার মাঝি হতে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছে। আওয়ামী লীগের আরও যারা মনোনয়ন চাচ্ছেন তাদের মধ্যে আছেন- প্রয়াত এমএ আজিজের ছেলে সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক সৈয়দ মাহমুদুল হক, চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু এবং নগর যুবলীগ নেতা ফরিদ মাহমুদও। বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান এ আসনে দলের একক প্রার্থী। নগর জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি ওসমান খানও এ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে আছেন।

বর্তমান এমপি ডা. আফছারুল আমীন বলেন, গত ১০ বছরে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করেছি। শহর এলাকায় এমপিদের জন্য উন্নয়ন বরাদ্দ তেমন একটা থাকে না। এরপরও বিশেষ বরাদ্দ ও নানাভাবে এলাকার উন্নয়নে সচেষ্ট ছিলাম। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলবাজি হতে দেইনি। মানুষের সমস্যার সমাধান করেছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে ব্রিজ-কালভার্ট, নালা-নর্দমার উন্নয়ন করেছি। হালিশহর হাউজিং এস্টেট ছিল অবহেলিত।

আফছারুল আমীন বলেন, ‘মন্ত্রী বা এমপি হিসেবে নয়, আমি একজন রাজনৈতির কর্মী হিসেবে জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার সব নেতার আছে। মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী।’

চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম বলেন, আ’লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার আশায়  ফরমপত্র সংগ্রহ করেছি। যদি নেত্রী মনোনয়ন দেন তালে নির্বাচন করব।

তবে তার ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে মনজুর আলমের নাড়ির সম্পর্ক। তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এলাকায় সামাজিক ও উন্নয়ন কার্যক্রম চালাচ্ছেন দীর্ঘদিন থেকে। কিন্তু মাঝখানে অভিমান থেকে বিএনপির সমর্থন নিয়ে সিটি মেয়র নির্বাচন করেছিলেন। মেয়রও হয়েছিলেন। নাগরিক সেবা দেয়ার সুযোগ পান তিনি। দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে প্রতিতদ্বন্ধিতা করলেও ভোটের দিন সরে দাঁড়ান। ইদানীং মনজুর আলমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের যোগাযোগ হচ্ছে। আওয়ামী লীগ যদি সুযোগ দেয় তবে তিনি তা গ্রহণ করবেন। ছাত্রলীগ থেকে রাজনীতি করা মহিউদ্দিন বাচ্চুও  মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন।

এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী এই যুবলীগ নেতা বলছেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা তারুণ্যকে প্রাধান্য দেবেন আগামী নির্বাচনে। 
সৈয়দ মাহমুদুল হক ১৯৭০ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রামে সক্রিয় ছিলেন। পরে তিনি যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দেন। ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেন। এ ঘটনায় ‘চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র’ মামলার আসামি ছিলেন মাহমুদুল হক। ওই মামলায় চার বছর জেল খাটেন মাহমুদুল হক। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাইব।

চট্টগ্রাম নগর যুবলীগ নেতা ফরিদ মাহমুদ বলেন, ‘আমি শহীদ পরিবারের সন্তান। ওয়ার্ড ছাত্রলীগ থেকে রাজনীতি শুরু। ৩০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও ১০ বছর ধরে সামাজিক কর্মকাণ্ড করছি। এ কারণেই আমি চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে মনোয়ন প্রত্যাশা করছি।’

চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসন থেকে ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির এমপি ছিলেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। বিএনপির বর্ষীয়ান এই নেতা দুই মেয়াদে ছিলেন মন্ত্রীও। সর্বশেষ তিনি মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু ২০০৮ সালে আসনটি ভেঙে দু’টি করার পর চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-ডবলমুরিং) আসনে তিনি বিএনপির প্রার্থী হয়ে হেরে যান আওয়ামী লীগের আফছারুল আমীনের কাছে। এবারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি এ আসন থেকে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন।

নোমান বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির সাত দফা এবং ১১ দফা দাবি যদি সরকার মেনে নেয় এবং ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে গেলে চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে নির্বাচন করব। ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নির্বাচনে না গেলে পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। তবে বড় কথা হচ্ছে, চট্টগ্রামে যে অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে তার বেশির ভাগই হয়েছে বিএনপির আমলে।

কর্ণফুলী তৃতীয় সেতু, চট্টগ্রাম আদালত ভবন, জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ, চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়াম, চাক্তাই খাল খনন ও তলাপাকাকরণ, এশিয়ার অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড স্থাপন, অনন্যা আবাসিক এলাকা, কল্পলোক আবাসিক এলাকা- সব প্রকল্পই বিএনপি সরকারের আমলে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

তিনি বলেন ১৯৯১ সালের নির্বাচনী ইশতেহারেও চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী ঘোষণার প্রতিশ্রুতি ছিল। সে অনুযায়ী পরে বিএনপি সরকার গঠন করলে মন্ত্রী সভায় চট্টগ্রাম ‘বাণিজ্যিক রাজধানী’ এই প্রস্তাব পাস হয়। তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে আমাকে জোর করে হারানো হয়েছে। এ সরকারের আমলে কেবল রুটিন উন্নয়ন হয়েছে। নোমান বলেন, দলমত নির্বিশেষ চট্টগ্রামের মানুষ আমাকে ভালোবাসে।

নগর জাতীয় পাটির সহসভাপতি ওসমান খান বলেন, ‘আমি ২০০১ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলাম এ আসনে। এ আসনের সবকিছু আমার জানা। নির্বাচনের জন্য এরই মধ্যে দল ও সেন্টার কমিটি গোছানোর কাজও শুরু করে দিয়েছি। তবে জোটগত নির্বাচন হলে দল যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে সেভাবেই কাজ করব।’

Bootstrap Image Preview