কৃষ্ণসাগরের তলদেশে বিশ্বের প্রাচীনতম জাহাজের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেছে। ব্ল্যাক সি ম্যারিটাইম আর্কিওলজি প্রজেক্ট নামের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা প্রকল্প এ সন্ধান পেয়েছেন। কার্বন ডেটিং পদ্ধতিতে জানা গেছে যে ২ হাজার ৪০০ বছর আগের জাহাজটি এখন পর্যন্ত মানুষের জানা ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাচীন জাহাজ।
প্রকল্পটি তিন বছর ধরে কৃষ্ণসাগরের তলদেশে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান চালাচ্ছে। এই অনুসন্ধানে বিশেষ এক ধরনের ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে, যেগুলো সাধারণত সমুদ্রের তলদেশে তেল ও গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানে ব্যবহৃত হয়। এই সময়কালে ৬০টির বেশি জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পেয়েছেন গবেষক দল। এর মধ্যে অনেকগুলো রোমান সাম্রাজ্যের সময়ে তৈরি, অনেকগুলো সপ্তদশ শতাব্দীর কসাক নৌবাহিনীর ব্যবহৃত জাহাজ বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
জাহাজটির নকশা, নির্মাণশৈলী ও সময়কাল থেকে গবেষক দল নিশ্চিত করেছে, এটি গ্রিক আমলের তৈরি। গ্রিক ধ্রুপদি সময়ে পণ্যবাহী বাণিজ্য জাহাজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে এটি। সে সময়ের বিশ্বে কৃষ্ণসাগর গ্রিক কলোনি ঘেরা আন্তর্জাতিক বিশ্ববাণিজ্যের প্রধান রুট ছিল। বুলগেরিয়ার উপকূল থেকে প্রায় ৫০ মাইল দূরে সমুদ্রের ২ হাজার মিটার (সাড়ে ৬ হাজার ফুট) গভীরে এটি পাওয়া যায়। সাগরের এই গভীরতায় অক্সিজেন থাকে না। এই কারণে জৈব বস্তু সেখানে হাজার হাজার বছর অবিকৃত থাকে। এই জাহাজটিকেও মোটামুটি অবিকৃত অবস্থাতেই পাওয়া গেছে। ৭৫ ফুট দীর্ঘ জাহাজটিতে এর মাস্তুল, রাডার, বসার বেঞ্চসহ প্রায় অনেক কিছুই একবারে অবিকৃত রয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।
প্রকল্পের প্রধান গবেষক দক্ষিণ ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন অ্যাডামস বলেন, প্রাচীনকালের একটি জাহাজ অবিকৃত অবস্থায় পড়ে আছে, তাও আবার সাগরের ২ হাজার মিটার গভীর পানিতে—এটা এমন এক ঘটনা, যা আমি নিজে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। এই আবিষ্কার প্রাচীন বিশ্বের জাহাজ নির্মাণ ও সমুদ্রপথে যাতায়াত বিষয়ে জানার পরিধি বিস্তৃত করবে। এখনকার অনেক ধারণা বদলেও যেতে পারে।