মাছে ভাতে বাঙালি। কিন্তু মাছ ভাতের সেইদিন কি আর এখন আছে। একসময় বাঙালির মাছের ছিল এক এতিহ্যবাহী সময়। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে মাছের সেই সোনালী দিন। বাংলার আনাচে-কানাচে তাও কিছুটা দেখা মিলে নানা রকম মাছের। কিন্তু রাজধানী ঢাকাতে দেশি বরফ ছাড়া টাটকা মাছ পাওয়াটা অনেকটা অমাবস্যার চাঁদের মত হয়েছে। কিন্তু যারা ঢাকায় বসেই দেশি টাটকা সদ্য নদী থেকে ধরে আনা মাছের স্বাদ নিতে চান তারা সময় করে চলে যেতে পারেন ইস্টার্ণ হাউজিং বেড়িবাঁধ বাজারে।
যেখানে আপনারা পাবেন হরেক রকম দেশি তাজা মাছ। ভাসমান এই বাজারটি বসে সকাল ও বিকেল দু’বেলা। সকালবেলা সূর্য উদয়ের সাথে সাথে সাথে আড়তদাররা পসরা সাজিয়ে বসেন নানা রকম মাছ নিয়ে। আর বিকেল বেলাও বসে বাজার। বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই বাজার।
এখানকার সব মাছই ধরা হয় বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে চলা তুরাগ নদী থেকে। এখানে আপনি পাবেন কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসা মাছগুলো। যেসব মাছগুলো সচারাচার ঢাকার বাজারগুলোতে পাওয়া অনেকটা ভার। এই বাজারে আপনি পাবেন চাপিলা, বৈচা, চাটুয়া, চাঁদা, গোল চাঁদা, আইড়, গুলশা, পাবদা, দেশি পুঁটি, সরপুঁটি, তিতপুঁটি, বাইলা, মেনি, শিং, কৈ, টাকি, শোল, ফলই, চেলি, মলা, ঢেলা, ডানকিনা, বাচা, বাটা, রিটা, বাঘা আইড়, খৈলশা, ছোট টেংরা, বড় টেংরা, চান্দা, কাজলি, ছোটচিংড়ি, বাতাশি, বড় বাইন, তারা বাইন, শালবাইন, বোয়ালসহ আরও নানা রকম দেশি মাছ।
এই বাজারে মাছের পাশাপাশি পাবেন বিরুলিয়া থেকে নিয়ে আসা নানা রকম টাটকা সবজি। ঢাকার বাজারগুলোতে সাধারণত কয়েক হাত বদল হয়ে সবজি আসে যার কারণে হাত বদলের সেই ছাপ পড়ে সবজির উপরে। তবে এই এই বাজারের টাটকা সবুজ সবজি দেখে আপনার শহুরে জীবনে কিছুটা হলেও গ্রামীণ ছোঁয়া পাবেন।
এই বাজারে আপনি পাবেন, ধুন্দল, পটল, পাতাকপি, ফুলকপি, ঢেঁড়স, কচুরমুখী, ঝিঙ্গা, আলু, কহি, ডাটা, ওস্তা, বেগুন, শিম, কাঁচা কলা, বরবটি, মুলা, লাউ,ধনেপাতা, কাকরোল, গোল বেগুন, শসা, পাকা পেপে, কাচা পেপে, জাম্বুরা, পাকা কলা, জলপাইসহ নানা রকমের সবজি ও ফল।
এ বাজারের সবজি ও মাছের মান অনুযায়ি দাম অনেকটাই কম। তবে নির্ধারিত কোনো মূল্যতালিকা না থাকায় বিক্রেতারা ইচ্ছেমতই দাম হাকায়। তবে আপনি বুদ্ধিমত্তা খাটিয়ে দাম-দর করতে পারলে মান অনুযায়ী অনেকটা কম দামেই পাবেন এখানকার মাছ ও সবজি।
এই বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী শ্যামল কান্তি বর্মণ বিডিমর্নিংকে বলেন, আমি এই বাজারে প্রায় ২০ বছর ধরে ব্যবসা করছি। তিনি বলেন এই বাজারের বিশেষত্ব হচ্ছে এখানে আপনি সরাসরি তুরাগ নদী থেকে ধরে আনা টাটকা মাছ পাচ্ছেন যা সচারাচার ঢাকার অন্যান্য বাজারে পাওয়া যায় না বলেই চলে। তিনি বলেন, এখন তাও কিছুটা কম মাছ পাওয়া যাচ্ছে তবে শীত পড়া শুরু করলে পানিও কমতে শুরু করবে তখন আরও মাছ পাওয়া যাবে।
সিরাজুল ইসলাম নামের আরেক ব্যবসায়ী বিডিমর্নিংকে বলেন, আমাদের এই বাজারে সকাল ও বিকেলে দেশি টাটকা বরফ ছাড়া মাছের বিশাল সমাহার থাকে। তিনি বলেন, ঢাকার মানুষ ফরমালিনের যন্ত্রণায় অনেকটাই অতিষ্ট। তাই টাটকা মাছের জন্য এই বাজারের অনেক দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ঘুরতে এসে মাছ কিনে নিয়ে যায়। তিনি বলেন মান অনুযায়ী এখানকার মাছের দাম অনেক কম।
সবজি বিক্রেতা রুহুল আমিন বিডিমর্নিংকে বলেন, এখানকার বাজারে সব সবজি সরাসরি আমরা বিরুলিয়া থেকে নিয়ে আসি। এখানে হাত বদল না হওয়ায় ক্ষেত থেকে সরাসরি সবজি আনা হয় যার কারণে এখানকার ক্রেতারা টাটকা সবজি পায়। তিনি বলেন, এ বাজারের সবজি বিষমুক্ত সবজি।
যেভাবে যাবেন এই বাজারেঃ আপনি যদি ঢাকার বাসিন্দা হন যান্ত্রিক জীবনে যদি কিছুটা হাপিয়ে উঠেন তাহলে সময় করে প্রিয়জনকে নিয়ে চলে যেতে পারেন ইস্টার্ণ হাউজিং বেড়িবাঁধ বাজারে। ঢাকার যেই প্রান্তেই আপনার বাসা হোক না কেনো আপনি প্রথমে মিরপুর-১ নম্বরের বাসে করে চলে আসতে পারেন পারেন মিরপুর-১ নম্বর গোলতত্তরে। গোলচত্তরে নেমে সেখান থেকে আলিফ বাসে করে দিয়াবাড়ি পার হয়ে মাত্র ১০ টাকায় চলে যেতে পারেন ইস্টার্ণ হাউজিং বেড়িবাঁধ বাজারে। আর মাজার রোড থেকে যদি রিক্সায় যেতে চান তাহলে মাত্র ৪০-৫০ টাকা খরচ করে চলে যেতে পারেন এই বাজারে। চাইলে সিএনজি বা ব্যক্তিগত গাড়ী নিয়েও খুব সহজেই চলে যেতে পারেন এই বাজারে। এই বাজারের আগে দিয়াবাড়ি ঘাটে নেমে সেখান থেকে চাইলে ট্রলারে করে গোলাপগ্রামেও ঘুরে আসতে পারেন মাত্র ২৫ টাকা খরচ করে।