অনেক প্রত্যাশা ছিল তাঁর দলকে নিয়ে। কিন্তু বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর লড়াইয়ে ফ্রান্সের কাছে হেরে ছিটকে যেতে হয় আর্জেন্টিনাকে। চাকরি যায় তাঁরও। লিয়োনেল মেসিদের বিশ্বকাপের সেই কোচ— হর্হে সাম্পাওলি অবশেষে মুখ খুললেন রাশিয়ার সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে।
স্পেনের এক সংবাদপত্রে মঙ্গলবার মেসিদের প্রাক্তন কোচ বলেছেন, ‘‘আমাদের দলটাকে পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে যে মারাত্মক চাপ নিতে হয়েছে, তা অসহনীয় হয়ে পড়েছিল। ওই অবস্থায় কারও মধ্যে থেকে সেরা খেলাটা বার করে আনা সম্ভব ছিল না। প্রতিটা ম্যাচ আমাদের কাছে চূড়ান্ত পরীক্ষা ছিল।’’
বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার দল বাছাই নিয়েও অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। মাউরো ইকার্ডির মতো ফুটবলারকে বাইরে রাখায় বিতর্কও হয়েছিল। সাম্পাওলি এখন জানাচ্ছেন, নতুন ফুটবলারদের নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করার সুযোগ তাঁর হাতে বেশি ছিল না। সাম্পাওলির মন্তব্য, ‘‘বিশ্বকাপ খেলার ছাড়পত্র পাওয়ার পরেই আমাদের দ্রুত রাশিয়া চলে আসতে হয়। আমাদের হাতে সে রকম সময় ছিল না, যে নতুন ফুটবলারদের দেখে নেব বা দলে সে রকম পরিবর্তন করব। তাই অভিজ্ঞ ফুটবলারদের ওপর নির্ভর করেই দল গড়তে হয়েছে।’’
বিশ্বকাপ মঞ্চে কতটা কঠিন ছিল তাঁর কাজ? এমন প্রশ্নের জবাবে সাম্পাওলির বলেন, ‘‘আমাদের সামনে একটাই লক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতেই হবে। যে চাপটা দলের ওপর ক্রমশ বোঝা হয়ে ওঠে। ফলে সব ক’টা ম্যাচই আমাদের কাছে একটা জটিল ব্যাপার হয়ে উঠছিল।’’
এই পরিস্থিতিতে সাম্পাওলি চেষ্টা করেছিলেন ফুটবলারদের যতটা সম্ভব ফুরফুরে রাখা যায়, তা দেখতে। সাম্পাওলি বলেছেন, ‘‘আমি চেষ্টা করেছিলাম ওদের হালকা রাখতে। বলেছিলাম, বিশ্বকাপটা উপভোগ করো। আমাদের প্রস্তুতিটা খারাপ হয়নি। কিন্তু রাশিয়ায় গিয়ে
পারলাম না।’’
ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার ছিল আপনার দলে। তাঁকে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতাটা কেমন? সাম্পাওলি বলেছেন, ‘‘মেসির মতো দায়বদ্ধ ফুটবলার আমি কখনও দেখিনি। আর সে জন্যই কোনও ম্যাচ হারলে যন্ত্রণাটা ও সব চেয়ে বেশি পেত। ফুটবল ইতিহাসের সেরা ফুটবলার বিশ্বকাপে হারার পরে যতটা যন্ত্রণা পেয়েছে, আর কেউ সে রকম পেয়েছে, বলে মনে হয় না।’’
মেসিকে কতটা চাপ সহ্য করে বিশ্বকাপ খেলতে হয়েছে, তা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে সাম্পাওলির কথায়। আর্জেন্টিনার প্রাক্তন কোচ বলেছেন, ‘‘স্পেনের বড় ক্লাব থেকে এসেছে মেসি। ও জানত, কী ভাবে চাপ সামলাতে হয়। কিন্তু আর্জেন্টিনা দলে আসার পর থেকে ওকে নিয়ে দেশের মানুষের উন্মাদনা শুরু হয়ে যায়। সবার এক দাবি। মেসিকে একা বিশ্বকাপ জেতাতে হবে। মেসি জানত, বিশ্বকাপ জেতাতে না পারলেই ও সমালোচনার মুখে পড়বে। যে কারণে রাশিয়ায় ফুটবলটা ও কখনও উপভোগ করতে পারেনি।’’
এর আগে কোপা আমেরিকা ফাইনালে হারের পরে জাতীয় দল থেকে অবসর ঘোষণা করেছিলেন মেসি। তার পরে ফিরে এসেছিলেন। বিশ্বকাপে হারের পরে যদিও সে রকম কোনও ঘোষণা করেননি, কিন্তু জাতীয় দলের জার্সিতেও আর দেখা যায়নি। মেসি কি আর নামতে পারেন আর্জেন্টিনার হয়ে? সাম্পাওলি বলছেন, ‘‘এটা ওর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। একমাত্র মেসিই বলতে পারে সঠিক সময়টা। তার আগে পর্যন্ত আমাদের ওর সিদ্ধান্তকে সম্মান করা উচিত।’’
নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সাম্পাওলি বলে দিচ্ছেন, ‘‘এমন একটা কাজের অপেক্ষায় আছি, যেখানে কোচিংটা উপভোগ করতে পারব।’’ সাম্পাওলি ইঙ্গিত দিয়েছেন, এমন দেশে কোচিং করাতে চান, যেখানে দল গঠনের ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা পাবেন।