কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, ১১টি ফসল চাষের জন্যে দেশের জেলাসমূহের ৬ লাখ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা প্রদানে ১৫ শ টাকা করে দিবে সরকার।
আজ রবিবার মন্ত্রণালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তির উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম জোরদারকরণের মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ও অগ্রগতি সাধন করেছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বন্যা ও বৈরী প্রভাব মোকাবিলায় কৃষিবান্ধব সরকার কৃষকদের পাশে থেকে সাধ্যমত সহায়তা দিয়ে আসছে। দেশের সকল মানুষের জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ সুষম খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে শস্য বহুমূখীকরণ, উন্নত ও আধুনিক কলাকৌশল অবলম্বন, বিভিন্ন ফসলের উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাত প্রতিস্থাপন জরুরি। তা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অভিযোজনযোগ্য প্রতিকূলতা সহিষ্ণু বিভিন্ন ফসল ও ফসলের জাত আবাদ সম্প্রসারণ করা অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও কৃষি মন্ত্রণালয় ১১টি ফসল চাষের জন্য দেশের জেলাসমূহের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা প্রদানের জন্য কৃষি প্রণোদনা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
বর্তমান রবি/২০১৮-১৯ মৌসুমে গম, ভুট্টা, সরিষা, চিনাবাদাম, ফেলন, খেসারি, বিটিবেগুন, বোরো, শীতকালীন মুগ ও পরবর্তী খরিপ-১ মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন মুগ ও গ্রীষ্মকালীন তিল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬৪টি জেলায় প্রণোদনার মাধ্যমে পরিবার প্রতি সর্বোচ্চ ১ বিঘা জমির জন্য বিনামূল্যে বীজ ও রাসায়নিক সার (ডিএপি ও এমওপি) প্রদানের প্রণোদনা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
এ প্রণোদনা কার্যক্রমের আওতায় দেশের ৬৪ জেলায় ৬ লক্ষ ৯০ হাজার ৯ শত ৭০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে ৭৯ কোটি ৯৯ লক্ষ ৮২ হাজার ৪ শত ৯৫ টাকার বীজ, ডিএপি ও এমওপি সার প্রদান করা হচ্ছে।
কৃষি প্রণোদনা কার্যক্রমের উদ্দেশ্যঃ
নিম্নরূপ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ১১টি ফসলকে বর্তমান কৃষি প্রণোদনা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে : ১. গম, ভূট্টা, সরিষা, চিনা বাদাম, ফেলন, খেসারি, বিটিবেগুন, বোরো, শীতকালীন মুগ, গ্রীষ্মকালীন মুগ ও গ্রীষ্মকালীন তিল আবাদে কৃষকদের উৎসাহিতকরণ;
১. উল্লিখিত ১১টি ফসলের আবাদ এলাকা বৃদ্ধি;
২. উল্লিখিত ফসলসমূহের হেক্টর প্রতি ফলন বৃদ্ধি;
৩. সার্বিকভাবে দানাশস্যএবংডাল, তেলওসবজীজাতীয়ফসলেরউৎপাদনবৃদ্ধি;
৪. প্রাকৃতিক কারণে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া।
কৃষি প্রণোদনা কার্যক্রমের যৌক্তিকতা:
১. শস্যবহুমূখীকরণের মাধ্যমে দেশের মানুষের সার্বিক পুষ্টি চাহিদা মিটানো। ২. বন্যা, জলাবদ্ধতা, ভূমিক্ষয়, অনাবৃষ্টি, খরা, লবণাক্ততা, শৈত্যপ্রবাহ, ঘনকুয়াশাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে বিভিন্ন ফসল চাষে কৃষক সমাজকে অভ্যস্ত করে তোলা। ৩. বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি হ্রাস করে কৃষকগণকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলা। ৪. দেশের বিভিন্ন জেলায় পতিত ও সাময়িক পতিত জমি আবাদের আওতায় এনে শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধি করা। ৫. কৃষককে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত করে তোলা। ৬. নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি ও বিভিন্ন ফসলের উন্নত জাতের সাথে কৃষককে পরিচয় করিয়ে দেয়া। ৭. উচ্চ মূল্য ফসলের আবাদ বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি করা। ৮. সর্বোপরি লাগসই কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে টেকসই কৃষি উন্নয়ন নিশ্চিত করে কৃষকগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও সুসংহত করা।
একনজরে বর্তমান কৃষি প্রণোদনা কার্যক্রম: (ক) প্রণোদনা কার্যক্রম বাবদ মোট মঞ্জুরীকৃত অর্থের পরিমাণ ৭৯ কোটি ৯৯ লক্ষ ৮২ হাজার ৪ শত ৯৫ টাকা। (খ) প্রণোদনা কার্যক্রমভুক্ত জমির পরিমাণ: ৬ লক্ষ ৯০ হাজার ৯ শত ৭০ বিঘা।
১. গম উৎপাদনে ৬৫ হাজার ৭ শত জন কৃষককে। ২. ভূট্টা উৎপানে ২ লক্ষ ২১ হাজার ৫ শত জন কৃষককে। ৩. সরিষা উৎপাদনে ২ লক্ষ ১০ হাজার ২ শত জনকে। ৪. চীনাবাদাম উৎপাদনে ১০ হাজার ১ শত জনকে। ৫. গ্রীষ্মকালীন তিল উৎপাদনে ১৮ হাজার জনকে। ৬. গ্রীষ্মকালীন মুগ উৎপাদনে ৪৮ হাজার ৪ শত জনকে। ৭. শীতকালীন মুগ উৎপাদনে ২৪ হাজার ৩ শত জনকে। ৮. খেসারী উৎপাদনে ১৩ হাজার ৬ শত জনকে। ৯. ফেলন ৫ হাজার ৪ শত জনকে। ১০. বিটিবেগুন ২ হাজার ৭০ জনকে। ১১. বোরো ৭১ হাজার ৭ শত জনকে।
প্রণোদনা কার্যক্রমভুক্ত কৃষি উপকরণ সহায়তার পরিমাণ: গমের ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ২০ কেজি গম বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার বাবদ ১ হাজার ৯ শত ৬৫ টাকা। ভূট্টার ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ২ কেজি ভূট্টা বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার বাবদ ১ হাজার ৩ শত ২ টাকা। সরিষার ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ১ কেজি সরিষা বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার বাবদ ৭শত ৮৬ টাকা। চীনাবাদামের ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ১০ কেজি চীনাবাদাম বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি এমওপি সার বাবদ ১ হাজার ৫ শত ৬৩ টাকা। গ্রীষ্মকালীন তিলের ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ১ কেজি তিল বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার বাবদ ৭ শত ৯২ টাকা। গ্রীষ্মকালীন মুগের ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ৫ কেজি মুগ বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি এমওপি সার বাবদ ৯ শত ৩৫ টাকা। খেসারীর ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ৮ কেজি খেসারী বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি এমওপি সার বাবদ ৯ শত ৭৬ টাকা। ফেলনের ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ৭ কেজি ফেলন বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি এমওপি সার বাবদ ১ হাজার ৪৪ টাকা। বিটি বেগুনের ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ২০ গ্রাম বিটি বেগুন বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার বাবদ ৯ শত ৯৫ টাকা। বোরোর ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ৫ কেজি বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার বাবদ ১ হাজার ২ টাকা। শীতকালীন মুগের ক্ষেত্রে প্রতি কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ৫ কেজি মুগ বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ৫ কেজি এমওপি সার বাবদ ৯ শত ৩৫ টাকা পাবেন।