বগুড়ার নন্দীগ্রামে এবার মরিচের বাম্পার ফলন হলেও কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন উপজেলার মরিচ চাষীরা। গত বছর লাভের মুখ দেখলেও এবছর লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা করছে চাষীরা। উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্য বুড়ইল, ভাটগ্রাম ও থালতা মাঝগ্রাম ইউনিয়নে মরিচের চাষ বেশী হয়। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের ফলন ভাল হয়েছে। তবে বাজার মুল্য কম থাকায় উৎপাদন ব্যয় ওঠা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় মোট ৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্য মাত্রা অতিক্রম করে ৩৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষাবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৮হাজার মেট্রিকটন। উপজেলা কৃষি অফিস মরিচ চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা আসছে।
এ উপজেলায় এবার বিজলী মরিচের চাষ বেশী হয়েছে। মরিচ চাষে প্রতি বিঘা খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার হতে ৫৫ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতিমন কাঁচা মরিচ ৭শ থেকে ১হাজার টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। গত বছর প্রতিমন মরিচ বিক্রয় হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায়। এবার মরিচের দাম গত বছরের চেয়ে অনেকটা নিম্নমুখী। তাই এই লোকসানের অংক গুণতে হচ্ছে চাষীদের।
সরেজমিনে উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের পুরাইল মাঠে গিয়ে কথা হয় মরিচ চাষী সাব্বির হোসেনের সাথে তিনি জানান, এবার দুই বিঘা জমিতে বিজলী মরিচের চাষ করেছি। এতে আমার প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। মরিচ ক্ষেত থেকে প্রথম দফায় ৪ মণ, দ্বিতীয় দফায় ৬ মণ ও তৃতীয় দফায় ১০ মণ মরিচ তুলেছি। তিনি আরও জানান, শুরুতে ১ হাজার হতে ১২শ’ টাকা মণ দরে মরিচ বিক্রয় করেছি। বর্তমানে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা মণ দরে মরিচ বিক্রয় করতে হচ্ছে। গত বছরের লাভের অংক হিসাব করে এবার মরিচের চাষ করে লোকসানে পড়েছি।
একই গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম, পলাশ চন্দ্র, আব্দুল হাকিম ও ফেরদৌস আলম জানান, গত বছর বিজলী মরিচ চাষ করে ৫ হাজার হতে সাড়ে ৫ হাজার টাকা মণ দরে মরিচ বিক্রয় করেছি। এবার মরিচের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারমূল্য একেবারেই ধস নেমেছে। যার কারণে এবার মরিচ চাষে লাভ হবে না। খরচ তোলাই কঠিন হয়ে পড়বে।
বাজারমূল্য কম থাকায় মরিচ চাষের আগ্রহ কমতে পারে উপজেলার মরিচ চাষীদের। উপজেলার মুরাদপুর, আইলপুনিয়া, কদমকুঁড়ি, বাদলাশন ও বর্ষণ সহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠে বিপুল পরিমাণ বিজলী মরিচের চাষ হয়েছে। গত জুলাই মাস থেকে মরিচের চাষ শুরু হয়েছে। ক্ষেত থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মরিচ তোলা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মশিদুল হকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমরা মরিচ, শাকসবজি ও রবিশস্য’র চাষের জন্য কৃষকদের যথারীতিভাবে উৎসাহ প্রদান করে আসছি। মরিচের চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে বাজারমূল্য কম হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে ফরিয়াদের কাছে মরিচ বিক্রয় না করে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে বিক্রয় করার পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান তিনি।