রাস্তাঘাটসহ যেকোনো জায়গায় হঠাৎ বিপদে পড়লে বা নির্যাতনের শিকার হলে গোপনে মুঠোফোনের পাওয়ার বাটনে পরপর চারবার চাপ দিতে হবে। এতেকরে মুঠোফোন ভাইব্রেট হবে। তারপর পাওয়ার বাটনে আর একবার চাপ মোটকথা সবমিকিয়ে পাঁচবার দিতে পারলেই তিনি বিপদে পড়েছেন সে সংকেত চলে যাবে ‘জয় মোবাইল অ্যাপে’।
অ্যাপের মাধ্যমে ঘটনার স্থান, কথা, এমনকি আশপাশের ছবিও চলে যাবে অ্যাপে। অবশ্যই আপনার ফোনে জয় এপ ইনস্টল থাকতে হবে। আর যদি নির্যাতনের শিকার বা শিকার হওয়ার আশঙ্কা আছে, এমন ব্যক্তি মুঠোফোন বের করার মতো অবস্থায় থাকেন, তাহলে অ্যাপের জরুরি বাটন চেপে জিপিএস লোকেশন, ছবি ও অডিও রেকর্ডিং পাঠাতে পারবেন। আর কেউ লিখিত অভিযোগ পাঠাতে চাইলে অ্যাপটির ‘অভিযোগ করুন’ অপশনে গিয়ে অভিযোগের ধরন বাছাই করে বিবরণসহ অভিযোগ করতে পারবেন। এ ছাড়া ‘সংযুক্ত করুন’ অপশনে ছবি ও অডিও সংযুক্ত করে পাঠানো যাবে।
প্রসংগত, গত ২৯ জুলাই মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জয় মোবাইল অ্যাপের উদ্বোধন করেন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল কর্মসূচির অধীনে রাজধানীতে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরে জয় মোবাইল অ্যাপস সেন্টারে কর্মরতরা ২৪ ঘণ্টা সেবা দিচ্ছেন এবং অ্যাপটি নজরদারি করছেন।
জয় মোবাইল অ্যাপ হলো তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের অধীন এটুআই প্রোগ্রামের অর্থায়নে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের উদ্ভাবিত একটি অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার।
যেকোনো অ্যান্ড্রয়েড ফোন থেকে গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে। ইনস্টল করার সময় ব্যবহারকারীর নাম ও চার সংখ্যার একটি গোপন পিন নম্বর দিতে হবে, যে নম্বরটি শুধু ব্যবহারকারী জানবেন।
অ্যাপের মাধ্যমে নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতনের জরুরি মুহূর্তে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ সুপার, মেট্রো এলাকার উপপুলিশ কমিশনার, নির্দিষ্ট তিনটি এফএনএফ নম্বর (ভিকটিম তিনটি মুঠোফোন নম্বর সিলেক্ট করে রাখবেন) এবং নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টারে (১০৯) খুদে বার্তা চলে যাবে। তবে সব তথ্যের বেলায়ই গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে।
নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল কর্মসূচির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অ্যাপটি উদ্বোধনের পর থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সারা দেশ থেকে ৯৪৭টি অভিযোগ এসেছে। আর এ সময় অ্যাপটি মুঠোফোনে ইনস্টল করেছেন ৩ হাজার ২৪১ জন। এ পর্যন্ত কয়েকটি বাল্যবিবাহ বন্ধ করাও সম্ভব হয়েছে অ্যাপ্টির সাহায্যে।
কর্মরতরা জানান, নির্যাতনের শিকার কোনো ব্যক্তির অ্যান্ড্রয়েড ফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলেও চিন্তার কিছু নেই। তিনি যেকোনো মুঠোফোন থেকে ১০৯ নম্বরে খুদে বার্তা পাঠালেও তা অ্যাপে চলে যাবে। এ ছাড়া সরাসরি ১০৯ নম্বরে ফোন করেও যে কেউ অভিযোগ জানাতে পারবেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টারের প্রোগ্রাম অফিসার রাইসুল ইসলাম বিডিমর্নিংকে বলেন, এখন পর্যন্ত সেভাবে প্রচার না হওয়াতে বেশিরভাগ ঢাকার ভিক্টিমরাই এটা ব্যবহার করছেন। সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিলে গ্রামেও এটার ব্যবহার হবে এবং সুফল পাওয়া যাবে।
তাছাড়া নির্যাতনের শিকার ভিকটিমের তাৎক্ষণিক প্রতিকার দেওয়ার পাশাপাশি অ্যাপটি অপরাধী সনাক্ত করার কাজ করছে। পরবর্তী সময়ে ভিকটিম নির্যাতকের বিরুদ্ধে মামলা করলে এ তথ্য সহায়তা করবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা মনে করি এই এপের সার্বিক ব্যবহারের পরে অপরাধী ও নির্যাতনকারীদের জন্য এটি হবে আতংকের নাম আর ভিক্টিমদের জন্য এটি স্বস্তির নি শ্বাস৷ তাছাড়া এই এপ একবার চালু হলে অপরাধীও এটা বন্ধ করতে পারবে না।